আমি ও এমনটাই মনে করি, তাই আর্কিটেক্ট না হয়ে ডাক্তার হয়েছিলাম!
# # একজন বাংলাদেশী চিকিৎসক আমেরিকান বিজ্ঞানী ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন নিচের লেখাটি। মুগ্ধ হয়েছি তাই শেয়ার করলাম। # #
--- --- ---- ---- -------- ------- -------- -------
মেডিসিন এ্যজ এ প্রফেশন:
এ ডিভাইন পাথ টু প্যারাডাইজ
**************************
হামীম ইবনে কাওছার
এমডি, পিএইচডি, এফএসিপি
হেমাটোলজিস্ট এন্ড অনকোলজিস্ট
মেরিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ।
________________
ডিজক্লেইমার: আমাকে অনেকে দীর্ঘদিন অনুরোধ করেছেন যে নবীন চিকিৎসকদের জন্য লিখতে । আমি সময় পাই না, তাই লেখা হয় না। লেখাটি তাদের জন্য যারা তরুণ চিকিৎসক। যারা মনে করেন মানুষকে ভালোবেসে তারা এই পেশায় এসেছেন। যারা মনে করেন স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ হবে তার সৃষ্টিকে ভালোবেসে। এই লেখাটি শুধু তাদের জন্য ।
(১)
আমরা সবাই জীবনে কয়েকটি জিনিস চাই। যেমন: ভালোমন্দ বোঝার জ্ঞান চাই,মানুষকে সাহায্য করার যোগ্যতা চাই।কিছুটাক্ষমতা চাই, যথেষ্ঠ অর্থ-সম্পদ চাই। মান-সন্মান-পরিচিতি-স্বীকৃতি চাই। সবশেষে, স্রষ্টার সান্নিধ্য এবং কৃপা চাই।
এই লেখার মাধ্যমে আমি চেষ্টা করবো যে শুধু ডাক্তার হয়েই আপনি এর সব কিছু কি ভাবে পেতে পারেন। প্রথমত: এই পেশায় আসার জন্য আপনাকে যথেষ্ঠ পরিশ্রম করতে হয়েছে। বিজ্ঞান পড়তে হয়েছে। পদার্থ- রসায়ন-জীববিজ্ঞান পড়তে হয়েছে। এগুলো পড়তে যেয়ে আপনি চিন্তাশীল হয়ে উঠেছেন, স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব করতে শিখেছেন। আপনি বুঝতে শেখেছেন যে কিভাবে সাইনু- এট্রিয়াল নোড স্বতঃর্স্ফূর্তভাবে একশন পটেনশিয়াল তৈরি করে, কিভাবে প্রপাগেট করে, কিভাবে রিফ্র্যাক্টরি পিরিয়ড পরের ইলেক্ট্রিক্যাল ঢেউকে প্রতিরোধ করে। কিভাবে সিঙ্গল নিউক্লিওটাইড ভ্যারিয়েশন আপনাকে অন্যদের থেকে ভিন্ন মানুষ বানিয়েছে, প্রায় ৯৯% জিনোমিক ইনফরমেশন একই হওয়ার পরও!
(২)
ডাক্তারি পড়তে যেয়ে আপনি শিখেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটিও কিভাবে বিছানায় পড়ে থাকে আপনার হাতের স্পর্শ পাবার জন্য। কেবিনে আপনি এসে দেখবেন এই অপেক্ষায়। যে জেনারেল দুইদিন আগেও রিমোট চেপে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ মেরে ফেলতে পারতো, বয়সের ভারে আজ সে হামাগুড়ি দিয়ে টয়লেটে যায়, আর স্রষ্টার সান্নিধ্য খোঁজে আপনার চিকিৎসায়। আপনার ক্ষমতা কি তাহলে জেনারেলের চেয়ে বেশি নয়? কাউকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে আসাকে ক্ষমতা বলে না, তাকে বলে ক্ষমতার অপব্যবহার।সত্যিকারের ক্ষমতা আপনার হাতে, যার হাতে স্রষ্টা দিয়েছেন "অক্ষম" ক্ষমতাবানের চিকিৎসা করার ক্ষমতা! আপনি কি এই ক্ষমতায় সন্তুষ্ট নন? না কি এখনো বন্দুকের নল, বারুদের গন্ধ আর টাকার বান্ডিলকে আপনার ক্ষমতা মনে হয়?
