বাংলাদেশ একটি স্বল্প আয়ের উন্নয়নশীল দেশ। এদেশে যেমনি রয়েছে অনেক সম্ভাবনা ও এগিয়ে যাওয়ার দিক তার পাশাপাশি রয়েছে অনেক দূর্নীতিতে তিনতিন বার চ্যাম্পিয়ান হওয়ার মত বিশ্ববিখ্যাত রেকর্ড। তাই এ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের কথা ভাবতে গেলে সর্বপ্রথম যে দিকটির প্রতি দৃষ্টি দিতে হচ্ছে সেটি হল দূর্নীতি।
শুধুমাত্র এ দূর্নীতির জন্য বার বার কৃষককে পাম্পের জন্য বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। পড়ার টেবিলে মোম বাতি নিয়ে শিক্ষার্থীকে বিদ্যুৎ এর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়। বেকার যুবককে বেছে নিতে হয় ছিনতাই, হত্যা,ও খুনের মত জঘন্য কর্মকাণ্ডসমূহ। আজকে গার্মেন্টস্ সেক্টরে শ্রমিক অসন্তোষের জন্য যে সংঘর্ষ-ভাংচুর হয় এর মূলেও রয়েছে দূর্নীতির কালো থাবা। আমাদের দেশের নীতি-নির্ধারনী ফোরাম যে মতামত পোষণ করেন সমাজব্যবস্থা, রাষ্টাব্যস্থা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে তারা যে দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন শুধমাত্র তাই যদি শত ভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় তবে এই দেশ আজ বিশ্বের বুকে তার মজবুত ভিত্তির উপর দাড়িয়ে থাকত দেশের উন্নয়নের পিছনে যে সকল নিয়ামক শক্তি কাজ করে থাকে তা হল ঐ দেশের দারিদ্র্যতা ও মুদ্রাস্ফীতির হার। একটি দেশের অর্থনীতিতে যেখানে দারিদ্রতা ও মুদ্রাস্ফীতির হার সর্বদা বিপরীত থাকার কথা সেখানে বাংলাদেশের একই সাথে দারিদ্রতা ও মুদ্রাস্ফীতি বেডে চলছে লাগামহীন ভাবে যেটি অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি।
বিভিন্ন ধরনের বিশ্ব সংস্থার হিসাব অনুযয়ী সারা বিশ্বে বর্তমানে চরম দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করছে ৪৮ কোটি লোক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে এর পরিমাণ ৪ কোটিরও বেশি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার পরিমাণ ১৬ কোটির উর্ধ্বে। তার মানে মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ বর্তমানে চরম দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে।
তবে তার পূর্বে মুদ্রাস্ফীতির গতি বিধি সম্পর্কে তথ্য দিতে চাই। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য সর্বদা মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারী মাসের দিকে তাকালে দেখা যায় মদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছিল ৯.০৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট আরো প্রকট হলে এটি দুই সংখ্যার কোটায় গিয়ে পৌছাবে।
এবার আসা যাক দারিদ্য্রতার কারণ গুলো খুঁজে দেখার জন্য যে সব ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করতে হবে তার দিকে । বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এদেশের জনগণের বিরাট একটা অংশ কৃষির সাথে জড়িত কিন্তু যে হারে এদেশে জনগণ বাড়ছে তাতে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে একটা বড় সংখ্যায় গিয়ে দাড়াবে। কিন্তু সে হারে বাড়বে না ভুমির পরিমাণ। এ রকম একটা বিরাট জনসংখ্যা জনগণের বার্ষিক খাদ্যের চাহিদা ভবিষ্যতে পূরণ করতে গেলে অবশ্যই অর্থনৈতিক হুমকির মুখে পড়তে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে সংখ্যক কৃষক রয়েছে তার মধ্যে প্রান্তিক কৃষকরা অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।তাদের বর্তমানে বাধ্যতামূলক ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু নিরাশার দিক হল কৃষকরা বিদ্যুৎতের অভাবে সেচ সমস্যার জন্য উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ে।
