অমিত ভাই, আপনার লেখা দেখে মন্তব্য না করে থাকতে পারলাম না। হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সদস্য। আপনার মত আমারো রক্ত মাংসের উপলব্ধি রয়েছে। আমিও মানুষ। গত কয়েক দিনে ব্লগে, মিডিয়ায় সর্বত্র সেনাবাহিনীর প্রতি তীব্র বিদ্বেষ, ঘৃণা দেখে খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। হতাশ হয়েছিলাম আমাদের এই তীব্র শোকের সময়ে সাধারনের প্রতিক্রিয়ায়। এর পুরো দায় ভার তো আমাদেরই নিতে হবে। কিন্তু এর জন্য আমাদের মুল্যটা অনেক বেশী দিতে হল। আপনারা নিহত অনেক অফিসারদের কে টিভি, পত্রিকায় দেখেছেন, আর আমি তাদের অনেক কে ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি। আমাদের কষ্টটা অনেক অনেক বেশী। আমরা চিন্তাও করি নাই, যে আমাদের সেনাবাহিনীর অন্যতম সেরা, চৌকশ, সৎ অফিসার কর্নেল গুলজার এর লাশ সুয়ারেজ লাইনে বের হয়ে আসবে। ইনি সেই অফিসার, যার একক নেত্তৃতে দেশ ব্যাপী জঙ্গী বাদ দমন হয় এবং শায়খ আব্দুর রাহমান ও বাংলা ভাইরা ধরা পড়ে। তিনি রযাী ব ইন্টেলিজেন্স থেকে মাত্র জানুয়ারীতে বাংলাদেশ রাইফেলস এ যোগদান করেন এবং তারপর এক মাসের ছুটি কাটিয়ে বিডি আর সিলেটে এক সপ্তাহ অফিস করে গত মংল বার ঢাকা এসে মৃত্যু আলিঙ্গন করেন। প্রতিটি মৃত্যুই কষ্টের, সেটা আরো বেশী কষ্টের যখন দেশ প্রেমিক অফিসারের মৃত্যু এভাবে হয়। তার পরিবারের কাছে, আমাদের কাছে কেমন লাগে যখন দূনী্তিবাজ অফিসাররা বিদ্রোহের শিকার বলা হয়। তখন কি আর চাকরী করতে ইচ্ছে করে বলেন? ঢালাও ভাবে সকল রাজনীতি বিদ দের যেমন দোষ দেওয়া অন্যায়, তেমনি পুলিশ, আর্মি, বিডি আর সবাইকে ঢালাও ভাবে বলাটা অন্যায়। দোষ-গুন মিলে প্রতিটি মানুষ। আর অনেক মানুষ মিলেই একটা অর্গানাইজ়েশন গড়ে উঠে। আমার মনে হয়না আমি কোনদিন দূঃ স্বপ্নেও কাউকে ব্লাডি সিভিলিয়ান গাল দিয়েছি। আমার বাবা ও তো একজন সিভিলিয়ান। কাকে গালি দিব? জাতির অনেক সংকটে আমরা এগিয়ে গিয়েছি, আমাদের হয়ত অনেক ভুল ছিল, কিন্তু সংকট সমাধানে আমাদের সর্ব শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমরা তো এই জাতির বাহিরের কেউ নই। আর এটাই আমাদের কর্তব্য। কিন্তু আজ যখন সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় এই সংকটে সাম হোয়ার ইন ব্লগে দেখি কিছু মানুষ বিকৃ্ত আনন্দে মেতে উঠেছেন তখন নিজের উপরে আস্থা হারিয়ে ফেলি। সেনা বাহিনীকে পছন্দ করেন এমন মানুষ বাংলাদেশে আসলেই কম। তাহলে কেন, কার জন্য এই সেনা বাহিনী তে থাকব আমি? দেশ ও জাতীর সেবা করতে এসে ভালোবাসার বদলে ঘৃ্ণাই যদি আমার প্রাপ্য হয়- কোণ মেরুদন্ড সম্পন্ন মানুষ এর পর আর চাকরী করতে পারবেনা। আমার জায়গায় আপনি থাকলেও তেমনি করতেন। আমাদের পরিবার অপমানিত, আমি আর তাদের অপমানিত হতে দিতে পারিনা, আমাকে সেই অধিকার কেউ দেয়নি।
আর একটা কথা, গত দুদিনে আর্মির প্রতি বিদ্বেষ অনেক কমে গেছে আমি জানি- এত গুলো মানুষ মারা গেছে জেনে আপনারাও শোকাহত। আপনারা
আজ দুদিন হল তা জেনেছেন আমরা ২ দিন আগেই তা জেনেছি। আপনারা যখন ব্লগে সেনা বাহিনীকে তুলোধুনা করে ফেলছেন, তখন আমরা জানি আমাদের ভাইদের মেরে ফেলা হচ্ছে এখন, টুকরো টুকরো করে ম্যানহলে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তারপর ও আমরা সংযম এর পরিচয় দিয়েছি। শক্তিতে অনেক বেশী থাকার পর ও নিরীহ প্রান বাঁচানোর জন্য সংঘাতে যাইনি। খুব খেয়াল করে দেখবেন আমাদের বি্রুদ্ধে আপনাদের একটা আশংকা ও আমরা সত্যি হতে দেইনি। ধীর ও স্হীর থেকেছি। আমরা ধৈর্য ধরে আছি, থাকব, বিশ্বাস রাখুন আমাদের উপরে। বিডি আর আমাদেরই গড়ে তোলা সংঘটন। আমাদের ই ভাই। এ লজ্জা আমাদের ও। তবে যারা এ ঘৃ্ন্য হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি সম্প্ররকিত , তাদের মাফ করে দিয়ে ১৯৭১ এর মত ভুল আমরা করতে পারিনা। এই নব্য রাজাকারের সন্তানদের আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। ১৪ ডিসেম্বরের ১৯৭১ এর পুনরাবৃত্তি ২৫ এ ফেব্রুয়ারীতে হল, দেশ হারাল সূ্র্য সন্তানদের। এদের শাস্তির মুখোমুখি করা আপনার, আমার সবার দ্বায়িত্ব। এরা পিলখানা থেকে অস্ত্র নিয়ে সারা দেশে লুকিয়ে পড়েছে। আপনার আসে পাশেই এখন আছে। এদের ধরিয়ে দিন, সাহায্য করুন। যারা সাধারন, নিরপরাধ সৈনিক, তাদের কে এক কাতারে ফেলে বিচার করা হবেনা, আপনারা সবাই সেটা দেখতে পারবেন। এই সেনাবাহিনী অনেক বদলেছে এবং আরো বদলাবে- আপনাদের ও কিন্তু তাতে অবদান রাখতে হবে। আমি এই ব্লগের মেম্বার অনেক দিন ধরে, আজি প্রথম লিখলাম, আর আজি শেষ। সেনা বাহিনী থেকে বের হয়ে গেলে আশাকরি নিয়মিত লিখব। ভাল থাকুন সবাই।
পাদটিকা: লেখাটা মন্তব্য আকারে দেয়া হয়েছে, তার পর ও ব্লগ আকারে লিখলাম, যাতে অনেকের চোখে পড়ে। আশাকরি মডারেটর এর গুরুত্ত দিবেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



