somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম_ব্ল্যাক_হোলের_ছবি এবং কিছু কথা

১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্ল্যাক হোল, ব্ল্যাক হোল... হায়রে ব্ল্যাক হোলের জ্বালায় থাকাই যাচ্ছে না। ইন্টারনেটের যেদিকেই যাচ্ছি শুধু ব্ল্যাক হোলের খবর। কিন্তু আসল ঘটনাটা কি যা সবাইকে হঠাৎ জ্যোতির্বিজ্ঞানে এতোটা আগ্রহী করে তুললো? আসলে ২০০ সদস্যের একদল মহাকাশবিজ্ঞানী ১০ই এপ্রিল ২০১৯, বুধবার আমেরিকার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বরের আসল ছবি প্রকাশ করেন। হায়রে হায়!! তাইলে এত্তদিন যা দেখলাম সব মিথ্যা? ইন্টারনেটের সব ছবিগুলা ভাঁওতাবাজি দেখাইলো আমাদের! আর যে ছবিটা প্রকাশ করলো ঐটা তো ব্ল্যাকই না। লাগতেছে গতবছরের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের ছবি এডিট করে বসায় দিছে। হুহ আমরাও চিনি এগুলা এডিট করা যায়। আরে ভাই কালো জিনিসটারে নিয়া এতো লাফালাফির কি আছে? ভালো হইত অন্ধকারের ছবি তুলে চালায় দিলে, অন্তত জাল ছবি থেকে তো ভালো হইতো।
যাইহোক, বলা হচ্ছে এটি একবিংশ শতাব্দীর মহাকাশ বিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত ঘটা বিশাল অর্জন। আমিও ব্যক্তিগতভাবে অনেক বেশি উত্তেজিত ছিলাম আজকের দিনটার জন্য।
#চলুন জেনে নেয়া যাক ব্লাক হোলটি সম্পর্কেঃ
১। নামঃ অস্পষ্ট
২। অবস্থানঃ M87 নামক গ্যালাক্সির কেন্দ্রে(আমাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সি)
৩। দূরত্বঃ পৃথিবী থেকে ৫৪ মিলিয়ন আলোক বর্ষ (যা আমাদের কল্পনাতীত)
৪। ভরঃ সুর্যের ভরের তুলনায় ৬.৫ মিলিয়ন গুণ বেশি
৫) আয়তনঃ আমাদের সৌরজগৎ থেকেও বিশাল


উপরের ছবিটি Event Horizon Telescope এর মূল ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহকৃত। ছবিটির উজ্জ্বল অংশের নাম হচ্ছে Event Horizon- ব্ল্যাক হোলের একমাত্র দৃশ্যমান অংশ। এটি আসলে কি তা নিয়ে এখনো অনেক বহুমত বিদ্যমান রয়েছে, কিন্তু আপাতত আমরা এটিকে উত্তপ্ত প্লাজমা বা আয়নিত গ্যাস বলেই ধরে নেই। মূলত এই Event Horizon এর উজ্জ্বলতার কারণেই বিজ্ঞানীরা অগনীত ব্ল্যাক হোলের মধ্যে এটিকেই বেছে নিয়েছেন।

