somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের মন এমন কুৎসিত ক্যান্ (জীবন গদ্য)

০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দ্রুত গতিতে পথ চলা রোদ্দুরের বদভ্যাস। স্বাভাবিক হাঁটাটাই এত দ্রুত.. সবাই মনে করে তাড়াহুড়া...
-আপা আস্তে হাঁটেন
-আস্তেই তো হাঁটছি রোদ্দুরের কপাল কুঁচকানো জবাব
-কই নাতো আপনি খুব দ্রুত তড়িঘড়ি করে হাঁটছেন
রোদ্দুর হেসে উত্তর দেয় আরে এটাই আমার নরমাল হাঁটা।

প্রায়শ:ই এই সমস্যায় তাকে পড়তে হয়। দেখা গেছে দল বেঁধে সবাই রোদ্দুরের পাশাপাশি হাঁটছে অথচ মনের অজান্তেই রোদ্দুর সবাইকে ছাড়িয়ে অনেক আগে চলে যায়। বেখেয়ালি মন খেয়ালে আসলে দাঁড়িয়ে অন্যদের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাকে। এই হচ্ছে এক জ্বালা!!

যাই হোক, রোদ্দুর তার ইচ্ছেমতই হাঁটে স্বাভাবিক দ্রুত গতিতে। যে যা ইচ্ছে বলুক গা... নো পরোয়া! আপন মনে হাঁটায় অন্যরকম আনন্দ। ভাবনাতে ছেদ কাটতে পারে না কেউ।

নির্ভেজাল একা হাঁটতেই তার পছন্দ। ফুটপাত ধরে কিংবা মেঠোপথ অথবা ধুলিওড়া পথ ধরে। পথ চলাতে যেনো কোনো ক্লান্তি নেই তার। হাঁটতে হাঁটতে সে মানুষ দেখে। তার চারপাশে কি ঘটে যাচ্ছে তা দেখার চেষ্টা করে।

পথ চলতে চলতে রোদ্দুর কখনো থমকে দাঁড়ায় ফুটপাতে পড়ে থাকা নিথর বিকলাঙ্গ মানুষ নামের জীবটিকে দেখে। মুহুর্তেই যেনো সে কোমায় চলে যায়!! দুনিয়া ছেড়ে অন্য কোথাও তার বাস। সে বেঘোর ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখতে থাকে। আহা তার বাস এখন অন্য গ্রহে যেখানে মানুষের চেয়ে মুল্যবান কিছু নেই। বেশিক্ষণ কোমায়ও থাকা যায় না এই যন্ত্রের শহরে। যন্ত্রের বিকট আওয়াজে তার সম্বিত ফিরে আসে, আরেক নজর বিকলাঙ্গ মানুষটির উপর চোখ বুলায়ে তিতা মনে আনমনে আবারো হাঁটা শুরু করে।

কোলাহলমূখর পরিবেশে নিস্তেজ জীর্ণ শীর্ণ দেহের বুড়িটা হুইল চেয়ারে বসে ওর তার কাছে হাত পাতছে। কঙ্কালসার দেহ, ছেঁড়া মলিন বসন বুড়ির। কখনো সে পাশে হেঁটে যাওয়া মানুষটিকে খপ করে ধরে ফেলে হাতে কিংবা শার্টে অথবা শাড়িতে। তাকে ছাড়িয়ে নেয়া সহজ হয় না। মানিব্যাগের দুয়ার খুলতেই হয় বাধ্য হয়ে। এ এক কঠিন বিড়ম্বনা... রোদ্দুর প্রায়ই এমন সিন দেখে আসছে। মুখ বেজার করে ভাবনা ছাড়া যেনো কিছুই উপায় থাকে না। কাকে কি বলবে সে!!

অথচ অনতিদূরে দাঁড়িয়ে আছে জোয়ান তাগড়া মেয়ে বা মহিলা, হয়ত বুড়ির মেয়ে, কিংবা ছেলের বউ অথবা আত্মীয় কেউ হতে পারে। যাই হোক না কেনো.. তার দৃষ্টি বুড়ির থালার দিকে নিবন্ধ!! যখনই থালাটি টাকা পয়সায় পরিপূর্ণ তখনই সে ধীর পায়ে বুড়ির পাশে দাঁড়ায় গিয়ে। সন্তর্পণে সকল টাকা পয়সা হাতের মুঠোয় নিয়ে আলগোছে তার বুকের মাঝে হাত ঢুকিয়ে জমা করে। ছি: কি লজ্জা!

