নতুন কিছু লিখতে গিয়ে যেন বারবার শৈশবেই আশ্রয় নিতে হয়। বর্তমানের এই যাপিত জীবন যেন গ্রীষ্মের খরতাপের মতোই হয়ে গেছে। শৈশবের স্মৃতিগুলো যেন ঝড়ের মতো সমস্ত গ্লানি উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে মনটা ঠান্ডা করে দেয়।
আমার স্কুল জীবন শুরু হয় এলাকার ডনডিউ কিন্ডারগার্ডেন থেকে। বয়স তখন পাঁচ কি ছয়। আম্মা স্কুলে দিয়ে আসতো, আর নিয়ে আসতো। টিফিনে আম্মা মাঝে মাঝে ডিম সিদ্ধ করে দিত, আব্বা অনেক কৃচ্ছতা অবলম্বন করে সংসার চালাতো তাই মাঝে মাঝে সেটাও বরাদ্দ থাকতো না। আমরা ছিলাম তিন বন্ধু - আমি, মনি আর শাহিন। এদের অবস্থাও কিছুটা আমার মতোই ছিল। বাসা থেকে টিফিন দিত কি দিত না এই অবস্থা।

আমাদের ক্লাসে সানি নামের লক্ষী একটা মেয়ে ছিল (পরবর্তিতে সানির চাচার সাথে আমার বোনের বিয়ে হয়)। সানির আম্মু প্রতিদিন তার টিফিনে অনেক খাবার দিয়ে দিত। তাতে থাকতো নসিলা বা জ্যাম মাখানো পাউরুটি, চিকেন স্যান্ডউইচ, ডিম সিদ্ধ, কলা, আপেল, কমলা। নব্বইয়ের দশকে ঐসব খাবার দাবার ছিল সমাজের এলিট ক্লাসের খাবার। টিফিন টাইমে সানি কিছুই খেত না, পুরো টিফিন বক্স ভর্তি খাবার আমাদের তিন বন্ধুকে দিয়ে দিত। সানির টিফির বক্স আমাদের কাছে আলিফ লায়লার গুপ্তধনের বাক্সের মতোই ছিল। চিকেন স্যান্ডউইচ আর জ্যাম মাখানো পাউরুটি নিয়েই মারামারি লাগতো। পরে সানির মধ্যস্ততায় বাই রোটেশনে সেগুলো খাওয়া হতো। যার ভাগে যেদিন চিকেন স্যান্ডউইচ পড়তো, সেদিন সে ছিল রাজা ! বাকিরা প্রজা।
প্লেতে পড়া অবস্থাতেই সবেমাত্র গণনা করা শিখেছি। আমরা আবিস্কার করলাম সাত দিনে হয় এক সপ্তাহ, তাহলে প্রত্যেকে প্রতিদিন এক টাকা করে জমালে প্রতি সপ্তাহে সবাই একটা করে কোক খেতে পারবো ! এটা ছিল বিশাল একটা আবিস্কার, যেই কথা সেই কাজ। বাবার পকেট থেকে চুরি করে, মাটির ব্যাংকের ভেতর থেকে কয়দা করে, এভাবে সেভাবে সবাই টাকা জমিয়ে সপ্তাহে একটা করে কোক খেতাম।

স্কুলটার কাছেই ছিল শিকদার বেকারী। তখনকার দিনের সাধারন পাউরুটি আর ক্রিম রোল এখনকার দিনের তথাকথিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির পেস্ট্রির থেকেও উন্নতমানের ছিল। তখনকার দিনের মায়েরা ছেলেদেরকে এদিক সেদিক যেতে দিত, লুতুপুতু করে বড় করতো না। স্কুলের পরে সেই শিকদার বেকারীতে যেতাম, কারিগরদের আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম, কারিগররা বিভিন্ন মজার মজার বেকারী আইটেম খেতে দিত। বসে বসে তাদের কাজ দেখতাম, বড় বড় জালী কুমড়াকে একটা বিশেষ যন্ত্র দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে ফুটো করতো, পরে সেটা চিনির শিরায় ডুবিয়ে মোরব্বা বানাতো যা কেক, পাউরুটি ও অন্যান্য বেকারী আইটেমে ব্যবহার হতো। আমাদের কাজ ছিল বেকারীতে ডুকেই রসে ডুবানো টাটকা মোরব্বা খাওয়া। আহা ! কি যে তার স্বাদ, মনে হতো পেয়ে গেছি আকাশের চাঁদ।
ভাল থাকুক আমাদের স্মৃতির বাচ্চারা-বন্ধুরা, ভাল থাকুক, দুরন্ত হোক এখনকার দিনের শিশুরা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




