একটি সময় থাকে যখন
বন্ধুরাই তো জীবন হয়ে ওঠে।
এই সব বন্ধুরাই তো আমাদের
জগৎ ও জীবন ছিল।
সে বন্ধুত্ব ছিল নির্মল,পবিত্র ও স্বার্থহীন।
সে সম্পর্কে 'আমার-তোমার'
বলে কোন ভেদাভেদ ছিল না,
ছিল না একজনকে ডিঙ্গিয়ে
অন্যের ওপরে ওঠার প্রয়াস।
বিশ্বাস আর আস্হার জায়গাটি এত সুদৃঢ়
ছিল যে সন্দেহ ঢোকে নি সেখানে।
গোপনতম কথার আধার ছিল তো বন্ধুরাই -
বহু খুশীর, আনন্দের আর সাফল্যের তারা যেমন ভাগীদার, তেমনি বহু দু:খের, কষ্টের আর
আশাভঙ্গেরও তো তারা স্বাক্ষী।
জীবনের বহু শিক্ষা,বহু রুচি,বহু মনন,
বহু অভিজ্ঞতা তো বন্ধুদের কাছ থেকেই পাওয়া।
আজ এ সব কথা নতুন করে মনে হল,
বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধ্যেকার
পরিবর্তন তো সুস্পষ্ট।
বন্ধুত্বের যে ভূমিতে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম,
সেখানে তো আমরা আর দাঁড়িয়ে নেই।
মুক্ত, নিষ্পাপ আর সদানন্দ চিত্তের মানুষ তো আমরা আর নই। আমরা এখন আত্ম-স্বার্থ সচেতন,
সন্দেহবাতিক,সাবধানী ঝানু
পরিপক্ক মানুষ এক এক জন।
আমরা আর ওড়ার স্বপ্ন দেখি না,
বাঁধভাঙ্গা হাসিতে ফেটে পড়ি না,
মনের দরজা বন্ধুর কাছে খুলে দেই না,
নিজের কথাটা শোনাতে যতটা উদ্যমী,
বন্ধুর কথা শুনতে ততটা আগ্রহী নই।
পথে-ঘাটে কালে ভদ্রে পুরোনো বন্ধুদের
সঙ্গে দেখা হলে বলি, কি খবর?
ভালো তো? মনে থাকে না,
এ মানুষটির সঙ্গেই কোন একদিন ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেছি,কথা ফুরোতে চাই নি।
কখনও কখনও কোন বন্ধুর সাফল্যের কথা শুনলে ঈর্ষাণ্বিত হই - হায়, ওর কেন হলো?আমার কেন হলো না।
অথচ অতীতে কোন একদিন ঐ বন্ধুটির
সাফল্যকে নিজের বলে মনে হয়েছে,
আনন্দে দু'হাত তুলে নৃত্য করেছি।
কখনো কোন বন্ধুর চলে যাওয়ার সংবাদ শুনলে মুখে বলি,আহা,অমুকটা চলে গেল!
কিন্তু হৃদয়ে?
হৃদয়ে সে ক্ষতি কতখানি
দাগ কাটে?
এক সময়ে এই বন্ধুটির একদিনের অদর্শনেই
কি জগত-সংসার অন্ধকার মনে হতো না??
কোথায় গেল সে সব দিন?
কোথায় গেল সে মনটা??
সুতরাং আজ যে খুব দরকার কিছু পুরোনো
বন্ধুদের হৃদয়ে কড়া নেড়ে আসার -
সেই পুরোনো অর্গল কি খুলবে না খুলবে না??