somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবনী ০২

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোনোরকমে জোড়াতালি দিয়ে দুই হাজার একশত আটানব্বুই টাকা জোগাড় করা গেল। তার মধ্যে দুইটাকা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কারণ এই দুইটাকার অবস্থা বড়ই করুণ। মনে হচ্ছে অপুষ্টিতে ভুগছে। একে সহজভাষায় অচল টাকা বলে।
মিশন হচ্ছে আজকেই একজোড়া স্যান্ডেল কেনা। কালকে ইদ। আমার স্যান্ডেলের অবস্থা দেখে আমার রুমমেট কলিমুদ্দি আফসোস করে তার স্যান্ডেল জোড়া ধার দিতে চেয়েছে। ওর স্যান্ডেলজোড়া আমার থেকে উন্নত। ওর মতে খাঁটি পন্স। ওর পন্স পড়ার ইচ্ছে আমার নাই। কলিমদ্দির পায়ে রগরগে ঘা। ওর আঙ্গুলের ফাঁকে সব সময় সাদা ফেনা লেগে থাকে। সুস্থ মস্তিষ্কে তার রোগটা ভাগাভাগি করার প্রশ্নই ওঠে না। অবশ্য এতে একটা জিনিস প্রমান হতো। তার রোগটা সংক্রামক কিনা প্রাকটিক্যালি জানা যেত।
আমি একটা কালো শার্ট পড়ে বের হলাম। বাইরে প্রচন্ড রোদ। এই গরমে কালো শার্ট পড়া বোকামি। কিন্তু আমি পরলাম। কারণ এর পেছনে একটা যুক্তি আছে!

নিউমার্কেট যাওয়ার রাস্তা দুইটা। আমি দূরের রাস্তাটা বেছে নিলাম! এই রাস্তায় যেতে একটা বস্তি পরে। এর আগে কোনদিনও এদিক দিয়ে যাইনি। আজকে প্রথম যাচ্ছি। সব প্রথমেই ভালোলাগা মিশে থাকে। আমার ভালো লাগছে।
বস্তির ভেতর ঢুকতেই উটকো গন্ধ নাকে এসে লাগলো। একটু এগোচ্ছি গন্ধের ধরণ পাল্টে যাচ্ছে। মানুষ নাকি এক লাখ কোটি ঘ্রাণ আলাদা করে শনাক্ত করতে পারে। হাতি পারে সব থেকে বেশি। এদিক থেকে মানুষের থেকে হাতি উন্নত প্রাণি!
আর কিছুদুর এগোতেই একটা ছোট্ট মেয়েকে দেখতে পেলাম। চুল লাল। রুক্ষ চেহারা। মায়ের আঁচল ধরে কাঁদছে। মা বসেবসে চাল বাচছে। এই রকম মেয়েদের নাম সাধারণত ফুলি বা নূরি টাইপের হয়। আর একটু এগিয়ে দেখলাম আমার ধরণা ঠিক। এই মেয়ের নাম ফুলি। ওর মায়ের নাম ফুলির মা। নবনীদের বাসার কাজের বুয়া।

আমি গিয়ে সামনে দাঁড়াতেই ফুলির মা বিস্ময়ে হা হয়ে গেল। ফুলি এখন আর কাঁদছে না। সেও মনে হয় বিস্ময় কি করে হতে হয় তা শিখে ফেলেছে।
ফুলির মা বলে উঠলো," আল্লাগো ভাইজান আফনে এইহানে। গরীবের বাড়িত কি মনে কইরা।"
আমি বললাম," এমনি চলে এলাম। কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। তাই তোমাদের এখানে চলে এলাম।"
ফুলির মা কি বলবে বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে কেঁদে দেবে।
আমি বললাম," মিসেস ফুলি কাঁদছে কেন?"
মিসেস বলায় ফুলি হেসে দিলো। ওর হাসিটা এখন কান্না মেশা। কান্না মেশা হাসিগুলোকে সুখী হাসি বলে। ওকে এখন সুখি সুখি লাগছে।
ওর মা বললো,
"আর বইলেন না ভাইজান। কাইল হতে জিদ ধরছে নতুন জামা কিনবো। বলেন তো আমি টেহা কই পাই। যা টাহা আছিল চাইল কিনছি আর ওর বাপের অষুদ কিনতেই কুলাইলো না। প্রতি ইদে জামা কিনতে হইবো ক্যান। গরীবের অত কিসের ফুটানি! বলেন ভাইজান। দেখেন দেখি ভাইজান আফনারে বাইরে দাঁড়াই রাখছি। ভেতরে আসেন।"
আমি বললাম,"কথা ঠিক গরীবের ফুটানি করে লাভ নাই!"
ফুলি একবার আমার দিকে চাইলো। আমাকে সে অপছন্দ করে ফেলেছে। মাত্র আমার এই একটা কথাতেই সে বুঝে ফেলেছে তার আর জামা কেনা হচ্ছে না। কিন্তু সে কাঁদছে না। কান্না জমিয়ে রাখছে। আমি যাওয়ার পর সে কাঁদবে।
আমি বললাম,"ফুলিকে একবার মার্কেট ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। ওর ভালো লাগবে।"
ফুলির মা ফুলিকে জিজ্ঞেস করলো," যাবি?"
ফুলি কিছু বললো না।

ফুলিকে নিয়ে মার্কেটে ঢুকলাম। মার্কেটে আজ মোটামুটি ভির। ভির ঠেলে ফুলির একহাত ধরে এগোচ্ছি। কাজী ফ্যাশনে এসে থামলাম। দোকানদার এক ছোকড়া। বললো,"ভাইজান কি লাগবে?"
ফুলিকে দেখিয়ে দিয়ে বললাম ওর মাপের সুন্দর একটা জামা দেখাও। ভুরভুর করে অনেক গুলো জামা বেড় করে দিলো। ফুলিকে বললাম," তোমার কোনটা পছন্দ?"

আমি জানি ফুলি এখন একটা লাল জামা পছন্দ করবে। ছোটবেলায় সবার পছন্দের রং মনে হয় লাল থাকে। এরপর জীবনের সাথে রংও বদলায়!
জামার দাম দুই হাজার টাকা। কম রাখা গেল না। সব নাকি একদর। কি করা। দুইহাজার টাকা দিয়ে বের হলাম। ফুলিকে বাড়ির কাছাকাছি এসে বললাম,
"ফুলি বাড়ি চলে যাও। তোমাদের বাড়িতে আমি আর যাবো না। খুবই দূর্গন্ধ।"
ফুলি বললো,"আচ্ছা!"
কিন্তু কেউ বিদায় দেবার আগে একটা কথা বলতে হয়। ফুলি সে কথাটা বলার জন্য একবার থামলো। বললো, " আবার আসিয়েন!"
আগে যে বললাম তোমাদের বাড়িতে আর যাবো না। সে সেটা জেনেও বললো। কারণ সে কেবল জানে এটা নিয়ম। সে নিয়ম মানছে।

আমি বাড়ি ফেরার দ্বিতীয় পথ ধরলাম। নিজেকে আজকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। আমার গায়ে জামাও আছে। কেউ সুখী মানুষের জামা খুঁজছে কিনা জানা দরকার। আমার জামাটা তাকে দিয়ে দেবো!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×