এবার দৃষ্টি দেয়া যাক শিল্প কারখানার দিকে, বিগত সরকারের আমলে দেখাগেছে যে পাট শিল্পের মত সোনালী শিল্প ধ্বংসের মুখে কারণ, সর্ববৃহত পাটশিল্প কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ফলে শ্রমিক বেকার হয়েছে বেড়েছে দারিদ্রতার হার অথচ এই পাঠ শিল্পের দিকে সরকার সঠিক নজরদারি করতে পারতো তবে এ শিল্প থেকে প্রতি বছর একটি বিশাল অংকের রপ্তানি আয় পেত বাংলাদেশ । দরিদ্র্য মানুষেরা পেত কর্মের সন্ধান। পোশাক শিল্পও এ ঝামেলার বাহিরে নয়। শ্রমিক মালিক অসন্তোষ থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ - ভাংচুর। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মুজুরী ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না পাওয়ার কারণে জন্মœ নিয়েছে এই ক্ষোভের। অথচ মালিক পক্ষের একটু সচেতনা ও নমনীয়তাই পারে পোষাক শিল্পের আগের অবস্থান ধরে রাখতে।
এছাড়াও মালিক পক্ষ যে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন সেটি হল- গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট। যার ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ থাকে কারখানা অনেক শ্রমিক হয়ে পরে বেকার আর এই বেকারত্ব থেকেই যত সব সমস্যা। বাংলাদেশ বেকারত্ব সমস্যার জন্য অন্যতম যে কারণটি রয়েছে সেটি হল পুঁজিবাদি অর্থব্যবস্থায় শুধু মাত্র সমাজের এক শ্রেণীর লোকের হাতে কুক্ষিগত থাকে অধিকাংশ সম্পদ। এ অর্থ সমাজে সঠিক ভাবে সঞ্চালিত হতে পারলে বেকারত্ব ও দারিদ্য্রতা অনেক অংশে কমে আসবে।
বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পারি যে বার্ষিক যে পরিমাণ কর উত্তোলন করার কথা আছে তা যদি সঠিক ভাবে তুলা যায় তবে দারিদ্র্যতা অনেকাংশে লাঘব হত। বিগত বছর গুলোতে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা আমেরিকা থেকে শুরু হয়ে তা বিশ্বায়নের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তৃতীয় বিশ্বের যে সকল দেশ আমেরিকা ও ইউরোপ নির্ভর হয়ে রফতানী কার্যক্রম পরিচালনা করে তারাও এ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এরূপ নির্ভরশীল হওয়া সত্ত্বেও ২০০৯ সালের মহা-মন্দার হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই মন্দা দীর্ঘ হওয়ার কারণে তার প্রভাব যেন বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে যখন এই বিশ্ব আর্থিক মন্দা দিন দিন কমতে শুরু করেছে, বিদেশে আমাদের পণ্যের চাহিদা যখন দিন দিন বাড়ছে, ঠিক তখনই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট আমাদের পঙ্গু করে দিচ্ছে।
এডিবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে গিয়ে ৪ দশমিক ১ শতাংশে দাড়াবে। যা গত বছরে ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এছাড়া শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। তারা এর কারণ হিসাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটকে দেখিয়েছেন। এদিকে ব্যাংকে অলস অর্থের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে বর্তমানে এর পরিমান গিয়ে দাড়িয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে ব্যাংক সচেতনতার জন্য রোড-শো করেও কোন কাজ হয় নি। মানুষ গ্যাস ও বিদ্যুৎ এর অভাবে এ সকল অর্থ তুলছেনা। ফলে অলস অর্থের পরিমাণ আরো বাড়ছে সাথে বাড়ছে বেকারত্ব। যে ভয়ানক বেকারত্বের আভাস বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বৈদেশিক ও দেশি প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন।
এ সকল বিবেচনায় সরকারের উচিত, যে কোন মূল্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ করে রফতানী শিল্পের গতি বৃদ্ধি করা। সাথে সাথে মুদ্রানীতি ঠিক করে অর্থনীতির ভীত মজবুত করা। এটাই বর্তমান সময়ের তীব্র দাবী

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



