somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চক্র পরিক্রমাঃ (একটি অপচেষ্টামূলক রম্যগল্প)

০৮ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
লস্কর মোল্লা'র আদি পুরুষের নিবাস ইরান; কয়েক পুরুষ ধরে এদেশে আছেন। ইরানী স্বভাবও কিছু কিছু বর্তমান তার মধ্যে।
ঝামেলা পছন্দ করেন না।
সকাল বেলায় খালি পেটে চা খান।
গোলাপ ভালোবাসেন।
'লস্কর মোল্লা' নামকরনের সার্থকতা যাচাই করার আগেই নামকারক পৃথিবী থেকে গত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, যাবার আগে সবার ডাটাবেস থেকে নিজের নামটা যত্ন সহকারে মুছে দিয়ে গেছেন। মানে, 'লস্কর মোল্লা' নামটা কে রেখেছিল, এই তথ্য সবার অজানা। প্রথমত, বংশে কেউ কোনদিন লাঠি তো দূরের কথা, কাঠিও খেলেনি। সুতরাং 'লস্কর' নামটা কিভাবে এলো; এটা ভাববার বিষয়। দ্বিতীয়ত, ধর্ম জ্ঞান মোল্লা সাহেবের আমপারা পর্যন্তই ঠেকে আছে; দোয়া কুনুত পড়তে গেলে ভুল হয় বলে 'ক্বুলহু' সূরা দিয়েই কাজ সারেন-তাও বছরে দু'একবার। এখানে মোল্লা নামের সার্থকতা গোল্লা, অর্থাৎ শূণ্য। তিনি অবশ্য মোল্লা নামটা পাল্টানোর জন্য অনেক চিল্লা পাল্লা করেছেন, তাতে কাজের চেয়ে অকাজই বেশি হয়েছে। স্কুলে সহপাঠীরা লস্করের যায়গায় 'ল' কেটে 'ত' লাগিয়ে দিত। অর্থাৎ তস্কর মোল্লা। ধর্মের উপর এমন হীন আক্রমন দেখে সাদাসিধে লস্কর সাহেব মাঝে মাঝে হম্বিতম্বি করতেন, কিন্তু তাতে কাজ হতোনা। মোল্লার 'ম' এর জায়গায় 'গ' বসে যেত। মানে তস্কর গোল্লা। আর অফিস আদালতে তার লস্কর নামটা নিয়ে মস্করা যা হয়েছে, তার বিবরণ আর কি দিব?

লস্কর মোল্লা এখন প্রৌঢ় মানুষ। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি সাদাসিধে ভাবে কাটিয়ে এসেছেন। সব চড়াইউৎরাই শেষে এই থিতু হবার সময়টাতে হঠাৎ তার জীবনে একি নতুন উপদ্রব!
হ্যাঁ, উপদ্রবই তো!
প্রথম প্রথম তিনি ম্রিয়স্বরে প্রতিবাদ করতেন; 'যাকে কলিং বেল চাপলেই পাওয়া যায়, তার জন্য আবার এটা কেন?'
ছোটছেলে বললো, 'বাবা, এটা এখনকার ফ্যাশান'।
তিনি কাতর স্বরে বললেন, 'ফ্যাশান নিয়ে পেরেশান হবার মত কোন কারণ তো দেখিনা! তোরা আমাকে মাফ কর। তারচে' বরং তোর মা'কে দিয়ে দে।
-বাহ! তোমারটা মা নেবে কেন? মা'র একটা প্রাইভেসি আছেনা? যার যার, তার তার। মা'কেও দিয়েছি একটা।
অকাট্য যুক্তি। অবশেষে সেটা নিতেই হলো।
একটা মুঠালাপনী। গ্রাহামবেল সাহেবের আবিষ্কারের পকেট ভার্শন।

