somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গৌতম বুদ্ধ এবং জীবনি । । । ।

২২ শে নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সংস্কৃত 'বুদ্ধ' শব্দের অর্থ যিনি পরম শাশ্বত বোধ বা জ্ঞান লাভ করেছেন। বৌদ্ধ ধর্মানুসারে তিনিই 'বুদ্ধ' যিনি জগতের সার সত্য সম্বন্ধে অবগত হয়েছেন এবং নিজে নির্বাণলাভের পূর্বে ধরিত্রীর সকল জীবকে নির্বাণলাভের উপায় উপদেশ করে গেছেন। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি ২৮ জন বুদ্ধ গত হয়েছেন । আমরা এখন ২৮তম বুদ্ধ - গৌতম বুদ্ধ এর ধর্মকাল অবস্থান করছি , গৌতম বুদ্ধের ধর্মের ব্যপ্তিকাল মোট ৫০০০ বছর ,বর্তমানে আমরা এই ধর্মকালের ২৫৫৪ বছরে আছি। আরো ২৪৪৬ বছর পর আরো একজন বুদ্ধ আবির্ভাব হবেন । তিনি হচ্ছেন মৈত্রীয় বুদ্ধ। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি যেসব বুদ্ধ গত হয়েছেন , তারা হলেন

১। তৃষঙ্কর বুদ্ধ
২। মেধঙ্কর বুদ্ধ
৩। শরণংকর বুদ্ধ
৪। দীপংকর বুদ্ধ
৫। কোন্ডণ্য বুদ্ধ
৬। সুমঙ্গল বুদ্ধ
৭। সুমন বুদ্ধ
৮। রেবত বুদ্ধ
৯। সোভিত বুদ্ধ
১০। অনোমদর্শী বুদ্ধ
১১। পদুম বুদ্ধ
১২। নারদ বুদ্ধ
১৩। পদুমুত্তর বুদ্ধ
১৪। সুমেধ বুদ্ধ
১৫। সুজাত বুদ্ধ
১৬। প্রিয়দর্শী বুদ্ধ
১৭। অর্থদর্শী বুদ্ধ
১৮। ধর্মদর্শী বুদ্ধ
১৯। সিদ্ধার্থ বুদ্ধ
২০। তিষ্য বুদ্ধ
২১। ফুসস্ বুদ্ধ
২২। বিপশী বুদ্ধ
২৩। সিখী বুদ্ধ
২৪। বেসস্ভূবুদ্ধ
২৫। কুকুসন্ধ বুদ্ধ
২৬। কোণাগমন বুদ্ধ
২৭। কশ্যপ বুদ্ধ
২৮। গৌতম বুদ্ধ

গৌতম বুদ্ধ (পালি: গোতম) বা শাক্যমুনি বুদ্ধ হলেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা। জন্মের পর তাঁর নাম ছিল সিদ্ধার্থ গৌতম। আধ্যাত্মিক সাধনা ও জীবন নিয়ে নিজস্ব জ্ঞান-উপলব্ধির পর তিনি বুদ্ধ নামটি গ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম ৬২৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ এবং পরিনির্বাণ সাল ৫৪৩ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ ।

প্রথম জীবনঃ সিদ্ধার্থের পিতা ছিলেন শাক্য বংশীয় রাজা শুদ্ধোদন। মাতা মায়াদেবী। মায়াদেবী কপিলাবস্তু থেকে পিতার রাজ্যে যাবার পথে লুম্বিনি গ্রামে (অধুনা নেপালের অন্তর্গত) সিদ্ধার্থের জন্ম দেন। তাঁর জন্মের সপ্তম দিনে মায়াদেবীর জীবনাবসান হয়। পরে তিনি বিমাতা গৌতমী কতৃক লালিত হন। ধারণা করা হয় তাঁর নামের "গৌতম" অংশটি বিমাতার নাম থেকেই এসেছে। আবার কারও কারও মতে এটি তাঁর পারিবারিক নাম। জন্মের পঞ্চম দিনে রাজা ৮ জন জ্ঞানী ব্যক্তিকে সদ্যোজাত শিশুর নামকরণ ও ভবিষ্যৎ বলার জন্য ডাকেন। তাঁর নাম দেওয়া হয় সিদ্ধার্থ - "যে সিদ্ধিলাভ করেছে, বা যার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে"। তাঁদের মধ্যে একজন বলেন, রাজকুমার একদিন সত্যের সন্ধানে বেরিয়ে যাবেন এবং বোধিপ্রাপ্ত হবেন। একজন রাজপুত্র হিসেবে সিদ্ধার্থ বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা লাভ করেন।

সিদ্ধার্থ গৌতমের বিবাহ সম্বন্ধে দুধরনের মত আছে। প্রথম মত অনুসারে ১৬ বছর বয়সে তিনি একটি প্রতিযোগিতায় তাঁর স্ত্রীকে লাভ করেন। অতঃপর পুত্র রাহুল জন্মগ্রহণ করে। আর একটি মত অনুসারে ২৮ বছর বয়সে তাঁকে সংসারের প্রতি মনোযোগী করার জন্য তাঁর পিতামাতা তাঁকে রাজকন্যা যশোধরার সাথে বিবাহ দেন। পরবর্তী বছরে জন্ম নেয় পুত্র রাহুল।

