ভালো লিখতে পারি না। তবে অন্যের লিখা পড়তে ভালোই লাগে। ফেসবুকে নিচের লেখাটা একজন দিছে। ভালো লাগলো তাই আপনাদের সাথে শেয়ার দিলাম:
ভোটের রাজনীতিতে শাহরিয়ার কবীরের চেয়ে হেফাজতের গুরুত্ব অনেক বেশি, ইসলাম-বিরোধী ট্যাগ পেয়ে গেলে আর ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব না, সেটা আম্লীগ ভালই জানে। তাই মুক্তমনা, বদ্ধমনা, বাকস্বাধীনতা যত যা কিছুই বলেন, হেফাজতের কাছে সবারই হার হবে, এটাই গণতন্ত্র, মানলে মানেন, না মানলে ফুটেন। দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত সকলেই সেটা বুঝে, তাই হেফাজতের আন্দোলনকারীদের আ'লীগ-বিম্পি সবাই খাবার সাপ্লাই দেয়।
তবে যেটা লক্ষ করলাম সেটা হচ্ছে যারা বাকস্বাধীনতার চ্যাম্পিয়ন, তারা হেফাজতের বাকস্বাধীনতা সেভাবে চায় না! তাদের গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের অধিকারও চায়না, এমনকি সে প্রতিবাদ অহিংস হলেও না! কেননা হেফাজতিরা সমাজের নিম্নবর্গের মানুষ, তারা নমশুদ্র, অস্পৃশ্য, তারা চলে লোকজনের করুনার টাকায়, তাদের বাকস্বাধীনতা থাকবে কেন?!
আবার শাহবাগের আন্দোলনের সময় যেমন শাহবাগীদের নিয়ে নানারকম কুৎসা রচনা করেছিল জামাত-আমারদেশ, এখন সেই শাহবাগী সমর্থকদের অনেকেই আবার হেফাজতিদের নিয়ে কুৎসা রচনা শুরু করেছেন। কি চমৎকার! মাওলানা শফিকে রাজাকার বা জামাতি ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করছে, যদিও হাটহাজারীর লোক জানে মাওলানা শফি মুক্তিযুদ্ধের সময় পজিটিভ ভূমিকা নিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সেখানে রাজাকার-আলবদরদের ভর্তি হওয়া নিষিদ্ধ ছিল, এমনকি এখনও মাদ্রাসার কোন ছাত্র জামাত-শিবির করলে তাকে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করা হয়। জামাত করার জন্য এক শিক্ষককেও সেখান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সে শিক্ষকের নাম মাওলানা ইলিয়াস, যিনি জামাতের সাথে জড়িত, যে কেউ যাচাই করতে পারেন। মাওলানা শফিসহ কওমী মাদ্রাসার লোকজন ১৯৪০ সালের আগে থেকেই জামাত-বিরোধী, জামাত সৃষ্টিরও আগে মওদুদীর সাথে তাদের ব্যাপক মতপার্থক্য ছিল, আছে। এ বিষয়ে এদের শত শত বই লেখা আছে এবং তাদের অবস্থান কোনদিনই পরিবর্তন হয়নি এ বিষয়ে, আম্লিগ-বিম্পির মত না তারা।
আমি হাটহাজারীর লোক, মাওলানা শফি এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে দেখেই বড় হয়েছি। মাওলানা শফি এমন একজন লোক, যারাই তাঁর কাছে গিয়েছেন, সেটা এমআইটি-তে পড়ালেখা করা লোকও, তারাই তাঁর প্রজ্ঞা, জ্ঞান, সহনশীলতা এবং সরলতায় মুগ্ধ হয়েছেন এবং সারাজীবন তাঁর ভক্ত থেকে গিয়েছেন। এই লোক জীবনে মনে হয় মিথ্যাই বলেন নি, কোন অন্যায়কে নিজের বুঝমতে কোনদিনই সমর্থন দেননি, প্রাগৈতিহাসিক যুগের দরবেশরা যেরকম ছিলেন মাওলানা শফি সেরকম একজন লোক, খুবই প্রচারবিমুখ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় মাওলানা হোসাইন আহমেদ মাদানীর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র এবং খলিফা। ১৯৭১-এ তাঁর সমগোত্রিয় লোকজন পাকিস্তানিদেরকে জালিম এবং বাংলাদেশীদেরকে মজলুম ঘোষণা দিয়েছিলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসায় লংগরখানা খুলেছিলেন এবং সেখানে হিন্দু-মুসলমান সকলেই খাওয়া পেত। পাকিস্তানি বাহিনী বোমা মেরে হাটহাজারী মাদ্রাসার গম্বুজ ভেঙ্গে ফেলেছিল। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করে আশ্রয় নিয়েছিলেন পটিয়া কাওমী মাদ্রাসার এক হুজুরের কাছে, মাদ্রাসার মধ্যেই, এই অপরাধে সেই আলেমকে পাকিস্তানিরা মেরে ফেলেছিল। কওমী মাদ্রাসার লোকজন প্রচারবিমুখ, তাই তারা এসব প্রচার করে না, যদিও বেলাল আহমেদের বইয়ে শেষোক্ত ব্যাপারটা এসেছে। হাটহাজারীতে গিয়ে লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে সবাই জানবে মুক্তিযুদ্ধের সময় মাওলানা শফি সাহেবের ভূমিকা।
আমি হেফাজতিদের এখনকার আন্দোলন সমর্থন করিনা, এমনকি তাদের শিক্ষাব্যবস্থাও সংস্কার করা দরকার মনে করি, কিছুদিন আগেই আমার ফেইসবুকেই কাওমী মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একজনের সাথে অনেক তর্ক করেছি, আমার ফেইসবুক দেখলেই সেটা আপনারা পাবেন, তাদের এই আন্দোলনের টাইমিং-ও আমার পছন্দ না। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় অপপ্রচারের প্রতিবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, যেমনটা করেছিলাম শাহবাগের আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ। কারো অবস্থানের বিরোধী হলে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নাই, কেন সেই অবস্থানের বিরোধী সেটা যুক্তি দিয়ে বললেই হল। যদি কারো অবস্থানকে অযৌক্তিক প্রমাণ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলতে হয়, তাহলে আসলে আপনার নিজের অবস্থানই অযৌক্তিক এবং ভন্ডামিতে পরিপূর্ণ।
সৃষ্টিকর্তা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




