somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাত্রি নিশিথে

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যা নদীর ঠিক পাড়েই আমাদের বসত ভিটা।
ছোটবেলা জ্ঞান হবার পর থেকেই নদীর সাথে যেন আত্নার সম্পর্ক। বাবা ইলিশের ব্যবসা করতেন। আমাদের বড় নৌকা নিয়ে তিনি ভোর হতেই চলে যেতেন আড়তে। তার আরও দুটি নৌকা ছিল। সেগুলোতে জেলেরা কামলা হিসেবে মাছ ধরার কাজ করতো। দিন হিসেবে মজুরি। আমাদের বাড়ির মেয়ে-ঝিয়েরা রান্নাবান্না ও দৈনন্দিন ঘর গৃহষ্থালীর সব কাজেই ছিল সন্ধ্যা নদীর ওপর নির্ভরশীল। ছোট বাচ্চাদের নোংরা করা কাঁথা, হাঁড়ি-পাতিল ধোয়া, রান্নার পানি আনা আর গোসল-সেতো আছেই। আমার ৬ বছর বয়স থেকেই ভর দুপুরে পাড়ার সব ছেলেদের সঙ্গে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার মতো শান্তি এ ধরায় আর খুঁজে পেতাম না। দিনভর সন্ধ্যা নদীর পাড় দিয়ে হাঁটাহাটি, নদীর বুক চিরে চলা ছোট-বড় নানা ঢংয়ের নৌকায় মানুষের আসা-যাওয়া দেখতে দেখতেই যেন এক সময় বড় হয়ে উঠি। নদীর ওই পারে কুসুমপুর গ্রামে আমাদের স্কুল। ক্ষুদে পানসী নৌকায় ৫-৭জনের বাখকের দল আমরা বুকে বইখাতা চেপে ধরে স্কুলে যাই। আবার ছুটি শেষে পানসীতে চড়েই ঘরে ফেরা। মাঝে মাঝে ফেরার পথেই নদীতে ঝাপিয়ে পড়তাম। চলতো সাঁতার কাটার পাল্লা।
বর্ষাকালে সন্ধ্যা নদীর রাক্ষসীনি রুপ। জোয়ারের পানিতে চলিয়ে যায় আমাদের বাড়ি। ঘরের বিছানার উপরে আমাদের তখন অবস্থান। আমার মাঝে মাঝে মনে হতো, নদী যেন বেড়াতে এসেছে আমাদের ঘরে।
কালের আসা-যাওয়া আর সন্ধ্যা নদীর বুকে চলা অবিরাম জোয়ার-ভাটার টানে সময়ের ঘড়ি ঠিকই টিক টিক করে পার হয়ে যায় ২১টি বছর। আজ আমি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে বরিশাল বিএম কলেজে, এরপর কলেজের গন্ডি পার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ঈদের ছুটিতে এসেছি বাড়িতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রাণদায়িনী ভালোবাসার প্রিয় মানুষ অতন্দ্রিলার বাড়ি নাটোরে। সে গেছে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে। নদীর পাড়ে বসে ভাবছি অতন্দ্রিলার কথা। আজ তীব্র জোছনা। জোছনার তীব্রতায় ভেসে যাচ্ছে সন্ধ্যা নদীর দু'কুল। রাত এখন প্রায় একটা বাজছে। আমার মনে পড়ছে কবি অমিয় চক্রবর্তীর ‌রাত্রি' কবিতাটি।

অতন্দ্রিলা,
ঘুমোওনি জানি
তাই চুপি চুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে
বলি, শোনো,
সৌরতারা ছাওয়া এই বিছানায়
-সুক্ষ জাল রাত্রির মশারি-
কতো দীর্ঘ দু'জনার গেলো সারাদিন,
আলাদা নিশ্বাসে-
এতক্ষণে ছায়া-ছায়া পাশে ছুই
কী আশ্চর্য দু-জনে দু-জনা-
অতন্দ্রিলা,
হঠাৎ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জোৎস্না
দেখি তুমি নেই।


জানি না ঠিক এ মুর্হর্তে কী করছে আমার অতন্দ্রিলা। সে কী ঘুমিয়ে পড়েছে? নাহ, কুয়েত-মৈত্রী হলের ৫ তলার ৫০৬ নম্বর রুমে থাকে অতন্দ্রিলা। রাত ২টা, ৩টা এমনকি মাঝে মাঝে ভোর ৪টা পর্যন্তও জেড়ে তাকে সে। আমাকে ফোন করে তাড়িত মনের চাপে। কথা হয় টুকটাক, এরপর খুনসুটি, মাঝে মাঝে ঝগড়াও। ঠিকই সকালে আবার সব ভুলে যায় সে। আমি এ ধরণের ঝগড়ার নাম দিয়েছি ‌নিশিথ বিতর্ক পর্ব। এমনিদনের ঘটনা। দুপুর ১টা বাজে। আকাশ কালো করে নেমেছে মুষলধারে বৃষ্টি। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের চমকে চমসকে উঠছে পৃথিবী। নীলক্ষেতের তেহারী দোকানে দুপুরে আজ আমার আর অতন্দ্রিলার একসঙ্গে খাওয়ার কথা। অথচ, বৃষ্টির রুমঝুম শব্দে মাতোয়ারা আমি ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে গেঠি অঘোরে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×