somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশব - ০১

০৭ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়ের ঘুণপোকাগুলোর বড্ড তাড়াহুড়ো। এত দ্রুত কাটে যে এই যৌবনে মনে হয় যেন এইতো গতকাল আলিমুদ্দিন স্কুলের সামনের মামার দোকান থেকে জাম্বুরা চুরি করে আটআনা দামের বলাকা ব্লেড দিয়ে বন্ধুরা মিলে কেটে খেলাম। পরক্ষনেই আমার শিশু বাচ্চার ডাকে নিজকে আবিস্কার করি আমার শৈশব অভিমানে আমা হতে চলে গেছে বহু দূরে।

তোমাদের কাছে নব্বইয়ের দশকের আমার নাগরিক শৈশবের কিছু কথা বলা থেকেই শুরু করলাম সামহোয়্যারইন ব্লগ মুক্তমঞ্চে লেখা।


[ছবি সংগৃহিত]

আমার বাসা মিরপুর, পীরেরবাগে। আমাদের সময়ের ছেলেবেলায় বাচ্চাগুলো আজকালকার বাচ্চাদের মতো অলস ছিলনা। অলস দুপুরের ভাতঘুম যেন ছিল চোঁখের বিষ। দুপুরে যেন পালিয়ে বাইরে যেতে না পারি তার জন্য আম্মা খাটে নিয়ে শুয়ে হাত দিয়ে ঘিরে রাখতো। যেইনা আম্মার গভীর ঘুমের নাক ডাকার শব্দ শুনেছি, সেইনা আম্মার হাতের বাধন আলগা করতে করতে মেরেছি ভোঁ দৌড়। বাইরে যেয়েই দেখতাম শামীম আমার বাসার আশপাশ দিয়ে ঘুরঘুর করছে। দুজনে ছুটতাম রাজুর বাসার দিকে। কখনো কখনো দেখতাম ওই ভরদুপুরে রাজুকে তার মা বেত দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে পড়ানোর চেস্টা করছে ( উল্লেখ্য যে, রাজু মানুষ হয়নি)। যেদিন এমনটা দেখতাম, সেদিন আর রক্ষে হতোনা। পাছায় রাজুর মায়ের ঝাটার বারি খেয়ে (তার ধারনা ছিল আমরা রাজুকে নষ্ট করছি) পালাতে হতো রাজুর বাসা থেকে। আর না হয় রাজুকে জেল থেকে মুক্ত করে তিনজনে ছুটতাম পাশের এলাকা পাইকপাড়ায়। কাইল্লা আর নাইক্ক্যারাও (বস্তির ছেলেরাও আমাদের বন্ধু ছিল, তারাও আজ নিজ নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত) এসে যোগ দিত শেষে। এই ছিল আমাদের ক্ষুদে কমান্ডো গ্রুপ।

সেই সময়ে এই কেতাদুরস্ত ঢাকার মহিলারাই আঁচারের বোয়েম রোদে দিতো তাদের বাসার দেয়ালের ওপরে। কড়া রোদে বাহারী ডিজাইন আর লাল, নীল, সবুজ রংবেরংয়ের আচারভরা বোয়েম ছিল দেখার মতো এক জিনিস। আমাদের কাজ ছিল ওইসব টক মিস্টি স্বাদের জাদুমাখা বস্তুগুলো খুজে বের করে চুরি করে পালিয়ে যাওয়া আর নিরাপদ জায়গা খুজে বের করে মারামারি করে সেগুলো সাবাড় করা। প্রায় সময়ই নিরাপদ জায়গাগুলো হতো দেয়াল ঘেড়া ফাঁকা প্লট, নির্মানাধীন ভবন, অচেনা অজানা কোন বাড়ীর ফাঁকা ছাদ-চিপাচাপা, সুয়রেজ লাইনের ফাকা পাইপ সহ বিচিত্র সব মজার মজার জায়গা। আচারগুলো এত রকমের আর এত বিচিত্র স্বাদের তৈরি হতো যে এক ফোটা আচারের জন্য মারামারী লেগে যেত। এখনকার দিনের বারোভাতারি ফেসবুক, ইউটউব, ইনস্টাগ্রাম মার্কা তথাকথিত জ্ঞান (!!) না থাকাটা হয়তো তখনকার দিনের সুস্বাদু খাবারের আসল রহস্য।



এভাবে কিছুদিন চলার পর আমরা খেয়াল করলাম যে, আমাদের অত্যাচারে কিছু মহিলা আচার রোদে দেয়াটাই বন্ধ করে দেয়া শুরু করেছে। শিশুমনে বিবেক নাড়া দিয়ে উঠলো। আমাদের সবার মন একইসাথে খারাপ হয়ে গেল। আচার হাড়ানোর ভয়ে নয়, মহিলাদের অসুবিধা তৈরি করে ফেলেছি এইভেবে। জরুরী মিটিং তলব করা হলো। এভাবে চলতে থাকলে তো আমাদের আচার লুটপাট বন্ধ হয়ে যাবে। এখন উপায় ??!! থিঙ্কট্যাংক হিসেবে আমি এগিয়ে আসলাম, মহিলাদের বিদ্রোহ এভাবে চলতে দেয়া যায়না। নতুন বুদ্ধি বের করলাম, আমরা পুরো আচারের বোয়েম চুরি করবোনা, এক বাড়ী থেকে প্রতিদিন চুরি করবোনা, যত লোভনীয়ই হোক একের বেশী আইটেম চুরি করবোনা।

নতুন পলিসিটা দারুন কাজে দিল। মা-বোনেরা আবার তাদের জাদুমাখা হাতের টক ঝাল মিস্টি আচার রোদে দেয়া শুরু করলো। বাসা থেকে বের হবার সময় চামচ নিয়ে বের হতাম (আচার চুরির সময় যেন হাতে লেগে মাখামাখি না হয়)। আর আমরাও এবাড়ী ওবাড়ী থেকে চুরি করা আচার এনে আলিফ লায়লার চল্লিশ চোরের মতো আচারের গোডাউন বানিয়ে খেতে লাগলাম। আমরা প্রতিদিন এক চামচ এক চামচ করে আচার সরাতাম তাই কেউ কিচ্ছুটি টের পেতনা।

এভাবেই চলতে লাগলো আমাদের শৈশবের আচার অভিযান। এভাবে নাম না জানা কত মা খালাদের হাতের আচার যে খেয়ে ছোটবেলার রঙ্গিন দিনগুলো কাটিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। ভাল থাকুক সেই মা-বোন-খালারা, ভাল থাকুক শৈশবের আমরা। আমাদের মতো রঙ্গিন হোক হোক সব শিশুর শৈশব।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:৪২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারো বলছি দেশে জঙ্গী নেই উহা ছিল আম্লিগ ও ভারতের তৈরী

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮


আওয়ামী নস্টালজিয়ায় যারা অন্তরের ভিতর পুলকিত বোধ করে তাদের কাছে বাংলাদেশ মানেই হলো জঙ্গী, অকার্যকর অথবা পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র। ৩৬ জুলাই পরবর্তী মহা-গণবিস্ফােরনকে কোনাভাবেই মানতে পারেনি তারা ভয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমান আসবে, বাংলাদেশ হাসবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৮


আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দুপুরের শিফটে ক্লাস ছিল। একদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি ছোটো মামা সংসদ টিভিতে অধিবেশন দেখছেন। কৌতূহল হলো, মামা এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছেন। আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×