মাংকিপক্স কি?
মাংকিপক্স একটি ভাইরাস যা মাংকিপক্স নামক রোগ সৃষ্টি করে। ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম ড্যানিশ ল্যাবরেটোরিতে বানরের মধ্যে এই ভাইরাস টি আবিস্কার করা হয়। এটি একটি ভাইরাস যা পশু থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করে যার উপসর্গসমূহ অনেকটা গুটিবসন্তের মতই। এর সাধারণত দুটি ধরন রয়েছে একটি পশ্চিম আফ্রিকান অপরটি মধ্য আফ্রিকান। মধ্য আফ্রিকান ধরন আক্রান্তে মৃত্যু ঝুকি (১০.৬%) যা তুলনামূলক ভাবে বেশী ঝুকিপূর্ন পশ্চিম আফ্রিকান (৩.৬%) ধরনের চেয়ে। মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস এর সংক্রমণ শনাক্ত হয় সর্বপ্রথম ড্যামোক্রাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে ১৯৭০ সালে।
ইতিপূর্বে মাংকিপক্স এর রোগী পাওয়া যায়নি এমন ১২ টি দেশে সম্প্রতি ৯২ টি কেস শনাক্ত করা হয়েছে। যার ফলে জনস্বাস্থ্য বিশেষোজ্ঞরা এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন । অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে এসব কেস শনাক্ত করা হয়েছে যার সবকটিই পশ্চিম আফ্রিকান ধরন এর।
এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ এর পর রোগের লক্ষন প্রকাশ পেতে ৫ থেকে ২১ পর্যন্ত সময় লাগে। মাংকিপক্স সাধারণত নিজ থেকেই সেরে যায় অর্থাৎ লক্ষন প্রকাশের পর ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে রোগী ধীরে ধীরে নিজে নিজেই সুস্থ হয়ে উঠে। এই রোগের উপসর্গ সমূহ সাধারনত মৃদু আকারে প্রকাশ পায়, তবে ক্ষেত্র বিশেষে শিশু, গর্ভবতীদের জন্য তা মারাত্নক আকারেও রুপ নিতে পারে। আক্রান্ত রোগীর শরীরে এই ভাইরাস যে ক্ষতের সৃষ্টি করে তা খুব বেশী ব্যাথা এবং চুলকানির কারন হতে পারে।
মাংকিপক্স এর লক্ষন বা উপসর্গ সমূহ-
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মাংকিপক্স এ আক্রান্ত হলে মুখে, হাতে, পায়ে এবং যৌনাঙ্গের আশে পাশে ফোস্কা সংগে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
সম্প্রতি মাংকিপক্স ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাবে যৌনাঙ্গ এবং পায়ুপথের আশে পাশে ফুসকুড়ি সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য করা গেছে।
ফুসকুড়ির সাথে আরও যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে-
• জ্বর।
• অবসাদগ্রস্ততা।
• মাথাব্যথা।
• ভীষন দুর্বল অনুভব করা।
• সারা শরীরে এবং মাংসপেশীতে ব্যাথা।
• লসিকাগ্রন্থি বা লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া।
মাংকিপক্স এর উপসর্গ প্রকাশ হলে আক্রান্ত ব্যক্তি ছোঁয়াচে অর্থাৎ এক জন থেকে অন্য আরেকজনে এ রোগ ছড়াতে পারে।
যেভাবে মাংকিপক্স ছড়ায় –
সাধারণত মাংকিপক্স মানুষ থেকে মানুষে খুব সহজেই ছড়ায় না। কিন্তু আক্রান্ত পশু/ব্যাক্তির সাথে সরাসরি সংস্পর্শ এবং শরীরে থাকা ক্ষত, ফোসকার সংস্পর্শে এ রোগ এক জন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে।
• হাচি, কাশি, থুতু কিংবা দীর্ঘক্ষন মুখোমুখি আলাপচারিতার ফলেও মাংকিপক্স ছড়াতে পারে।
• আক্রান্ত ব্যাক্তির ব্যবহৃত জামা কাপর বা বিছানা, ব্যবহারের ফলেও এ রোগ ছড়ায়।
• মাংকিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে যৌন মেলামেশার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
মাংকিপক্স এ আক্রান্ত ব্যাক্তির যা করনীয় –
কারো শরীরে যদি ফুসকুড়ি এবং সাথে জ্বর, অবসাদ্গ্রস্ততা কিংবা অস্বাভাবিক দুর্বলতা দেখা দেয় তাহলে তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে মাংকিপক্স ভাইরাসের পরীক্ষা করাতে হবে। মাংকিপক্স ভাইরাস এ সাস্পেক্টেড অথবা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের কে অবশ্যই শরীরের ফুসকুড়ি ঝড়ে যাওয়া পর্যন্ত আলাদা অবস্থান করতে হবে। সকল প্রকার যৌন মেলামেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। মাংকিপক্স রোগের প্রকোপ কমাতে চিকিৎসকের দেওয়া পরামর্শ মেনে চলতে হবে। আক্রান্ত ব্যাক্তির সেবাদানকারীকে অবশ্যই যথাসম্ভব নিজেকে সুরক্ষার কলাকৌশল অবলম্বন করতে হবে।
মাংকিপক্স প্রতিরোধে করনীয় –
মাংকিপক্স ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো যথাযথ ভাবে মেনে চলার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা বিশেষ ভাবে নির্দেশ করেছে-
• মাংকিপক্স এর উপসর্গ রয়েছে এমন যে কারো সাথে খুব কাছাকাছি থেকে কথা বলা এবং শারিরীক সংস্পর্শ পরিহার করা।
• সবসময় হাত পরিস্কার রাখা।
• যথাসম্ভব যৌন মেলামেশা এড়িয়ে চলা, বিশেষ প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার করা।