আজ বাহির থেকে ঘুরে মাগরিবের নামাজ পরে যখন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম তখন আমাকে দেখেই আমার জমজ তিন বছরের দুই ভাগনী বলে উঠলো,
'ডার্লিং ও আমার ডার্লিং'
সেই সময় সাথে সাথেই টেলিভিশনে দেখলাম যে জি বাংলায় এই শিরোনামে একটা ভারতীয় বাংলা চলচিত্রের গান দিচ্ছে এবং আমার ভাগনী গুলা সেই গানের তালে তালে নাচছে।
ক্লান্ত থাকায় তখন তাদেরকে কিছু না বলে একগাল হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।
কিন্তু কিছুক্ষণ আগে সেই কথাটা চিন্তা করে হঠাত্ নিজ থেকেই নিজেকে কয়েকটা প্রশ্ন করলাম,
'আসলে আমরা কোথায় যাচ্ছি? কি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যত্? কি ই বা আমাদের বর্তমান অবস্থা? আমরা কি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ছোট ছোট বাচ্চাদের সঠিক শিক্ষা দিচ্ছি? অথবা আমরাই কি নিজেরা সঠিকটা গ্রহণ করছি?'
আমি জানি এই যুগে কেউই এইসব প্রশ্নের সঠিক এবং প্রত্যাশামূলক উত্তর দিতে পারবেন না। হয়তো আমরা অপারগ অথবা স্বেচ্ছায় অপারগতা স্বীকার করে নিয়েছি।
কিছু ভারতীয় এবং অন্যদেশীয় চ্যানেল ক্রমেই তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও সভ্যতা। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না, নাকি নিজেরাই করতে চাচ্ছি না!!
পূর্বে ছোট ছোট বাচ্চারা মায়ের কোলে বসে রুপকথার রাজা-রাণী অথবা অচিনপুরের রাজকুমারীর গল্প শুনতো। মা-বাবা এবং বড়দের সংস্পর্শে থেকে তারা অনেক উপদেশমূলক কথা শোনত।বেশি বেশি মা-বাবা অথবা গুরুজনদের সংস্পর্শে থেকে বাচ্চারা তাদের গুণে গুণান্বিত হতো এবং ভবিষ্যতে একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতো।
কিন্তু বর্তমান যুগে ছেলে মেয়েরা বড় হচ্ছে সারাদিন বিদেশী চ্যানেল দেখে দেখে। বিশেষ করে ভারতীয় কিছু চ্যানেল বাংলাদেশের প্রতিটি বাচ্চার সুন্দর ভবিষ্যত্ এর জন্যে বিরাট হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।
আজকাল প্রতিটি ঘরে ঘরে বাচ্চারা ডোরেমন দেখছে এবং বিকৃত ভাবধারার গান শোনছে।অনেক বাচ্চাদের এইসব চ্যানেল দেখিয়ে খাওয়ানো এবং ঘুম পারানো ও হয়। যার ফলে বাচ্চারা বাংলা ভাষায় পরিবর্তে সেই সব বিদেশী ভাষায় বেশি কথা বলছে এবং বড়দের সামনেই অনেক অকথ্য কথা বলে ফেলছে।
এইসব বাচ্চারা আজ ভুলতে বসেছে আমাদের বাংলা সংস্কৃতি। এই সব চ্যানেলে দেখে দেখে তারা আধুনিক এবং বিকৃত মনোভাব লাভ করছে যা পরবর্তীতে তাদের লিপ্ত করছে বিভিন্ন ব্যাভিচারে।
আমরা বড়রাও কিন্তু কম যাই না। বিশেষ করে টিন এজার ছেলে-মেয়েরা এবং সকল মহিলারা এইসব বিদেশী চ্যানেল নামক ভাইরাসের মুখ্য পোষক।
বেশিরভাগ টিন এজার ছেলেরা এখন বাংলা লালনগীতি,বাউলগীতি ইত্যাদি ঐতিহ্যগত গান ভুলে গিয়ে সারাদিন বিদেশী বিকৃত গান শোনছি এবং বাংলাকে ভুলতে বসেছি। পাশ্চাত্য এবং ভারতীয় স্টাইলে পোষাক পরতে গিয়ে আমরা হয়ে যাচ্ছি অশ্লীল। ইসলাম প্রধান দেশ হিসেবে আমরা ভুলে যাচ্ছি ইসলামের রীতিনীতি।
অপরপক্ষে মহিলারা সারাদিন স্টার প্লাস এবং অন্যান্য হিন্দি চ্যানেলে নাটক,চলচিত্র দেখে। বলাই বাহুল্য আজকাল মহিলাদের পোশাকেও ছড়িয়ে পরেছে এইসব ভারতীয় নাটকের প্রভাব। বাজারে গত কয়েকবছর ভারতীয় নাটকের নায়িকাদের নামানুসারে পোশাক বিক্রি হচ্ছে এবং যার যে নায়িকা পছন্দ মহিলারা তাদের নামানুসারে চড়া দামে পোশাক ক্রয় করছে।
আমাদের সকলের উচিত আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখানো এবং নিজেরা ও সঠিক পথে চলা। এইসব ভারতীয় এবং বিদেশী চ্যানেল বাদ দিয়ে সবার উচিত্ দেশীয় সুরুচি সম্পন্ন চ্যানেল গুলি দেখা।সাথে নিজের ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে ও দেখানো যাতে তারা জানতে এবং শিখতে পারে বাংলাকে এবং দেশের উত্কৃষ্ট সংস্কৃতিকে।
সকল মা-বাবাদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলতে চাই,
"আপনার ছোট ছোট বাচ্চাদের ভবিষ্যত আপনাদেরই হাতে। এখনই সময় তাদেরকে প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তোলার। পরবর্তীতে বখে যাওয়ার কারণে হয়তো তাদেরকে শাষন করবেন কিন্তু তখন তাদেরকে কিছুতেই আর সঠিকপথে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না।"
সরকারের উচিত এইসব বিকৃত বিদেশী চ্যানেল বন্ধ করা। তানা হলে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম আর সফলতার আলো দেখতে পারবে না।
বাংলাদেশী কোন চ্যানেলই ভারতে সম্প্রচার করা হয় না। এমনকি বাংলাদেশের সরকার বারবার অনুরোধ করার পরও তারা বাংলাদেশী চ্যানেল সম্প্রচার করেনি। অথচ আমর কোটি কোটি টাকা খরচ করে তাদের এইসব অপসংস্কৃতিক চ্যানেল দেখছি।
তারা যদি আমাদের ভাল চ্যানেল গুলি প্রচার করতে না পারে তবে আমরা কেন এতো টাকা খরচ করে তাদের বিকৃতমনা চ্যানেল গুলি দেখছি এবং দেশের ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে নিরাশার ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত করছি?
জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রইলো....!!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১২ রাত ১:২৫