(৩)
পৃথিবীর কোন পেশায় আপনি মানুষের দোয়া পেতে পারেন? আপনি একজন ব্যাথায় কাতর মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন। টাকা বা ক্ষমতা কি তা পারে? অন্য কেউ কি তা পারে? স্রষ্টাকে আপনি কিভাবে পাবেন? পিন পতন নীরবতার একাকী তাহাজ্জুদের সিজদায়? পিন পতন নীরবতায় হাসপাতালের বিছানায় মৃতপ্রায় শিশুর জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টায়? আপনার প্রার্থনা তো স্রষ্টা কবুল না-ও করতে পারেন, কিন্তু আপনার জন্য অন্যের দোয়া তো স্রষ্টা কবুল করবেন। কাদের দোয়া স্রষ্টা দ্রুত কবুল করেন? একজন রুগীর, আপনার পিতা- মাতার, একজন রোজাদারের, আপনার অনুপুস্থিতিতে আপনার প্রশংসাকারীর,একজনমুসাফিরের । একজন রুগী দিয়ে শুরু করুন। আপনার আচার আচরণ, ব্যবহার, চিকিৎসা যদি একজন রুগীর পছন্দ হয়, আপনি তার দোয়ায় পাত্র হবেন। সাথে সাথে হবেন আপনার অনুপস্থিতিতে তার পরিবার-পরিজনের প্রশংসার। আর তা যদি স্রষ্টা কবুল করেন, তবেই তো আপনি মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠ। আর যার প্রতি স্রষ্টা সন্তুষ্ট, তিনিই হলেন প্রকৃত ক্ষমতাধর। কারণ, তিনি স্রষ্টার কাছ থেকে যা চাইবেন, তার জন্য সেটা উত্তম হলে স্রষ্টা সেই চাওয়া পূরণ করবেন।
(৪)
কিভাবে রুগী দেখবেন? তার কি কোনো প্রশিক্ষণ আছেআমাদের ? কিভাবে রুগীর দোয়া এবং সন্তুষ্টি পাবেন? আমি পেশার জন্য ডাক্তারি করি না। আমার "পেশা" শিক্ষকতা, ছাত্র-ছাত্রী পড়ানো। আমার "নেশা" গবেষণা করা। আর, আমার "শখ" হলো ডাক্তারি করা। আমার বর্তমান বেতনের চেয়ে দ্বিগুন বেতনের চাকুরী আমি ছেড়ে দিয়েছি আমি ডাক্তারীকে পেশা হিসেবে না নিয়ে,ডাক্তারীকে শখ হিসেবে নেয়ার জন্য। কেন আমি ডাক্তারীকে আমার "শখ" বলি? শখের জিনিসে মায়া থাকে, ভালোবাসা থাকে। আমি ডাক্তারি করি ভালোবেসে। জীবনযাপনের জন্য না। আমি মানুষকে ভালোবেসে ডাক্তারি করি। আমি আমার রুগীকে দাঁড়িয়ে সন্মান জানাই সে যত গরীব-ই হোক না কেন! আমি আমার চেয়ে বয়সে বড় রুগীকে বিনয়ের এবং সম্মানের সাথে দেখি। আমার রুগীদের আমি "রুগী" বলি না। আমি তাদের "মানুষ" বলি। রুগী আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য আছে। নিরপরাধী মানুষকে অপরাধ প্রমান হবার আগ পর্যন্তও থানায় বা জেলে তাকে আসামি বলা হয়। আসামি মানে অপরাধী? আমাকে কেউ দেখতে আসলেই সে রুগী? আমার যখন হাঁটুতে ব্যাথা হয়, তখন আমি রুগী? আমি মানুষ না? আমি তখন শিক্ষক না? আমি তখন ডাক্তার না? আপনি যাদের চিকিৎসা করেন, সবার আগে মনে করবেন তারা মানুষ। "রুগী" মনে করা মানে আপনি তাদের ডাউনগ্রেডিং করছেন, তাদের সাহার্যপ্রার্থী মনে করছেন, অসহায় মনে করছেন? তাদের মানুষের চেয়ে কম মনে করছেন? স্মলার দ্যান হিউম্যান?
