somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

=আমাদের অতীত বেলার গল্প=

০৩ রা জুন, ২০২১ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



=আমাদের অতীত বেলার গল্প=
এখনকার বাচ্চারা মুঠোফোন নিয়ে পড়ে থাকে। আর অতি বাড়াবাড়ি পড়াশুনা। ওদের বিকেলগুলো হারিয়ে গেলো বন্দি থেকে থেকে। ওদের বিকেল আসে শুধু ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলার আসর নিয়ে, তাও এক চিলতে জায়গায়। আমাদের ছেলেরা আমাদের মত খোলামেলা জায়গা পায়নি। ওরা শহরের মানুষ। আমরা গাঁইয়া মানে গাঁয়ের মানুষ।

ওরা যখন মুঠোফোনে বিজি থাকে, তখন বলি অন্য কিছু কী করা যায় না। ওদের কাছে বসে বলি বাবারা তোদের কোনো গল্প নেই এবেলার । আমাদের অতীত আহা, আমাদের অতীত সুখ গল্পে ভরা আর তোদের জীবন যেন ডিজিটালের খরা।

মনে পড়ে যায় সেই মুহুর্তগুলো, সেই বর্ষার মৌসুম। স্কুল থেকে ভিজে ভিজে স্যান্ডেল হাতে নিয়ে ঘরে ফেরা পা টিপে টিপে। পিচ্ছিল কাঁদায় আগাতে হতো সন্তর্পণে। কখনো ছাতা, কখনো মানকচুর পাতা মাথায়। আমাদের স্কুল ব্যাগ ছিলো না। পলিথিনে মুড়িয়ে বইখাতা বগল দাবা করে ফিরে আসতাম স্কুল থেকে।

এই বর্ষার দিন ধান তোলার মৌসুম চলতো। বাড়ী থেকে দূরে খালি জায়গায় বানানো হতো খলা, গোবর আর মাটি মিশিয়ে জায়গাটি লেপা। বাড়ীর ধান শুকানো হতো সেখানে। বাড়ী ফিরেই যদি দেখতাম বৃষ্টি আসে আসে, নেমে পড়তাম ঘরে শুকনো ধান তোলার কাজে। এই আনন্দ আসলে কী যে ভালো লাগার তা বুঝানো যাবে না। কার ধান কে তোলে ঘরে তা কেউই জানি না। মানে আমাদের তোলা শেষ হলে একযোগে চাচাদের ধান তোলা লেগে যেতাম। বৃষ্টির ফোঁটা পড়লেই খুশির ঝলক চোখে মুখে আমাদের। সবাই দৌঁড়াদৌঁড়ি, কারো মুখে কোনো বিষণ্ণতা নেই, নেই হিংসা। ধানের টুকরি কখনো ভরে দিতাম, কখনও ধান টেনে টেনে জমা করতাম উঠোনে, কখনও ধান ঝাড়ু দিয়ে একজায়গায় করতাম।

ঝুম বৃষ্টি যদি হতো ঠিক তখনি শুকনো উঠোনে ভিজার জন্য নেমে পড়তাম। হা করে বৃষ্টি গিলতাম। তারপর পুকুরে ঝাঁপ। ডুব দিয়ে শুনতাম বৃষ্টির শব্দ। আগে এত বজ্রপাত হতো না। সাঁতার কেটে হুই হুল্লোড়ে ঘন্টা খানেক পুকুরেই থাকতাম। অন্য কোনো দায়িত্ব মাথার উপর না থাকায় চিন্তাও তো ছিলো না। কেবল আম্মার হাতের বাড়া ভাত আহা, কী যে তৃপ্তির দিনগুলো আমাদের।

মধ্যরাত পর্যন্ত ধান সিদ্ধ হতো, ধান যখন সিদ্ধ হতো অন্য রকম ঘ্রাণ ছড়াতো। চুলার কাছে বসে বসে মাঝে মাঝে ধান ছিটিয়ে দিতাম ছাইয়ে আর খই ফুটে উঠতো, একটা একটা খই মুখে দিতাম কী যে মজা লাগতো।

বৃষ্টির দিনগুলো খুবই মজার হতো। দোয়া করতাম আল্লাহ বৃষ্টি কমাইয়ো না স্কুলে যাওয়ার বেলা। দেখা যেত ঠিক সময়মতো বৃষ্টি থেমে গেছে। কখনও যেতে হতো কখনও যেতাম না। যেদিন সারাদিন বৃষ্টি হতো। ভাইবোনেরা কিছু সময় ক্যারাম, কিছু সময় দাবা আর লুডু খেলতাম। আম্মা আমাদের জন্য চাল ভাজা করতেন। অথবা চিড়ে ভাজা কাঁচা মরিচ মাখিয়ে আনতেন। কখনও খিচুড়ি হতো। দুপুর পরেই কাথামুড়ি দিয়ে শুইতাম। কান পেতে শুনতাম টিনের চালে বৃষ্টির ঝুমঝুম আওয়াজ। বৃষ্টিদিনের আরও কত স্মৃতি জমানো বুক পিঞ্জরে, তা না হয় আরেকদিন বলবো ইনশাআল্লাহ।

আর আমাদের বাচ্চারা মুঠোফোন নিয়েই এখন ব্যস্ত। এখন মহামারীকাল। মুঠোফোন ছাড়া উপায়ও নেই। জুম ক্লাস, কোচিং, ফেসবুকে কলেজের গ্রুপের সাথে আড্ডা। কেমন করে যে তাদের সময় কেটে যায়। আগে একটু একটু আর্ট করতো ছোট ছেলে । এখন তার সে দিকে মন নেই একদম। মনটা খারাপ হয়ে যায়। বিকেলে শুধু সাইকেল চালায়। আর বড় ছেলে ছাদে কিছু সময় ক্রিকেট খেলে। বাকী সময়টা ওদের কাটে মুঠোফোনে। কবে যে খুলবে স্কুল কলেজ কবে আবার সচল হবে ওদের মন।

আমার মনে হয় পালাবদল করে করে ছাত্রদের স্কুল কলেজ খুলে দেয়া প্রয়োজন। এদের ছেলেবেলা এদের উড়ন্ত বেলা ওদের আনন্দটুকু সময় কেড়ে নিচ্ছে । সবই খোলা। আমরা অফিস করছি। যাচ্ছি আসতেছি। তবুও ভয় লাগে যদি বাচ্চাদের কিছু হয়। কিছুই তো আর ভাবা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২১ বিকাল ৪:২৬
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×