somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরাদিয়াঃ মধ্যযুগের ডাইনীরা এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব দেখুন এখানে

আরাদিয়া নিয়ে প্রথম লেখাতে আমি এর পরিচিতি, সংকলন পদ্ধতি এবং এর বিষয়বস্তু নিয়ে লিখেছিলাম। এছাড়া সৃষ্টি তত্ত্ব নিয়ে ডাইনী মতবাদ এবং তখনকার ক্যাথলিক চার্চের সাথে চলমান দ্বন্দের কহিনী বর্ননা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ দের কেউ কেউ একে লোক সাহিত্য বলেন, আবার কেউ কেউ বিলুপ্ত ধর্মগ্রন্থ বলে নে করেন, যে যাই বলুন পনের খন্ডের এই বইতে সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে শুধু প্রথম চার খন্ডে।

তারপর আট খন্ড পর্যন্ত ডাইনীদের যাদু বিষয়ক কিছু প্রনালী আর উপকরনের বর্ননা দেয়া হয়েছে। এর পরের অংশ ইতালী লোকসাহিত্যের কিছু ছোট গল্প যেগুলোকে এই ধর্মগোষ্ঠীর অস্তিত্বের প্রমান হিসেবে ধরা হয়। এই রচনা তে আমরা ডায়ানিক প্যগান দের যাদু সংশ্লিষ্ট উপকরন এবং বিশ্বাস সম্পর্কে জানবো।

সৃষ্টিতত্ব সম্পর্কিত অধ্যায়ের পর পরই ডায়ানার অনুগ্রহ প্রাপ্ত কিছু বস্তুর কথা বলা হয়েছে। সম্ভবত এই সকল বস্তুই মধ্যযুগের ডাকিনীবিদ্যা চর্চাকারীরা ব্যবহার করতো ডায়ানার বিশেষ অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে। এই সব বস্তুর বর্ননা দেয়ার পাশাপাশি কিভাবে একে মন্ত্রপুত করতে হবে এবং কি কি মন্ত্র পাঠ করতে হবে এসব বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে অনুসারী দের উদ্দেশ্যে। উদাহরন স্বরূপ বলা যায় ছিদ্র যুক্ত পাথর। কেউ যদি ছিদ্রযুক্ত পাথর খুজে পায় তাহলে তাকে সেটা তুলে হাতের তালু তে আবদ্ধ করে একটি মন্ত্র আবৃত্তি করতে হবে। মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে সেই পাথরটি চন্দ্রের দেবী ডায়ানার অনুগ্রহ লাভের সুযোগ করে দেবে সেই ব্যাক্তিকে। মন্ত্রটি শুরু হয়েছে এভাবেঃ

"I have found
A holy-stone upon the ground.
O Fate! I thank thee for the happy find,
Also the spirit who upon this road
Hath given it to me;
And may it prove to be for my true good
And my good fortune"

এছাড়া কেউ যদি এমন কোনও পাথর খুজে পায় নিখুত ভাবে গোলাকার, তাহলে তা আরাদিয়া অনুসারীর জন্য বিরল সৌভাগ্যের প্রতীক। এটি সারাজীবন নিজের কাছে গচ্ছিত রাখতে পারলে সেই ব্যক্তি জীবনে সুখ এবং সমৃদ্ধি খুজে পাবে। তবে একে আগে মন্ত্রের মাধ্যমে উপযুক্ত করতে হবে, কিন্তু এটাও সতর্ক করা হয়েছে যে মন্ত্র সাধনের পর এটি অন্য কাউকে দিয়ে দিলে বা কোনও ভাবে হাত ছাড়া হয়ে গেলে তা সেই ব্যাক্তিকে বড়সড় বিপদের সম্মুখীন করতে পারে।এরকম বৈশিষ্ট সম্বলিত পাথর পাওয়া মাত্রই ডায়ানার উপাসনাকারী সেই ব্যাক্তি আকাশের দিকে মুখ করে সেই পাথরটিকে তিনবার উপরের দিকে ছুড়ে মারবে এবং প্রত্যেকবারই সেটাকে মুঠোবন্দী করবে, সাথে সাথে নিচের মন্ত্রটি আবৃত্তি করতে হবেঃ

I pray of thee do not abandon me:
I beg of thee to enter now this stone,
That in my pocket I may carry thee,
And so when anything is needed by me,
I can call unto thee: be what it may,
Do not abandon me by night or day.

বিভিন্ন রঙের পিন দিয়ে আটকানো মন্ত্রপুত লেবু আরাদিয়ার অনুসারীদের কাছে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে গন্য করা হয় যদি সেখানে কোনো কালো পিন না থাকে। এরকম কিছু যদি কেউ উপহার হিসেবে পায় তাহলে তা তার জীবনে শান্তি সমৃদ্ধি এবং আনন্দ এনে দেয় । তবে সেখানে কালো রঙের একটি পিনও থাকলে তা সামান্য ক্ষতির কারন হতে পারে। তবে তাকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হবে। সেই আনুষ্ঠানিকতা এবং মন্ত্রের বর্ননা দেয়া হয়েছে আরাদিয়াতে। সেই মন্ত্রটি এরকমঃ

At the instant when the midnight came,
I have picked a lemon in the garden,
I have picked a lemon, and with it
An orange and a mandarin.
Gathering with care these precious things,

And while gathering I said with care:
"Thou who art Queen of the sun and of the moon
And of the stars--lo! here I call to thee!
And with what power I have I conjure thee
To grant to me the favour I implore!

