মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড।
২০১০ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারী। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া দলে এক নতুন মুখ। ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ১৮২ নাম্বার ক্যাপ নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্পিনার হিসাবে ওয়ানডে অভিষেক স্টিভেন স্মিথ নামে ২০ বছর বয়সী এক তরুণের। ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। বল হাতে ৯.৫ ওভারে ৭৮ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতেছিল ১২৫ রানে।
ক্রিকেট তীর্থ লর্ডস।
২০১০ সালের ১৩ই জুলাই। বিপক্ষ পাকিস্তান। ৪১৫ তম অস্ট্রেলিয়ান হিসাবে টেস্ট ক্যাপ পেলেন স্টিভেন স্মিথ।
ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে ৭ বল খেলে ১ রান করেছিলেন। ২য় ইনিংসে ১৭ বলে ১২ রান।
বল হাতে প্রথম ইনিংসে বোলিং করতে হয়নি। ওয়াটসন তান্ডবে ১৪৮ রানে অলআউট পাকিস্তান।
২য় ইনিংসে ২১ ওভারে ৫১ রানে ৩ উইকেট। তার মাঝে শেন ওয়ার্নের ছায়া খুঁজেছিল অনেকেই।
অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতল ১৫০ রানে।
...............................................................
বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফি শুরুর (২০১৪-২০১৫) আগ মুহুর্ত। ফিলিপ হিউজের শোকে আচ্ছন্ন গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তো ঘোষনাই করেছিল যারা সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত নয় তারা চাইলেই নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারে প্রথম একাদশ থেকে। প্রথম টেস্ট খেলে পুরনো চোটে আক্রান্ত নিয়মিত অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ইনজুরিতে পড়লেন। সিরিজের বাকী টেস্টের জন্যে অধিনায়কের খোঁজে অস্ট্রেলিয়া। সবাই যখন ভাবছিল ব্র্যাড হাডিনের কাঁধে উঠবে অধিনায়কের দায়িত্ব, ঠিক সেই সময় দুরদর্শী অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড দায়িত্ব দিলেন ২৫ বছর বয়সী এক তরুণের উপর। তারপর ইতিহাস।
আগের ২২ টেস্টে যার ৪ সেঞ্চুরী পরের চার টেস্টেই তার চার সেঞ্চুরী!
নতুন দায়িত্ব পেয়ে যেন আরও উজ্জীবিত স্মিথ। অ্যাডিলেডে ১৬২ দিয়ে সিরিজ শুরু করেছিলেন। ৬৩ রানের সময় ফিলিপ হিউজকে স্বরন, সেঞ্চুরীর পর মাঠে খোদাই করা হিউজের টেস্ট ক্যাপের সংখ্যা 408 এর কাছে গিয়ে তার ব্যাট উচিয়ে হিউজকে উৎসর্গ করা তো ক্রিকেট কেন সমস্ত ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসেই এক আবেগের ছবি হয়ে আছে। ব্রিসবেনে করলেন অধিনায়কত্বের প্রথম ইনিংসেই ১৩৩ রান। সাথে চমৎকার অধিনায়কত্ব। চার উইকেটে জিতে সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে স্বাগতিকরা। পরের দুই টেস্ট না জিতলেও ওই দুই টেস্টেই দুই সেঞ্চুরী! মানে অধিনায়কত্বের প্রথম তিন টেস্টেই টানা তিন সেঞ্চুরী! সিরিজের চার টেস্টেই সেঞ্চুরী। সিরিজের সর্বাধিক রান, ম্যান অফ দ্যা সিরিজ স্টিভেন স্মিথ! অস্ট্রেলিয়া পেয়ে গেল আগামীর ক্যাপ্টেন।
বিশ্বকাপের কিছুদিন বাকী। কার্লটন মিড ট্রাইনেশন ওডিআই সিরিজ। ফরম্যাট বদলালেও দুর্দান্ত অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে এগিয়ে তারা। ওয়ানডের অধিনায়ক জর্জ বেইলি সিরিজে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে স্লো-ওভার রেটের কারণে নিষিদ্ধ হলেন। দায়িত্ব পড়ল সেই ২৫ বছর বয়সী তরুণ স্মিথের উপর। করলেন অধিনায়কত্বের প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরী। ৩০৩ রানের কঠিন টার্গেট তাড়া করে ১ বল আগেই জিতে গেল অস্ট্রেলিয়া। ১০২ রানে অপরাজিত থাকলেন। দল জিতল ৩ উইকেটে। হয়ে গেলেন টেস্ট ও ওয়ানডের অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরী করা একমাত্র ক্রিকেটার!!! প্রতিপক্ষ ভিন্ন, ফরম্যাট ভিন্ন, কিন্তু একই ক্যাপ্টেন স্টিভেন স্মিথ।।
স্পিনার হিসাবে দলে আসা সেই ২০ বছরের ছেলেটি আজ অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা।
বয়স তো মাত্র ২৫, সবে পথচলা শুরু। যেভাবে রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্ককে গড়ে তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া ঠিক সেভাবেই স্মিথকে গড়ে তুলছে অস্ট্রেলিয়া। গো এগেড, ক্যাপ্টেন স্টিভেন স্মিথ।।