somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ডঃ রুহুল আমিন চৌধুরী।
স্বাধিনতার শত সহস্র, লক্ষ কোটি “সুফল" - কিন্তু একটি মাত্র “কুফল” - দেশের নিতি নির্ধারণে অযোগ্য লোকেরা সব উচ্চাশনে - রাজনিতিতে ও প্রশাসনে - ফলে দেশটি যথাযথভাবে উন্নতিতে আগাতে পারছে না।তারপরেও যেটুকু এগিয়েছে, অধিকাংশ সাধারণের ব্যক্ত

০৩ নভেম্বর চার নেতা হত্যা দিবস – জেল হত্যা দিবস -

০৩ রা নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জেল হত্যা দিবস: ০৩ নভেম্বর ১৯৭৫ খৃ: কারাগারের ভেতর জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলি ও এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামানকে যেভাবে খুন করা হয় -
০৩ নভেম্বর ১৯৭৫ খৃ: মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটি পিকআপ এসে থামে।
তখন রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে দুইটা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় সে গাড়িতে কয়েকজন সেনা সদস্য ছিল।
ঢাকা তখন এখন অস্থিরতার নগরি। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থান নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে তখন।
সে সময় ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন আমিনুর রহমান।
রাত দেড়টার দিকে কারা মহাপরিদর্শক টেলিফোন করে জেলার মি. আমিনুর রহমানকে তাৎক্ষনিকভাবে আসতে বলেন।
দ্রুত কারাগারের মূল ফটকে গিয়ে মি. আমিনুর রহমান দেখলেন, একটি পিকআপে কয়েকজন সেনা সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় আছে।
মূল ফটকের সামনে সেনা সদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটি কাগজ দিলেন।
সেখানে কী লেখা ছিল সেটি অবশ্য জানতে পারেননি মি. আমিনুর রহমান।
মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাম দিকেই ছিল জেলার আমিনুর রহমানের কক্ষ। তখন সেখানকার টেলিফোনটি বেজে উঠে।
মি. আমিনুর রহমান যখন টেলিফোনের রিসিভারটি তুললেন, তখন অপর প্রান্ত থেকে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন।
২০১০ সালে বিবিসি বাংলার কাছে সে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মি. রহমান বলেন, "টেলিফোনে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবে আই.জি.পি. সাহেবের সাথে। তখন আমি দৌড়ে গিয়ে আই.জি.পি. সাহেবকে খবর দিলাম। কথা শেষে আই.জি.পি সাহেব বললেন যে প্রেসিডেন্ট সাহেব ফোনে বলছে আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা কর।"
মূল ফটকের সামনে কথাবার্তার চলতে থাকে। এক সময় রাত তিনটা বেজে যায়।
আমিনুর রহমান বলেন, এক পর্যায়ে কারাগারে থাকা তৎকালিন আওয়ামি লিগের চার জন নেতাকে একত্রিত করার আদেশ আসে।
কারা মহাপরিদর্শক একটি কাগজে চার ব্যক্তির নাম লিখে জেলার আমিনুর রহমানকে দিলেন।
সে চারজন হলেন - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলি এবং এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান।
আমিনুর রহমানের বর্ণনা অনুযায়ি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দিন আহমদ কারাগারের একটি কক্ষে ছিলেন।
ক্যাপ্টেন মনসুর আলি এবং এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামানকে অপর কক্ষ থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আসার আগে ক্যাপ্টেন মনসুর আলি কাপড় পাল্টে নিলেন।
মি. আমিনুর রহমানের বর্ণনা করেন, "তাজউদ্দিন সাহেব তখন কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। ওনারা কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করলেন না আমাদের কোথায় নেও (নেয়া হচ্ছে) ? সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব হাত-মুখ ধুলেন। আমি বললাম আর্মি আসছে।"
চারজনকে যখন একটি কক্ষে একত্রিত করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগার কারণে সেনাসদস্যরা কারা কর্মকর্তাদের নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করছিল, বলছিলেন মি. আমিনুর রহমান।
"মনসুর আলি সাহেব বসা ছিল সর্ব দক্ষিণে। যতদূর আমার মনে পড়ে। আমি মনসুর আলির 'ম' কথাটা উচ্চারণ করতে পারি নাই, সঙ্গে সঙ্গে গুলি," বলেন মি. রহমান।
কারাগারের ভেতর এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর চার নেতার পরিবার সেদিন জানতে পারেননি।