যেহেতু প্যাগান বিশ্বাস মতে কমলা সূর্য্যের প্রতীক, এবং লেবু চাঁদের প্রতীক। তাই এখানে অবশ্যই লেবু ব্যবহার করতে হবে যার রঙ হবে হালকা হলুদ। তবে সাধারনত ডাইনীরা সবুজ রঙ থাকা অবস্থায়ই লেবু সংগ্রহ করে, এরপর এটি কালো হয়ে গেলে তা ব্যবহার করে। এছাড়া কমলা আর লেবু কেটে একসাথে জোড়া দিয়ে ডাকিনী বিদ্যায় ব্যবহার করা হয় তা আরাদিয়ার ডায়না আর লুসিফারের মিলনের প্রতীক।

চন্দ্রদেবীর অনুগ্রহের বস্তুগুলোর পর ডাকিনীবিদ্যার কিছু প্রনালীর বর্ননা দেয়া হয়েছে। কিভাবে প্রেমে সফলতা আনা যায় বা নিরাপত্তা ও সৌভাগ্য লাভের মন্ত্র, পবিত্র পানীয় প্রস্তুত করার পদ্ধতি বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে এই অংশে। প্রথমে বলা হয়েছে মন্ত্র সাধনের মাধ্যমে কিভাবে প্রেমকে সফল করা যাবে।

যখন ডায়ানার উপাসক কোনও নারীর প্রেমে পড়ে তখন সে ডাকিনী বিদ্যা চর্চার মাধ্যমে তার প্রেয়সীর উষ্ণ সান্নিদ্ধ লাভ করতে পারে। মন্ত্র উচ্চারনের মাধ্যমে সে তার প্রেয়সীকে কুকুরের আকৃতি প্রদান করতে পারে। কারন চন্দ্রদেবী ডায়ানার পোষা কুকুর আছে যাকে সে সবসময়ই রাখে। কুকুরে পরিনত হওয়ার পর সেই নারী মন্ত্র উচ্চারন করা প্রেমিকের কাছে আসবে এবং নিজের রূপ গ্রহন করে অভিসার করবে, এবং আবার একই ভাবে নিজের ঘরে ফিরে যাবে। কিন্তু এই ঘটনার কিছুই তার মনে থাকবে না, কিছু বিচ্ছিন্ন স্বপ্ন ছাড়া। যেহেতু এই মন্ত্রে আরাদিয়ার নাম উচ্চারন করা হয় তাই কয়েকবার এই মন্ত্রসাধনের পরই অভিষ্ট মেয়েটি ছেলেটিকে স্বপ্ন দেখা শুরু করবে এবং ছেলেটির প্রেমে মগ্ন হয়ে যাবে।

তারপর বলা হয়েছে চলতি পথে নিরাপত্তা এবং কেনাকাটার সময় ভালো কিছু কেনার মন্ত্র। যা ভালো স্বাস্থ্য এবং অন্তরের প্রশান্তি এনে দেয়, এছাড়া এর চর্চা সকল প্রকার কুপ্রভাব থেকে মন্ত্র উচ্চারন কারী কে নিরাপদ রাখে।

Tis Tuesday now, and at an early hour
I fain would turn good fortune to myself,
Firstly at home and then when I go forth,
And with the aid of beautiful Diana
I pray for luck ere I do leave this house!

পবিত্র পানীয় প্রস্তুত করার পদ্ধতি বলা হয়েছে ডাকিনীবিদ্যা নিয়ে লেখা শেষ অধ্যায়ে। বলা হয়েছে একটি শিঙ্গের পানপাত্রে সেই পানীয় নিতে হবে, এরপর সেখান থেকে খানিকটা পানীয় পান করে বিশেষ মন্ত্র উচ্চারন করতে হবে। অন্যান্য প্যগান মতবাদের মত ডায়ানিক দের কাছেও শিঙ্গের পানপাত্র অতীব পবিত্র এবং ডাকিনীবিদ্যা চর্চার জন্য অতি আবশ্যক উপকরন। এর তুলনা করা যাতে পারে সূর্যদেবতা অ্যাপোলোর পুজারীদের সাথে, তারাও সুর্য্যের উপাসনায় শিঙ্গের পানপাত্র ব্যবহার করে।

পবিত্র পানীয় পান করার সময় এই মন্ত্র পাঠ করতে হবেঃ

I drink, and yet it is not wine I drink,
I drink the blood of Diana,
Since from wine it has changed into her blood,
And spread itself through all my growing vines

আরাদিয়াতে প্রাপ্ত এই সকল মন্ত্র এবং চর্চার পুংখানুপুংখ বর্ননা এটাই প্রমান করে ডাকিনীবিদ্যা বিচ্ছিন্ন কিছু ডাইনীদের অপচর্চা ছিলো না। বরং এটি একটি সুসৃংখল ধর্ম মত ছিলো যা ততকালীন খৃষ্টীয় যাজক সম্প্রদায়ের বৈরীতার সামনে দাড়াতে পারে নি। তখনকার চার্চ এই সব নারীদের সমাজের সামনে ডিমোনাইজ করেছিলো, এদেরকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলো যা ইনকুইজিশন নামে পরিচিত। বিজয়ীদের রচিত ইতিহাসের মাঝেই আমরা বিচ্ছিন্ন ভাবে খুজে পাই পরাজিতদের কিছু কাহিনী, আরাদিয়া তাদেরই একটি অংশ।

------------
মূল পোস্টে আরও বিস্তারিত ভাবে বর্ননা করা হয়েছে, সেটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন :)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:০৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×