somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদেখা স্বর্গ (কেয়া তোমার সাথে)

২১ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জীবন এভাবেই চলতে থাকবে...
আর একদিন হঠাৎ তুমি আমাকে বলবে – "চলো, একসাথে বাইরে গিয়ে কফি খাই",
ঠিক সূর্যাস্তের আগে, আমরা ঢাকা শহরের কোথাও কফি খাচ্ছি আর তুমি হাসি মুখে আমাকে বলবে…
"জানো? আমি স্কলারশিপ পেয়েছি, আর তিন মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি…"
আমি অবাক হয়ে তোমার দিকে তাকাবো, আর দেখতে পাবো পুরো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিস –
তোমার হাসি। পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য যেন সেই মুহূর্তে আমি দেখলাম!
আমি খুব খুশি খবর শুনে, কিন্তু মনের কোথাও একটুকরো নরম ব্যথা জেগে উঠবে।
তবুও, কফি এখনও গরম, হাতে সিগারেট আর চোখের সামনে তুমি, জীবেন আর কি চাই ?
কিন্তু এই মুহূর্ত বেশী সময় থাকবে না, আমি জানি আর আমি জানি এখন আমাদের আমরা ঠিক করা উচিৎ কিভাবে তুমি ব্যাগ পেক করবে, কীভাবে ভবিষ্যৎ জীবনটা সহজ হবে তোমার জন্য।
এক পলকের মধ্যে তিন মাস কেটে যাবে,
তুমি এয়ারপোর্টে থাকবে, আমি তোমাকে বলবো "টাটা"… আমার খুব ইচ্ছা তোমার সাথে বিদেশে গিয়ে তোমাকে ছোট্ট বাবুর মতন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করায় , তোমার হোস্টেলে উঠায় দিয়ে দেশে ফিরব কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে আমার এই ইচ্ছা পূর্ণ হবে না।
আমাদের চোখে জল আসবে, কিন্তু আমরা সেটা লুকিয়ে ফেলবো।
দিন চলে যাবে… তুমি নতুন জায়গায়, নতুন জীবনে পা রাখবে…
সময়টা কঠিন হবে কারণ তুমি নতুন সেখানে আর একা, আর ধীরে ধীরে আমাদের যোগাযোগ কমে যাবে… টাইম জোনের ফারাকটাই মূল কারণ হবে –
যখন তুমি কথা বলার সময় পাবে তখন আমি ঘুমাবো,
আর যখন আমি সময় পাবো তখন হয়েত তুমি ব্যস্ত থাকবে…
তবে এটিই তো জীবন, আমরা দুজনেই জানি ,
জীবন নিয়ন্ত্রণ করা যায না বরং জীবনকে মেনে নিতে হয় আর আমরাও এই জীবন মেনে নিব।
________________________________________
তারিখঃ ভবিষ্যতের কোনো এক সময় (২০৩৫–২০৪০)
একদিন… হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে / ফেসবুকে একটি মেসেজ আসবে, লেখা থাকবে “Hi”
আমি সেই মেসেজ দেখে হতবাক হবো এবং মনে মনে ভাবতে শুরু করবো…
আমি কি স্বর্গে?
স্বর্গের আপসরা কি আমার দিকে আসছে?
যেনো আমাকে আমার দেবীর কাছে নিয়ে যেতে চায়?
আমি আমার দেবীর সামনে, আমার মাথা নত করে বলছি – "ক্ষমা করো প্রিয় দেবী, হয়তো কোনো ভুল করেছিলাম বলেই তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে…"
আর তখনই আমি দেখতে পাবো সেই চিরচেনা, সবচেয়ে সুন্দর হাসিটা – আর এখানেই কল্পনা থেমে যাবে।
তারপর আমি ফোন তুলে তোমাকে রিপ্লাই দেবো –
“ওহ আমার প্রিয় দেবী, ক্ষমা করো। আমি প্রতিদিন তোমার উপাসনা করতাম, আমি পাপী, তাই তুমি হারিয়ে গেলে… কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিলো, একদিন তুমি আমায় মনে রাখবে…”
এইভাবেই কথোপকথন শুরু হবে…
তুমি বলবে তুমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলে, আমি বলবো – “জানি… বলার দরকার নেই”
তুমি রেগে গিয়ে বলবে – “তুমি সব জানো? কিছুই জানো না, আমি এখন সব বলবো আর তুমি চুপ করে শুনবে।”
আমি হেসে বলবো – “শুনছি, প্রিয় দেবী…”
তুমি বলতে শুরু করবে…
তুমি তোমার ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছো !
তিনি ইউরোপের কোনো দেশ থেকে এসেছেন, কিন্তু এখন তোমরা দুজনই আমেরিকায় থাকো।
তোমাদের দুই সন্তান, দুজনেই বড় হয়েছে, আর তুমি এখন একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বস!
তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করবে – “তোমার জীবন কেমন?”
আমি বলবো – আমার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই।
আমার পরিবারে একটা মেয়ে আছে, তবে সে আমার নিজের সন্তান নয় –
তুমি বিদেশে সেটেল করার পর একদিন আমি শ্রীমঙ্গল গিয়ে একটা ছোট্ট মেয়ে দত্তক নিই, ওর নাম রেখেছি "কেয়া, দ্য প্রিন্সেস"।
আর আমি এখন একটা ছোট কোম্পানির মার্কেটিং হেড।
এইভাবেই আবার আমাদের কথা চলতে থাকবে…
________________________________________
কয়েক মাস পর, আমার একটা বায়িং মিটিং ঠিক হবে যেটা ঠিক তোমার ইউএস রেসিডেন্সের কাছাকাছি কোথাও।
আমি অনেক এক্সসাইডেড হয়ে তোমাকে এই মিটিং এর টাইম সিডিউল জানাব আর তুমিও শুনে অনেক এক্সসাইডেড হবে, অনেক দিন পর আমাদের দেখা হবে !
শেষ পর্যন্ত, আমি আমেরিকায় নামবো।
সকল কাজ শেষ করে আমরা একসাথে দেখা করবো কোন এক কফি শপে।
আলাপের মাঝেই আমি তোমাকে বলবো –
“চলো কানাডা যাই, নাইয়াগ্রা ফলস আর হর্সশু ফলস একসাথে দেখি…”
তুমি অবাক হবে, হাসবে এবং রাজি হয়ে যাবে।
তারপর আমরা কানাডা ঘুরে আসবো এবং পরদিন ফিরবো।
ফিরে এসে এক বিকেলে আমরা একসাথে একটা পার্কে বসবো, অনেক অনেক গল্প করবো…
হঠাৎ আমি লক্ষ্য করবো – এক নারী আমার দিকে তাকিয়ে আছে!
সে এগিয়ে এসে বলবে – “তুমি কি দানবিক রাক্ষস?”
আমি বলবো – “হ্যাঁ, আমি”
সে বলবে – “আমি তোমার অতীত… মনে আছে?”
তখন আমি পকেটে হাত দেবো…
স্পর্শ করবো সেই জাদুকরী টাইম স্টোন,
আর সময় পিছিয়ে যাবে…
আমরা ফিরে যাবো সেই মুহূর্তে, যখন তোমার চুলে আমি সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত দেখছিলাম…
ভোরবেলায় আমরা হাতে হাত রেখে হেঁটে যাবো নাইয়াগ্রা লেকের পাশে…
হাটার সময় সেখানে আমরা এক আজব লোক দেখব ! সে বসে আছে লাল জামা পরে!
আমরা আগ্রহ নিয়ে কাছে যাবো, দেখবো লোকটা লেকে মাছ ধরছে বড়শী দিয়ে!
আর বুঝতে পারবো – সে হচ্ছে “সান্তা ক্লজ!”
আমি জিজ্ঞেস করবো – “তুমি এখানে কী করছো?”
সে বলবে – “মাছ ধরছি, এগুলো ম্যাজিকাল মার্কেটে বিক্রি করবো, আর সেই টাকা দিয়ে আগামী বড়দিনের গিফট কিনবো!”