২.
হ্যালো 'জান'?
-'জান' কে? আপনি কাকে চান?
-জান আমি তোমাকেই চাই, এরই মধ্যে ভুলে গেলে?
একি জ্বালা? এক আধবুড়ো লোককে, যার প্রায় দুই পা কবরে, এখন তখন জান যায় যায় অবস্থা, তাকে কিনা বলে 'জান'?
-এই কে বলছেন আপনি? আমি আপনার 'জান' না। আপনি এখন যান।
-কিন্তু আমাদের চাইনিজ?
-চাইনিজ, জাপানিজ, তাইওয়ানিজ, পিগমি কিছুই এখানে পাবেন না। এটা বাসা। জিওগ্রাফিক চ্যানেল না।
লাইন কেটে দিলেন লস্কর মোল্লা।
জানে পানি আসলো।
আবার রিং...
মোল্লা সাহেব ভাবছেন ফোন ধরবেননা। রিং বেজেই চলেছে। মোল্লা সাহেব চেষ্টা করছেন মনযোগ অন্যদিকে নেবার। টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল চলছে; ধুমসী টাইপের এক মহিলা মুখে ১৯৫৩ সালে আবিস্কৃত রঙ মাখছেন। মনে হয় কোন বিয়েবাড়িতে যাবেন। আহ! নিজের বিয়ের কথা মনে পড়ে গেলো লস্কর সাহেবের। কি দিন ছিল! টিভিতে চোখ ফেরালেন। ওকি! মহিলাতো সেজেগুঁজে বাথরুমে ঢুকলো! এর জন্যই এতো সাজ? বিয়েবাড়িতে গেলে না জানি কি হত! রাগে তিনি টিভি বন্ধ করে দিলেন।
কলিং বেল আর ফোনের রিং-এ দুটোর ভেতরেই কেমন যেন তাড়া তাড়া ভাব থাকে। না থামলে স্বস্তি লাগেনা।
তিনি ফোন ধরলেন।
-হ্যালো কে?
-আমি।
-আমি'টা কে?
-আমি হচ্ছি আমি!
-আমি'র পরে তো একটা নাম আছে নাকি? আমি ওইটাই শুনতে চাচ্ছি।
-কেন? আমার গলা শুনে চিনতে পারছোনা?
-তুমি ক্লোজ আপ কত?
-ক্লোজ আপ কত মানে, কি বলছেন এসব?
-মানে ক্লোজ আপ ১, ২, ৩... ইত্যাদি, কত? তোমার লক্ষ্য অটুট তো?
-ক্লোজ আপের সাথে আমার সম্পর্ক কি তাতো বুঝলাম না?
-ওই যে বললে গলা শুনে চিনতে পারছি কিনা! ভাবলাম হয়তো তুমি ক্লোজ আপ এক থেকে দশের মধ্যেই আছো; তোমার গলা শুনেই আমার চেনার কথা।
লাইন কেটে দিল মেয়েটা।
লস্কর সাহেবের মাথার ব্যথাটা আরো ক্লোজ এবং আরো আপ হচ্ছে।
তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন; এই ফোন তিনি আর রাখবেন না।
ফেলে দিবেন।
নদীতে।
আজই।
সিদ্ধান্ত নেবার পর তাঁকে বেশ সরস দেখাচ্ছে। গুন গুন করে গানের কলি ভাঁজছেন 'সর্বনাশা পদ্মা নদী...'।

৩.
ফোনটা পানিতে পড়ার সময় রিং বেজে উঠেছিল।
লস্কর মোল্লা গদাই লস্করি চালে হেঁটে আসছেন।

বাসায় চলে এলেন তিনি।
ছোট ছেলে বসে আছে ঘরে।
-কোথায় ছিলে বাবা? তোমার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি!
-এইতো একটু হাওয়া খেতে গিয়েছিলাম; অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন তিনি। মনে মনে বললেন, 'হাওয়া খেতে নয়, ফোনটাকে হাওয়া করতে গিয়েছিলাম'।
-ফোন করেছিলাম তোমাকে। তোমার ফোন বন্ধ পেয়ে মা'কে ফোন করলাম; মা বললো তুমি ফোন নিয়ে বাইরে গিয়েছ।
-ফোন আমাকে হারিয়ে ফেলেছে; বলেই তিনি বুঝলেন ছেলের সাথে এই বয়সে এমন তামাশা করা উচিৎ হচ্ছেনা। তাই একটু কাষ্ঠ হাসি হেসে বললেন, তোর টাকাটা জলে গেলরে!
-দেখেছ মা! যা ভেবেছিলাম তাই। তোমাকে বললাম না নির্ঘাৎ বাবা ফোন হারিয়ে ফেলেছে! তাই আসার সময় আরেকটা কিনে নিয়ে এসেছি। এই নাও। লাইন চালু করা আছে।
শূণ্য দৃষ্টিতে তাকালেন তিনি ফোনটার দিকে।
ছোটবেলায় বায়োলজিতে ফার্ণ গাছের জীবন চক্র মানে ফার্ণ চক্র লিখে লেটার পেয়েছিলেন। এখন তার জীবনে এসেছে ফোনচক্র। এখানে লেটার পাবার সুযোগ নেই, কিন্তু এস এম এস আছে পর্যাপ্ত। আর কলের যন্ত্রণায় মাথা তো বিকল হবার যোগাড়!
মনে মনে বললেন, হে ধরনী, দ্বিধা হও!
তাকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্যই যেন ওটা বেজে উঠলো হঠাৎ;
তিনি ফোন ধরলেন; হ্যালো,
-ডিয়ার, একটা গান শুনাও না প্লিজ!
আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলেন লস্কর মোল্লা;
-আমি কি গ্রামোফোন?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:২৮
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×