শেখ মুজিব হত্যার সাথে চার নেতা হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র আছে বলে মনে করা হয়।
তাজউদ্দীন আহমদের পরিবার কারাগারের খোঁজ নেবার জন্য সারাদিন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
পরের দিন অর্থাৎ ০৪ নভেম্বর ১৯৭৫ খৃ: পুরনো ঢাকার এক বাসিন্দা তাজউদ্দিন আহমদের বাসায় এসে জানান যে তিনি আগের দিন ভোরে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে গুলির শব্দ শুনেছেন।
প্রয়াত তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি ২০১০ খৃ: বি.বি.সি. বাংলাকে বলেন, ০৪ নভেম্বর বিকেল চারটার দিকে খবর আসতে শুরু করলো তাজউদ্দিন আহমদসহ চারজন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।
১৯৭৫ খৃ: ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানকে প্রায় সপরিবারে হত্যার ঘটনার সাথে জেল হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র আছে বলে মনে করা হয়।
তখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে লে. কর্নেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন আমিন আহমেদ চৌধুরী, যিনি পরবর্তীতে মেজর জেনারেল হয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে মারা গেছেন মি. আমিন আহমেদ চৌধুরী।
২০১০ খৃ: তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, তখন সেনাবাহিনীতে নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েনের পরিণতি ছিল জেলখানার হত্যাকাণ্ড।
১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের বিপরিতে পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থান হয়েছিল ০৩ নভেম্বর।
সেটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ।
আমিন আহমেদ চৌধুরীর মতে, ০৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানটি ছিল অনিবার্য।
কারণ শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছয়জন জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা তখন বঙ্গভবনে বসে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাককে পরিচালনা করছিলেন।
শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছয়জন জুনিয়র সামরিক কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনির চেইন অব কমাণ্ডের আওতায় আনার জন্য ০৩ নভেম্বর খালেদ মোশারফের নেতৃত্ব অভ্যুত্থান হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন জেনারেল আমিন আহমেদ চৌধুরী।
তাছাড়া শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডকেও তাঁরা মেনে নিতে পারছিলেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কিন্তু খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে সে অভ্যুত্থান সেনাবাহিনীর ভেতরে আবারো চেইন অব কমাণ্ড ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বলে মনে করেন জেনারেল আমিন আহমেদ চৌধুরী।
খালেদ মোশারফের অনুগত সৈন্যরা বন্দি করে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে।
ঢাকা সেনানিবাসে যখন এ অবস্থা চলছিল সে সময় পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে জেলখানায় আওয়ামি লিগের চারজন সিনিয়র নেতাকে হত্যা করা হয়।
পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকেই হত্যাকারি সেনা কর্মকর্তারা পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের আশংকায় ছিল।
সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
একদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ।
তখন ঢাকা সেনানিবাসে মেজর পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন বর্তমানে বিগ্রেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি এসব ঘটনাপ্রবাহ বেশ কাছ থেকে দেখেছেন। তার সে অভিজ্ঞতা নিয়ে মি. বিগ্রেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন একটি বই লিখেছেন 'বাংলাদেশ রক্তাক্ত অধ্যায়: ১৯৭৫-৮১' শিরোনামে।
শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা তখন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদকে পরিচালনা করছিলেন।
ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বঙ্গভবনের থাকা সেনা কর্মকর্তাদের সাথে একটা সংঘাত চলছিল সেনানিবাসের উর্ধ্বতন কিছু সেনা কর্মকর্তাদের সাথে।
"খন্দকার মোশতাক যে বেশিদিন ওখানে টিকবেন না, এটাও ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছিল। তখন আবার সিনিয়র অফিসারদের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল," বলছিলেন ব্রিগেডিয়ার হোসেন।
শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ধারনা করেছিলেন যে কোন পাল্টা অভ্যুত্থান হলে সেটি আওয়ামি লিগের সমর্থন পাবে। সে ধরনের পরিস্থিতি হলে কি করতে হবে সে বিষয়ে মুজিব হত্যাকারি সেনা কর্মকর্তারা কিছুটা ভেবেও রেখেছিলেন।
তিনি বলেন, "ঐ ধরনের ক্যু হলে তখনকার আওয়ামি লিগে যাতে কোন ধরনের লিডারশিপ না থাকে সেটাই তারা বোধ হয় নিশ্চিত করেছিল।"
হত্যাকারি সেনা কর্মকর্তারা ভেবেছিল যদি সে চারজন রাজনিতিবিদকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে পাল্টা অভ্যুত্থান হলেও সেটি রাজনৈতিক সমর্থন পাবে না।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×