এইভাবেই আমরা বুঝে যাবো –
এই পৃথিবীতে কিছুই ফ্রি না। ভালো থাকতে, ভালো কিছু দিতে হলেও টাকা লাগে।
আমরা তাকে বিদায় জানাবো,
একটি লেকভিউ রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট করবো,
তারপর আমি তোমাকে দেখাবো – দুইটি কনসার্টের টিকিট!
হ্যাঁ, এটা Wacken Open Air, জার্মানির Heavy Metal Music Festival এর টিকিট!
আমি বলবো – “চলো, জার্মানি যাই!”
তুমি না করবা, বাহানা খুঁজবা…
তখন আমি তোমার হাত ধরবো আর বলবো –
“শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত তুমি শুধু দৌড়েছো… এবার একটু থেমে দাঁড়াও। তোমার ইচ্ছা ছিলো লাইভ কনসার্ট দেখার – আজ সেই স্বপ্ন পূরণ করো। আমার সঙ্গে যাও।”(যদিও তুমি হেভি মেটাল মিউজিক একটুও পছন্দ করো না, তারপরও আমি তোমাকে জোর করব)
তুমি চুপ করে থাকবে, বাইরে তাকাবে… নীল আকাশের দিকে…
তারপর তুমি হেসে বলবে – “চলো!”
আমরা তোমার গাড়িতে বসবো, আমি ড্রাইভ করবো…
তুমি তোমার ফোন দিয়ে তোমার বসকে মেইল করবা –
“Hi, I need at least 4 week leave, if you don’t allow then consider this mail as my resign letter !”
তারপর তুমি তোমার পরিবারকে কল করে বলবা –
“আমি ইউরোপে যাচ্ছি অফিসিয়াল কাজে।”
যাত্রা শেষে আমরা পৌঁছাবো Wacken Open Air, Germany!
তিন দিন ধরে সব কনসার্ট উপভোগ করবো, পাগলামো করবো…
শেষে তুমি বলবা – “Damn… it was heavy but good!”
জার্মানির কোনো এক রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে করতে
আমি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলবো –
“চলো, এবার গ্রীস, রোম (ইতালি) ঘুরে আসি…
চলো একসাথে দেখি গ্রিক, রোমান সাম্রাজ্য।”
তারপর আমরা যাবো চীন – গ্রেট ওয়াল দেখতে…
তারপর যাবো রাশিয়া, আরো নতুন কিছু আবিষ্কার করতে…
তারপর যাবো নরওয়েতে –
সেখানে দেখবো নর্দার্ন লাইটস (Aurora),
নর্দার্ন লাইটসের নিচে আমি চা খাবো আর নাচব,
তুমি আমাকে নাচতে দেখে হেসে ফেলবে…
এইভাবেই একসময় যাত্রা শেষ হবে…
তুমি ফিরে যাবে আমেরিকায়, আমি বাংলাদেশে।
কিছুদিন পর আমার হার্ট অ্যাটাক হবে…
আমি আইসিইউতে থাকবো…
মৃত্যুর পর আমার মুখে থাকবে এক চিরন্তন হাসি –
কারণ আমি আমার সমস্ত স্বপ্ন পূরণ করেছি –
আমার দেবীর সঙ্গে।
যখন তুমি আমার মৃত্যুর খবর পাবে, তুমি খুব কষ্ট পাবে।
কিন্তু তুমি মনে করবে – আমি একদিন বলেছিলাম,
“আমি চাই তুমি আমাকে সুখের স্মৃতিতে মনে রেখো।”
তুমি হেসে উঠবে…
তবে কিছুক্ষণ পর
আমার আত্মা বুঝবে –
আমি নরকে না, পৃথিবীতেই আছি!
আমি বুঝে যাবো – আমি একটা ডিব্বুক (Dybbuk) হয়ে গেছি।
আর আমার আত্মা তখনও হাসবে,
কারণ আমি তোমার পাশে আছি…
এবং আমি চিরকাল অপেক্ষা করবো –
আমার দেবীর আত্মার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১১:০০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×