#কী ভাবে সেই ছবি তোলা সম্ভব হল?
এই ঘটনার পেছনে রয়েছে বিশেষ একটি প্রজেক্টের নিরলস পরিশ্রম যার নাম Event Horizon Telescope Project। আজকের ছবিটি প্রায় ২০ বছরের দুইশ' ওরও বেশি গবেষকদের গবেষণার ফসল। ENT অথবা Event Horizon Telescope হচ্ছে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক প্রয়াস যার একমাত্র মূল লক্ষ্য ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষণা করা। The Event Horizon Telescope (EHT) আসলে কোন একটি বিশাল টেলিস্কোপ না যেটি মহাকাশে অন্যান্য বিভিন্ন বিশাল টেলিস্কোপের সাথে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে। এটি মূলত আমেরিকা মহাদেশ, ইউরোপ এবং এন্টার্ক্টিকা তে অবস্থিত আটটি ভিন্ন ভিন্ন রেডিও টেলিস্কোপের সমন্বয়ে তৈরি একটি বিশাল নেটওয়ার্কিং অ্যারে। EHT র দ্বারা নির্মিত টেলিস্কোপ গুলি স্থাপণ করা হয়েছে চিলি, হাওয়াই, অ্যারিজোনা, মেক্সিকো, স্পেন, এবং এন্টার্কটিকা। প্রতিটি টেলিস্কোপ থেকে জটিল প্রক্তিয়ায় আলাদা আলাদা ভাবে তথ্য সংগ্রহ করার পর সেগুলোকে একত্রিত করে ফাইনাল চিত্র ধারণ করা হয়। অনেক আগেই মহাকাশ বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে ব্ল্যাক হোল থেকে রেডিও ওয়েভ নির্গত হয়। এ পৃথিবী এবং ব্ল্যাক হোল টির মধ্যকার দূরত্ব এত বিশাল হওয়ার কারণে ভিডিও ওয়েভের দৈর্ঘ পৃথিবীতে পৌঁছতে পৌঁছতে কয়েক হাজার গুণ বেড়ে যায় তাই এই সেগুলোকে গুলোকে ধারণ করতে হলে পৃথিবীর আকারের বিশাল একটি টেলিস্কোপ লাগবে। ঠিক এই কাজটিই করে দেখায় EHT। না, চমকে যাবেন না। আপনার অগোচরে পৃথিবীর মধ্যে বিশাল টেলিস্কোপ বানানো হয়নি এবং আপাতত বানানো সম্ভবও না। তবে, আগে যেমনটি আটটি রেডিও টেলিস্কোপ যেগুলো পৃথিবীর নানা প্রান্তে স্থাপন করার কথা উল্ল্যেখ করেছি, সেগুলো এমন সূক্ষ্মভাবে সমন্বয় করা হয় যে, EHT-র মাধ্যমে পুরো পৃথিবী একটি বিশাল টেলিস্কোপএ রূপান্তরিত হয়। টেলিস্কোপগুলো থেকে সংগ্রহকৃত ডাটা এতই বিশাল ছিলো যে, সেগুলো আদিমকালীয় পদ্ধতিতে বিশাল হার্ডডিস্কে সংরক্ষণ করে বিমানে করে মূল তথ্য কেন্দ্রে আনা হয়। এই টেলিস্কোপ অ্যারে দুই সপ্তাহে প্রায় ৫০০০ ট্রিলিয়ন বাইট তথ্য সংগ্রহ করে এবং দুইটি সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে ব্ল্যাক হোলের ছবি চিত্রায়িত করা হয়।


#কেন এত মাতামাতি?
সাইন্স ফিকশন বই এবং ছবি এবং সস্তা সাংবাদিকতায় যেমনটা ব্ল্যাক হোলকে অনেক বিরল ও ভয়ঙ্কর বলা হয় কার্যকরীভাবে তা কিন্তু সত্যি না। বিজ্ঞানীদের ধারণা শুধুমাত্র আমাদের গ্যালাক্সিতে প্রায় ১০০ মিলিয়নেরও বেশী ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু চিন্তার কোন কারণ নেই পৃথিবী কিংবা আমাদের সৌরজগতের ধারে কাছে এখনো পর্যন্ত কোন ব্ল্যাক হোলের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি, তাই আমরা নিরাপদ। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে যদি, সহস্য অজস্র ব্ল্যাক হোল থাকা সত্ত্বেও আমরা এতদিন কেন এর ছবি তুলতে সক্ষম হলাম না অথবা এই সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পারলাম না। তার কারণ হচ্ছে মহাবিশ্ব সম্পর্কিত যা কিছুই আমরা আবিষ্কার করি তার একদম মূলে হাতিয়ার হচ্ছে আলো। আলোর বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে আজ মহাকাশ বিজ্ঞান এতোটা অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু ব্ল্যাক হোলের কাহিনী সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর ভেতর পদার্থ বিজ্ঞানের কোনো সূত্র কিংবা তত্ত্ব কাজ করে না। ব্লাক হোল পদার্থ বিজ্ঞানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তার নিজের মতো মহাকাশ শাসন করে। আর এই অনুরূপ কারণে আমরা Dark Matter ও Dark Energy সম্পর্কে খুব একটা জানি না, যদিও এদের দ্বারাই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব। তাই, এই এই আবিষ্কারের মাধ্যমে আমাদের সীমাবদ্ধতা কিছুটা হলেও ঘুচলো।