(৫)
প্রায়শঃই আমার অফিসে রুগী ক্লান্ত থাকলে আমি নিজে হাতে করে পানি এনে তাদের খাওয়াই। তারা হুইল চেয়ারে করে আসলে আমি নিজে হাতে তাদের হুইল চেয়ার ঠেলে যতদূর প্রয়োজন পৌঁছে দেই। আমি চাইলেঅন্যদের দিয়ে করাতে পারতাম। তাহলে আমি কেন করি? উদাহরণ দেই: আপনি যখন ক্লাসে যান তখন শিক্ষক প্রশ্ন করলে অন্য অনেকে উত্তর দিতে পারলেও আপনি সবার আগে দাঁড়িয়ে কেন উত্তর দিতেন? আপনার শিক্ষক তো আপনার কাছে জিজ্ঞেস করেন নি, তিনি করেছেন পুরো ক্লাস কে! আপনি উত্তর দিতেন কারণ আপনি আপনার শিক্ষককে দেখাতে চেয়েছেন যে আপনি পড়াশুনা করেন, দেখাতে চেয়েছেন আপনি ভালো ছাত্রী। এতে কি লাভ হয়েছে? পরীক্ষার সময় আপনি একটি প্রশ্নের উত্তর না পারলে আপনার শিক্ষক আপনার সাহার্যে এগিয়ে এসেছেন । তিনি জানেন যে আপনি ভালো ছাত্রী ছিলেন। আপনার দুঃসময়ে তিনি সাহার্যের হাত বাড়িয়ে দিযেছেন। শেষ বিচারের দিন আপনার যখন পুণ্যে ঘাটতি পড়বে, আপনি তখন স্রষ্টার কাছে এই কাজের বিনিময় চাইতে পারেন।
আমার রুগী আমার স্রষ্টাকে পাবার উছিলা। আমি আমার রুগীর পায়ের কাছে পড়ে থাকি। আমার জন্য তার যে কোনো দোয়া আমার স্রষ্টা কবুল করে নেবেন অনায়াসে। আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে নিয়ে তাদের প্রশংসা পৌঁছে যাবে আমার স্রষ্টার আরশে যেখানে না ও পৌঁছাতে পারে আমার নিজের জন্য নিজের দোয়া! আপনি রুগীকে চিকিৎসা এমন ভাবে দিবেন, তাকে এমন ভাবে খুশি করবেন যে তিনি-ই আপনাকে আপনার স্রষ্টার সান্নিধ্য পাইয়ে দেবেন। রুগী দেখে আপনি কি চান- টাকা না স্রষ্টার সান্নিধ্য? স্রষ্টার সান্নিধ্য পেলে আপনার কি হবে? আপনি হবেন ইহজগত এবং পরজগতের সম্মানিত মানুষ। সন্মান আমাদের কে দেয়? সন্মান দেয়ার মালিক কে? তাকে কি আপনি চেনেন?
(৬)
আপনি কি টাকা কামাইয়ের জন্য ডাক্তারি করেন? আমি আমেরিকায় অনেক কোটিপতি ডাক্তারকে দেখেছি রুগী না দেখেও ইন্সুরেন্স কোম্পানিকে বিল পাঠিয়ে দেয়। নিজের চোখে দেখেছি। দেশি-বিদেশী সব ডাক্তারই দেখেছি। আমেরিকার অনেক কোটিপতি ডাক্তারের উপার্জন হারাম। বাংলাদেশী ডাক্তারও এই কারণে জেলে আছেন আমেরিকায়। আমার সাথে কাজ করা একজন আমেরিকান কার্ডিওলজিস্ট এখন ২২ বছরের জেল খাটছেন। আকাশচুম্বী জনপ্রিয় এক অনকোলজিস্ট বাকি জীবন জেল খাটছেন এই কারণেই। আপনি কি রুগীর চিকিৎসা না করেই ভিজিট নিচ্ছেন অথবা যা ভিজিট হবার কথা তার চেয়ে বেশি নিচ্ছেন ? আপনার উপার্জন কি হালাল? উপার্জন হালাল না হলে বাকি সব কিছুই তো বৃথা। সবকিছুই! আপনার সময় নষ্ট করে আর কোনো কিছু করার দরকার নেই, কারণ তার ফল হবে শূন্য ! এ টা কি আমার কথা ?
