somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্ন স্বীকারুক্তি: আমি একজন কাপুরুষ .....

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ১৯৯০ বিক্ষভ এ উত্তাল সারাদেশ। আমি তখন ক্লাস ৪র্থ পডি। স্বৈরাচার কি আর আমের আচার কি? পার্থক্য বুজিনা। কলেজের বড় ভাইদের দেখি এশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। আমিও আমার বন্ধুরা ও না বুঝেই মিছিল করতাম। দেশে গনতন্ত্র আসল। সবাই খুশি আমরাও খুশি। গনতন্ত্র যে কি তা জানতাম না।
তার পর অনেক জল গড়িয়েছে, কিছু কিছু জিনিষ বুঝেছি। গনতন্ত্র যে কি আর স্বৈরাচার কি এ আলোচনায় আমি যাবনা। তবে আমার ছোটবেলায় মানুষের মধ্যে এত ভেদাভেদ দেখিনি, এত বন্যতা দেখিনি।
মানুষের মানুষকে শ্রদ্ধা করত। আমরা চেনাঅচেনা বড়দের সালাম-আদাব দিতাম। আমাদের স্কুলের স্যাররা যদি দেখত বড়দের সালাম দেইনি- কঠিন শাস্হি দিত।
গনতন্ত্র আর যাই করুক, আমি একটা জিনিস দেখেছি, মানুষকে অনেক হিংস্র করেছে, অনেক ভাগে বিভক্ত করেছে।সময়ের সাথে বড় হলাম, আমার চাচা আইনজীবি। সরাসরি রাজনীতির সাথে জরিত। একটা দলের শীর্ষ পদে আছেন অনেক দিন। যেদিন প্রথম কলেজে যাই চাচা আমাকে ফোন করে বলেছিলো-- কোনো রাজনীতিতে জরাবানা। আমি জিজ্স করেছিলাম, আপনারা তো রাজনীতি করেন!! ওনার উত্তর ছিলো -- এজন্যই আমি রাজনীতি কি জানি, সবসময় দূরে থাকবা। আমি সবসময়ই দূরে থেকেছি।
ইন্জিনিয়ারিং কম্পিলট করলাম দেশের এক শীর্ষ ইউনিভার্সিটি থেকে। জবে ডুকলাম। দেশের অনেক শীর্ষ কম্পনীতে ভালো পজিশনেই চাকরি করেছি একসময়।
একসময় আমার বন্ধুরা কেউ ইমিগ্রেশিন কেউ হায়ার স্ট্যাডির জন্য দেশের বাহিরে যেতে শুরু করলো। চাচাকে যেয়ে বললাম, আমিও ফ্যামিলি নিয়ে বিদেশ এ চলে যাব। উনি বললেন যারা দেশে কিছু করতে পারেনা ওরা বিদেশ এ যায়। সবাই বিদেশে গেলে দেশের কি হবে। দেশে থাকো দরকার হইলে ৪/৫ রিক্সা কিনে ভাড়া দাও -- দেশের মানুষের উপকার হবে। আমার বউ ও তাতে সায় দিলো। আমরাও দেশে থেকে গিয়েছিলাম।
১/১১ পরে আমি খুবই আশাবাদী ছিলাম, রাজনীতিতে একটা গুংত পরিবর্তন আসবে। আমি ১৮ বছর হওয়ার পরে বাংলাদেশে ৪ টা ইলেকশান হইছে। ৩ টা তেই আমি ভোটার হয়নি।
১/১১ পরের ইলেকশান এ আমি ভোট দিতে গিয়েছিলাম প্রথম বার, হয়তো ওটাই আমার বাংলাদেশ এ শেষ বার ভোট দেওয়া। তারপর গত কয়েক বছরে যা দেখলাম। আমি আর কোনো আশা খুজে পাইনি। এ সরকার আমার ভোটে নির্বাচিত- এদের যেকোনো কাজ ভালো/মন্দ ---- আমি ইনডারেক্তলি রেসপন্সিবল। নিজেকে খুবই অপরাধি মনে হতে লাগলো।আইন শংখলা পরিষ্হিতি, অপরাদ এতই খারাপ অবষ্হায় গেলো, আর সহ্য হলোনা। চাচাকে যেয়ে বললাম-- এখন আপনি বলেন আমাকে কেনো বিদেশ যাইতে দেননাই? এদেশের ভবিষ্যত কি? উনি বললো অবস্হা দিনদিন আরো খারাপ হবে। আমি আর বাধা দিবোনা যেদেশে পারো চলে যাও।
যখন চাকরি ছাড়তে গেলেম... আমার বস অবাক। তুমি এত ভালো চাকরী ছেড়ে চলে যাবা, তোমার সামনে এত ভালো ভবিষ্যত আছে এখানে, তুমি এদেশে ফুললি সেটেল --- বাড়ি করে ফেলেছো। তুমি আসলে ভূল করছো।
কন্ফিউসড হয়ে গেলাম।
কয়েক দিন সাত পাচ অনেক ভাবলাম, এর পর যেই সাগর-রুনী খুন হলো, আমি বললাম এনাফ ইজ এনাফ। ডিসিশান ইজ ফাইনাল আই আ্যাম লিভিং দিস কান্ট্রি ফর এভার।হ্যা আমি কাপুরুষের মত দেশ থেকে পালিয়ে ছলে এসেছি, নিজের আর নিজের পরিবারের নিরাপত্তা আর ভবিষ্যত এর কথা চিন্তা করে।
যে দেশ আমাকে জন্ম দিলো সে দেশে আমি কোনো অবদান ই রাখলাম না। আমি আসলেই কাপুরুষ।
কিন্তু আমি যখন দেখি একটা নিরিহ ছেলেকে অনেক পশু মিলে কুপিয়ে কুপিয়ে রাজপথে হত্যা করছে মিডিয়ার সামনে। এবং এদের ও কোনো বিচার হয়না। আমি আসলেই দু:খিত আমি আর দেশে ফিরতে চাইনা।
ছোট বেলায় নৌকায় করে নানী বাড়ি যেতাম, নদীর পাডে অনেক শকুন বসে থাকত। গত ১৫-২০ বছর আমি কোনো শকুন দেখিনি!!!! মুরব্বিরা বলত যেদেশে ন্যায় বিচার থাকেনা ঐ দেশে শকুন থাকে না। কথাটা হয় তো সত্য।
আর একটা প্রবাদ শুনেছিলাম-- যে দেশে তেল পানির চেয়ে সস্তা হয়ে যায়, ঐ দেশে নাকি ভদ্র লোকের থাকতে হয় না।
খুবই কষ্ট নিয়ে কথাগুলো লিখলাম। আমি আর কোনোদিন দেশে ফিরব না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:১৮
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×