
মৌজি এবং মমতার সম্পর্ক তো স্বামী-স্ত্রীর কিন্তু তাদের মধ্যে বন্ধন এখনো সেই পর্যায়ে যায়নি। মৌজির সময় কাটে তার পিতার সেবা যত্ন করতে করতে আর মমতার? মমতার শাশুড়ি সারাদিন মমতা এইটা করো, মমতা ওইটা করো…..লেগেই থাকে।
এটা হচ্ছে মৌজি এবং মমতার ভালোবাসার গল্প, হ্যা তাদের ভালোবাসার সুই ধাগার গল্প। মৌজির প্রিয় বস্তুর মধ্যে অন্যতম হলো সেলাই মেশিন। সেলাই মেশিনে সুই ভরার সাথে সাথে কিভাবে স্টেপে স্টেপে সেলাই করতে হয় সবই মৌজির জানা আছে। মা’র চিকিৎসার জন্যে যখন সংসারে টানা পরা শুধু হয়ে যায়, তখন মৌজি ছিলো বেকার এবং তার বাবা ছিলো রিটায়ারড। মমতার বুদ্ধি থেকে সিধান্ত নেওয়া হয় সুই ধাগার কাজ করা। জনবহুলপূর্ণ একটি এলাকায় তার পুরোনো সেলাই মেশিন নিয়ে বসে পরে। ভাবে কোনো না কোনো একটা কাজ পাবে এবং সাথে অল্প কিছু রোজগারও হবে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। মৌজির মা কে একটি মেক্সি সেলাই করে দেন মৌজি ও মমতা নিজেদের সেলাই মেশিনে। তার মা’কে খুব সুন্দর লাগছিলো। পরে মৌজির কাছে হসপিটালের অনেকের কাছ থেকে আবদার আসে, তাদেরও চাই সেইরকম মেক্সি। ব্যাস ঠিক এভাবেই তারা ফ্যাক্টরিতে চলে যায় শেলাইয়ের জন্য। রাতদিন পরিশ্রম করে অবশেষে তৈরি করতে পারেন। কষ্টের সফলতা হয়েছে। মৌজি এবং মমতা সিদ্ধান্ত নিলো এবার মহল্লার সকল দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা যাক। তাদের সঙ্গে নিয়ে শুরু হয়ে যায় সুই ধাগার অবিরাম চলন।
মূলত গল্পটি সমাজের সেই সব গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাপোর্টে। যারা সারা রাত-দিন পরিশ্রম করে নিজের হাতে তৈরি করে থাকেন সকল আকর্ষণীয় পোষাক, যা কিনা পরে কোম্পানি ‘মেড ইন চাইনা/মেড ইন ইটালি/মেড ইন ব্লা ব্লা’ দিয়ে থাকেন শুধুমাত্র কোম্পানির প্রচারের জন্য। অর্থাৎ সকলের ধারণা এইযে যখন একটি আকর্ষণীয় পোষাকে মেড ইন বিদেশের কোনো দেশের নাম থাকে, তখন সেই পোশাকটি বেশি বিক্রয় হয় এবং লাভও বেশি হয়। মানুষের চাহিদা নাকি বেশি বিদেশী পোষাকের প্রতি। হ্যা আগে ছিলো এবং এখনো আছে। কিন্তু কয়জন হাত তুলবেন এই বিদেশী পোষাকের প্রতি? আমরা বাঙ্গালি, আমাদের পছন্দও কিন্তু বাঙ্গালি পোষাক হবার কথা। মৌজি এবং মমতার মূল লক্ষ্য ছিলো এই নিজের দেশের শ্রমিকদের কষ্টের সেলাইয়ের পোশাকগুলো থেকে মেড ইন বিদেশী দেশের নাম সরিয়ে নিজ দেশের নাম দেওয়া। মানে, বাহ! কি চমৎকার আইডিয়া। আমরাও কিন্তু পারি এভাবেই নিজ দেশের কথা ভেবে বিভিন্ন রিস্ক নিয়ে নিতে। পারিনা?
ফেশান হাউজে সিলেক্ট হওয়ার পর, জানতে পারলো তাদের পোষাকগুলো পরিধান করে দেখাতে হবে। মানে তাদের র্যাম্পে গিয়ে তাদের সেলাইয়ের পোষাকগুলো পরিধান করে র্যাম্প ওয়াক করতে হবে। ব্যাস সবাই শুরু হয়ে গেলো। আপনাদের বলি ঐ দৃশ্যটি ছিলো অপুরূপ। মাস্ট দেখবেন। মৌজির বাবাকে যেখানে সমাজের কেও চিনতো না এবং যথেষ্ট সম্মানও করতো না, সেখানে তাদের দুজনকে এতো বড় একটি প্লাটফর্মে এতো এতো রেস্পেক্ট। সবার করতালি দেখে মৌজির বাবা-মা স্পিচলেস পুরো। মৌজি এবং মমতাও কিন্তু র্যাম্প ওয়াক করেছিলো, প্রতিটি পা বাড়াচ্ছিলো আর দু’জন দু’জনের দিকে একটু পরপর তাকাচ্ছিলো।
র্যাম্প ওয়াকের শেষে একজন Judge এসে বলল, আজ যদি তোমরা প্রফেশনাল ডিজাইনার হতে তাহলে তোমরা ফার্স্ট হতে। কারণ তোমাদের প্রতিটি পোষাকের ডিজাইন ছিলো অন্যদের তুলুনায় অতুলনীয়।
সবাই মন খারাপ করে চলে যায় কিন্তু পরে জানতো পারলো তারাই প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কারো খুশির কোনো শেষ নেই। স্টেজে উঠে সবাই লাফাচ্ছে নাচছে , সেলিব্রেট করছে তাদের কষ্টের অর্জিত এই জয়কে।
এরকম হাজারো মৌজি এবং মমতা বিরাজ করছে আমাদের অবহেলিত সমাজে। তাদেরও উচিৎ মৌজি ও মমতার মত তাদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