(৭)
হালাল অর্জন থেকে ছাদাকা দিবেন। যা পারেন তাই দিবেন। এক টাকা হলেও দিবেন। কোনো সাহার্যপ্রার্থী যেন খালি হাতে না যায় আপনার কাছ থেকে। আমি একটা কাজ করি। আমি গত পনেরো বছরে যখন যে মসজিদে জুমার নামাজ পড়ি, সেখানে যদি দেয়ার ব্যবস্থা থাকে, আমি সেখানে ২০ ডলার দান করি। সব মসজিদে। প্রতি শুক্রবারে। আমার জ্ঞানত: এর ব্যতিক্রম হয় নি গত পনের বছরে। কেন করি? আমার নিজের জন্য করা দোয়া স্রষ্টার কাছে না-ও পৌঁছাতে পারে, কিন্তু এই মসজিদে গুলোতে যারা নামাজ পড়েন, তাদের কোনো একজনের দোয়া কবুল হলেই আমার হবে। আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে শক্ত পরীক্ষার দিনে মা তার সন্তানকে চিনবে না, সন্তান তার বাবাকে চিনবে না, সেই দিন এই কুড়ি ডলার আমাকে বাঁচিয়ে দেবার জন্য সুপারিশ করবে, ইনশাআল্লাহ। পৃথিবীর কোথাও পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য অনালাইনে আমার কাছে কোনো অনুরোধ আসলে আমি সামর্থমত অনুদান দেই। কেন দেই? যেদিন এক ফোটা পানির জন্য মানুসের বুকের ছাতি ফেটে যাবে, আমি ধ্রুবভাবে বিশ্বাস করি আমার অনুদান এই পৃথিবীতে অন্যের তৃষ্ণা নিবারণ করেছে, যেদিন আমি তৃষ্ণার্ত থাকবো, এই অনুদান সেদিন আমার তৃষ্ণার নিবারণ করবে, ইনশাআল্লাহ।
(৮)
নবীন চিকিৎসক!
আপনি জীবনের প্রথমে হালাল উপার্জন কি তা বুঝবেন। আপনার উপার্জনে হারাম মেশাবেন না। নিয়ত ঠিক করবেন। রুগীকে মানুষ মনে করবেন। আপনার রুগী শুধু আপনার রুটি-রুজির উছিলা না, তিনি আপনাকে আপনার স্রষ্টার সান্নিধ্য পাইয়ে দিতে পারেন। তিনি আপনার স্বর্গের উছিলাও হতে পারেন, যদি আপনি তার কাছ থেকে দোয়া নিতে পারেন। সেই দোয়ার জন্য তার পায়ের কাছে পড়ে থাকবেন। রুগীর দোয়া স্রষ্টা কবুল করেন। কিন্তু, আপনারা যেয়ে পড়ে থাকেন খানকা শরীফে। খানকা শরীফে যিনি শুয়ে আছেন, তার দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন- এমন কথা কি স্রষ্টা বলেছেন? আপনি তো হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলে ভুল জায়গায় যেয়ে হামাগুড়ি দেন।
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জিনিস শিখবেন:
হালাল অর্জন করবেন, জনকল্যানে গাছ লাগাবেন, মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের ব্যবস্থা করবেন, রুগীর পায়ের কাছে পড়ে থাকবেন। আপনার স্রষ্টা আরশ থেকে নেমে এসে আপনার মধ্যেই বাস করবেন,আপনার চাইতে দেরি হতে পারে, পাইতে দেরি হবে না, ইনশাআল্লাহ।
**********