#এটাও কি কোন ভাঁওতাবাজি?
এক কথায় এর উত্তর হলো না। এতদিন থেকে সস্তা মিডিয়া এবং ভুল শোনে আমাদের এমনই অবস্থা হয়েছে যে, আসল কিছু আবিষ্কার হলে আমরা তা পাত্তা দেই না। প্রকৃত অর্থে এটি আসলে ব্লাক হোলের একদম বাস্তব প্রতিচ্ছবি নয়। এটি আসলে সেই সকল বস্তুর দ্বারা প্রফলিত আলোক রশ্মি যেগুলো ব্ল্যাক হোলের ভেতর প্রবেশ করছে। তবে কেনো আমরা "ব্ল্যাক হোলের" ছবি তূলতে পারলাম না?? এর একটিই কারণ আর তা হচ্ছে এটি কালো আর কালো ব্যাকগ্রাউন্ড এর উপর কালো ছবি তোলা এমনইতেই সম্ভব না। তবে উপরের ছবিতে আমরা শুধুমত্র যে জিনিসটা দেখতে সক্ষম হয়েছি তা হচ্ছে EVENT HORIZON. ইভেন্ট হরাইজন- কে বাংলায় অনুবাদ করলে হয় 'ঘটনা দিগন্ত' আর যেকোনো কিছু এই ইভেন্ট হরাইজন অতিক্রম করলেই ব্ল্যাক হোল তাকে গ্রাস করে ফেলে। ব্ল্যাক হোলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতই প্রচন্ড যে তার হাত থেকে কোন কিছুই - এমনকি আলোর রশ্মিও পালাতে পারে না। ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা অনেকটাই ঘরের কাপড়ের আলমারির ছবি তোলার সাথে তুলনা করা যায়। আপনি দরজা দেখতে পারবেন, কিন্তু ভেতরে প্রকৃত অর্থে কি আছে এ নিয়ে কোন ধারণা নেই আপনার। আর এই আলমারির সবথেকে ভয়ঙ্কর দিক হলো কোন কিছুই এই আলমারির ভেতর থেকে কোনো ভাবে, কোনো কালেই পালিয়ে বাইরে আসতে পারবে না। এখন মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অস্ত্রাগার নতুন আরেকটি প্রযুক্তি যুক্ত হলো। আশা করা যায় ধীরে ধীরে অন্যান্য ব্লাক হোল গুলোর ও রহস্য উত্ঘাটন হবে। EHT এর পরবর্তী লক্ষ্য আমাদের গ্যালাক্সি- Milky Way যাকে আমরা আকাশ গঙ্গা নামেও চিনি। মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিশাল ব্ল্যাক হোল যাকে কেন্দ্র করে পুরো গ্যালাক্সি এবং এর ভিতরের তারা, গ্রহ ইত্যাদি আবর্তিত হয়। মিল্কিওয়েও এর ব্যতিক্রম নয়। এ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে Sagittarius A* নামক একটি ব্ল্যাক হোল। আশা করা যায় EHT অতি শীঘ্রই আমাদের নিজের গ্যালাক্সির ব্ল্যাকহোলের রহস্য ভেদ করতে সক্ষম হবে।


টেলিস্কোপগুলোর অবস্থান
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:২৯
১৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×