রোদ্দুর ভাবে বিনা পুঁজির ব্যবসা ওদের ভালই চলে! এজন্যই ওদেরকে সাহায্য করতে তার ঘৃণা লাগে। ইচ্ছে করলেই সেই জোয়ান মহিলা গায়ে খেটে কিংবা অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারে। ঢাকা শহরে ছোটখাট ব্যবসা ভালইতো চলে। মনের সুখে বুড়িকে নিয়ে সেই মহিলা তৃপ্তিতে সংসার পাততে পারত। অথচ সে এই ঘৃণার পথটিই বেছে নিয়েছে।

অইতো সেদিন রোদ্দুর হেঁটে ফিরছিল নীড়ে... রাস্তার পাশে সাজানো বিভিন্ন দোকানের পসরা। একটি দোকানের সামনে একটি ভিক্ষুক মহিলা তার বাচ্চা নিয়ে ঘুমে বেঘোর। আহ কি মায়া ভরা মুখ শিশুটির। মহিলাটিও খুব শান্তির ঘুমে গেছে যেনো। অথচ দেহের নিচে নেই নরম বিছানা, মাথায় নেই বালিশ তবু অথৈ ঘুমে কাতর দুটো মানুষ।

আহারে তাদের কপালে কি আর শান্তির ঘুম হয় বা হবে। দোকানী বের হয়েই গালাগাল দিতে থাকে এখান থেকে উঠার জন্য। ঘুম ভাঙ্গে না বলে দোকানি পা দিয়ে মহিলার পায়ে ধাক্কা দিয়ে জাগাতে চেষ্টা করে। দোকানি তরুন বয়সের, হ্যাণ্ডসাম সুন্দর অথচ তার মন মেজাজ কত কুৎসিত ছি:

রোদ্দুর সহ্য করতে না পেরে বলেই ফেলে আপনি পা দিয়ে একজন মহিলাকে ঘুম থেকে জাগাচ্ছেন। সামান্য মানবতাবোধ মনের ভিতর রাখেন। সে ভিক্ষুক হলেও সে একজন মানুষ এটা মনে রাখবেন। লোকটি মুখ কাচুমাচু করে দোকানের ভিতর চলে যায়।

রোদ্দুর আবারো হাঁটা শুরু করে কিছুক্ষন হেঁটে গিয়ে রিক্সা নেয় নীড়ে ফেরার উদ্দেশ্যে। কিছু দূর যেতেই অন্য একটা দৃশ্য তাকে আবারো থমকে দিতে বাধ্য করে... রিক্সা করে যাচ্ছে বেশ সুন্দর ভদ্র তরুণ তরুণি। তরুণ ছেলেটা সমানে বিড়ি ফুঁকছে.. আর দুইজনেই হাসাহাসি গল্পে মত্ত। আচমকা মেয়েটি ছেলেটির হাত থেকে বিড়িটা ছিনিয়ে নিয়ে ধুমছে টানতে থাকে। রোদ্দুর অবাক হয়ে দৃশ্যটি দেখতে থাকে। কত্ত সহজ সবকিছু এই নগরীতে আহা!! বিষ্ময় আর বিষ্ময়...

-রিকশাওয়ালা ভাই দেহেন দেহেন ঐ রিক্সার মাইয়াটা বিড়ি টানে
-আফা এ আর নতুন কি। রোজই দেখে যাই এমুন দিশ্য।
-আরে দেহেন কি সুন্দর ভদ্র ঘরের লাগছে মাইয়াডারে
-এমন ভদ্র রাই ভিতরে ভিতরে অভদ্র আফা। আরো কত কিছু দেহি সারাদিন। দেখে দেখে এসবে আমরা অভ্যস্ত হয়া গেছি!
- আমাগো সমাজডাই নোংরা কইরা ফালাইল এসব ফাজিল্গুলায়। লজ্জা শরম কিচ্ছুটি নাইক্কা।
-হ আফা ঠিক কইছেন;

রোদ্দুর আর ভাবতে চায় না কিছু। তার এখন নীড়ে ফেরার তাড়া।
March 1, 2016
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:২৮
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×