ষাটের দশকের দিকে মেঘনা বিধৌত সমুদ্রবক্ষে পলি জমে জেগে ওঠে এ দ্বীপটি। বন বিভাগ ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে এ দ্বীপটিকে সুন্দরবন আদলে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বনায়নের কাজ শুরু করে। সৃজনকৃত ১০ হাজার ৬৬৩ একর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সৃষ্টির লক্ষ্যে বন বিভাগ ১৯৭৮ সালে নিঝুম দ্বীপে ৪ জোড়া চিত্রাহরিণ অবমুক্ত করে।
নিঝুম দ্বীপে বর্তমানে হরিণের প্রকৃত সংখ্যা বন বিভাগের জানা না থাকলেও এলাকাবাসীর মতে এ সংখ্যা ৫০ হাজারেরও অধিক। নিঝুম দ্বীপের রেঞ্জ অফিসার হাফিজ উদ্দিন জানান, নিঝুম দ্বীপের হরিণের সংখ্যা ৪০ হাজার হতে পারে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মাত্র ৪ জোড়া হরিণ থেকে বংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪০ হাজারের অধিক চিত্রাহরিণ বিচরণ করছে নিঝুম দ্বীপের বনাঞ্চলে।
স্থানীয় অধিবাসীর মতে, গত সিডরের সময় প্রায় ৫ হাজার হরিণ ভেসে গেছে জোয়ারের পানিতে। এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা নুরুন্নবী চৌধুরী হরিণ জোয়ারে ভেসে যাওয়ার কথা অস্বীকার করলেও সিডর পরবর্তী সময় বনাঞ্চলে ২০টি হরিণের মৃতদেহ পাওয়া গেছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
প্রতিনিয়ত হরিণের বংশ বিস্তার ঘটায় তীব্র খাদ্যাভাব ও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে নিঝুম দ্বীপের ৪০ হাজার হরিণ। খাদ্যের অভাবে বনাঞ্চল ছেড়ে দল বেঁধে হরিণ লোকালয়ে এসে কৃষকের রবিশস্য বিনষ্ট করছে। এ সময় সুযোগসন্ধানীরা নির্বিচারে হরিণ শিকার করছে বলেও প্রচুর অভিযোগ রয়েছে।
একদিকে নিঝুম দ্বীপে হরিণের ক্রমাগত বংশবিস্তার, অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা বন উজাড় করে বনাঞ্চলে বসতি স্থাপন করায় নিঝুম দ্বীপে হরিণের বিচরণক্ষেত্র বনাঞ্চলের ওপর এক ধরনের পরোক্ষ ছাপ সৃষ্টি করছে, যা বন ও বন্যপ্রাণীর জন্য শুভ নয়।
নিঝুম দ্বীপের বিপুলসংখ্যক মূল্যবান হরিণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। এ ব্যাপারে নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বদরুল আনমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি নিঝুম দ্বীপে ব্যাপক হারে হরিণের বংশ বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নিঝুম দ্বীপ থেকে ব্যাপকসংখ্যক হরিণ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রধান বন সংরক্ষকের কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি চিঠি পাঠালেও অদ্যাবধি এ ব্যাপারে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা আসেনি। তিনি জানান, অতি সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ে ব্যক্তি বা খামারি পর্যায়ে হরিণ বিক্রির সিদ্ধান্ত হলেও এখন পর্যন্ত হরিণের দাম নির্ধারণ করা হয়নি এবং এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও কোনো চিঠিপত্র তিনি পাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, নিঝুমদ্বীপে যে হারে হরিণের বংশ বিস্তার হচ্ছে সে হিসেবে গড়ে প্রতিবছর অন্তত ১০ হাজার হরিণ আহরণ করা সম্ভব। প্রতিটি হরিণের আনুমানিক বাজারমূল্য ২০ হাজার টাকা হিসেবে ১০ হাজার হরিণের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২০ কোটি টাকা। আহরিত হরিণ স্থানীয় বাজারে বিক্রি কিংবা রফতানি করে এ টাকা আয় করা সম্ভব। শুধু হরিণ বিক্রির টাকা দিয়ে পর্যটন সম্ভাবনাময় নিঝুম দ্বীপের অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থানীয় লোকজনের শিক্ষা ও চিকিত্সাসেবার মতো আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। নিঝুম দ্বীপের আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন। সূত্রঃআমার দেশ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