মহানিষ্ক্রমণঃ কথিত আছে, একদিন রাজকুমার সিদ্ধার্থ বেড়াতে বের হলে ৪ জন ব্যক্তির সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। প্রথমে তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ, অতঃপর একজন অসুস্থ মানুষ এবং শেষে একজন মৃত মানুষকে দেখতে পান। তিনি তাঁর সহিস চন্নকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে, চন্ন তাঁকে বুঝিয়ে বলেন যে এটিই সকল মানুষের নিয়তি। আবার একদিন (কারও কারও মতে সেদিনই) তিনি চন্নকে নিয়ে বের হলেন। এবারে তিনি দেখা পেলেন একজন সাধুর, যিনি মুণ্ডিতমস্তক এবং পীতবর্ণের জীর্ণ বাস পরিহিত। চন্নকে এঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন উনি একজন সন্ন্যাসী, যিনি নিজ জীবন ত্যাগ করেছেন মানুষের দুঃখের জন্য। রাজকুমার সিদ্ধার্থ সেই রাত্রেই ঘুমন্ত স্ত্রী, পুত্র, পরিবারকে নিঃশব্দ বিদায় জানিয়ে তিনি প্রাসাদ ত্যাগ করেন। সাথে নিলেন চন্নকে। প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে বনের শেষ প্রান্তে পৌঁছিয়ে তিনি থামলেন। তলোয়ার দিয়ে কেটে ফেললেন তার লম্বা চুল। অতঃপর চন্নকে বিদায় জানিয়ে যাত্রা শুরু করলেন জ্ঞানান্বেষণে, মাত্র ২৯ বছর বয়সে। সিদ্ধার্থের এই যাত্রাকেই বলা হয় মহানিষ্ক্রমণ।

বোধিলাভঃ
দুঃখ দুঃখের কারণ সম্বন্ধে জানতে সিদ্ধার্থ যাত্রা অব্যাহত রাখেন। প্রথমে তিনি আলারা নামক একজন সন্ন্যাসীর কাছে যান। তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তিনি যান উদ্দক নামক আর একজনের কাছে। কিন্তু এখানেও কোনও ফল পেলেন না। এভাবে কিছু দিন যাবার পর তিনি মগধের উরুবিল্ব নামক স্থানে গমন করেন। সেখানে প্রথমে একটি উত্তর-পূর্বমুখি শিলাখণ্ডের উপর বোধিসত্ত্ব জানু পেতে বসে আপন মনেই বলেছিলেন যে, "যদি আমাকে বুদ্ধত্বলাভ করতে হয় তা হলে বুদ্ধের একটি প্রতিচ্ছায়া আমার সম্মুখে দৃশ্যমান হোক।" এই কথা উচ্চারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে শিলাখণ্ডের গায়ে তিন ফিট উঁচু একটি বুদ্ধের প্রতিচ্ছায়া প্রতিফলিত হল। বোধিসত্ত্ব তপস্যায় বসার পূর্বে দৈববাণী হয় যে, "বুদ্ধত্ব লাভ করতে গেলে এখানে বসলে চলবে না; এখান থেকে অর্ধযোজন দূরে পত্রবৃক্ষতলে তপস্যায় বসতে হবে।" এরপর দেবগণ বোধিসত্ত্বকে সঙ্গে করে এগিয়ে নিয়ে যান। মধ্যপথে একজন দেবতা ভূমি থেকে একগাছা কুশ ছিঁড়ে নিয়ে বোধিসত্ত্বকে দিয়ে বলেন যে, এই কুশই সফলতার নিদর্শন স্বরূপ। বোধিসত্ত্ব কুশগ্রহণের পর প্রায় পাঁচ শত হাত অগ্রসর হন এবং পত্রবৃক্ষতলে ভূমিতে কুশগাছটি রেখে পূর্বমুখি হয়ে তপস্যায় বসেন। কঠোর সাধনার ফলে তাঁর শরীর ক্ষয়ে যায়। কিন্তু এ তপস্যায় তিনি ভয়, লোভ ও লালসাকে অতিক্রম করে নিজের মনের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে সক্ষম হলেন। সহসা তিনি বুঝতে পারলেন এভাবে বোধিলাভ হবে না। তিনি তাই আবার খাদ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। সুজাতা নাম্নী এক নারীর কাছ থেকে তিনি এক পাত্র পরমান্ন আহার করলেন। অতঃপর তিনি নদীতে স্নান করে পুনরায় ধ্যানরত হন। অবশেষে কঠোর তপস্যার পর তিনি বুদ্ধত্বপ্রাপ্ত হলেন। শাক্যমুনি বোধিলাভের পর সাতদিন ধরে বোধিবৃক্ষের দিকে তাকিয়ে থেকে বিমুক্তিলাভের আনন্দ উপভোগ করেন। তিনি দুঃখ, দুঃখের কারণ, প্রতিকার প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করলেন। এ ঘটনাটিই বোধিলাভ নামে পরিচিত।

মহাপরিনির্বাণ লাভঃ সমস্ত জীবন ধরে তাঁর দর্শন এবং বাণী প্রচার করে অবশেষে আনুমানিক ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৮০ বছর বয়সে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে কুশীনগরে ভগবান তথাগত মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×