
-“এ মামা দু’টা বেনসন সিগারেট আর কড়া কইরা একটা চা দাওতো।”
বাড়টা বাজলো, ছুটির ঘন্টা বেজে উঠলো! মেয়েরা বের হচ্ছে স্কুল থেকে। পূরভীও বের হলো তার বান্ধবীর সঙ্গে। হঠাত সাইফের চোখ পরলো পূরভীর দিকে। বড় চুলের সেই লম্বা দুইটা ঝুঁটি। গাঢ় সবুজ রঙের স্কুল ড্রেসে সাদা রঙের একটি ওড়না গায়ে দেওয়া। সাইফের হাতে সিগারেট, পূরভীর দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে সিগারেটের আগুনের তাপটি তার হাতে গিয়ে লাগলো টেরই পেলো না।
-আহ! ধেৎ!
-ও মামা এমনি যদি আপনি প্রতিদিন মাইয়াগোর দিকে চাইয়া থাকেন তাইলে এমনি কইরা প্রতিদিনই তো আপনার হাত পুড়বো আগুনের তাপে।
সাইফ সিগারেট ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, দেখবে মেয়েটি কোথায় যায়। বাসায়ইতো যাবে, বাসাটা চিনে আসা যাক।
পূরভী একে একে তার বান্ধবীদের বিদায় দিয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। পূরভীর পিছে সাইফ।
-ওমা! এতো দেখি আমগো এলাকার মেয়ে।
সাইফ দেখলো, সাইফদের বাসার পাশের গলিতেই মেয়েটির বাসা। সাইফতো বড্ড খুশি।
এভাবেই দিনের পর দিন পার হয় আর সাইফ প্রতিদিনই পূরভীকে ফলো করে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পূরভী তা জানেই না। একদিন এলাকায় আড্ডারত অবস্থায় সাইফ তার বন্ধুদের মেয়েটির ব্যাপারে সব খুলে বলল,
-দোস্ত মেয়েটা আমাদের এলাকায়ই থাকে কিন্তু কিসে পড়ে বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি নাই কিছুই জানি না।
-আরে হোপ! এডি কি কস মামা? মাইয়া তোগো পাশের এলাকায় থাকে আর তুই এটাই জানোস না মাইয়া কিসে পড়ে! খবর লাগা মামা খবর লাগা।
সাইফ খবর লাগালো, হ্যা ঠিক তেমনিভাবে যেমনি করে সব ছেলেরাই খবর লাগায়। মেয়েটির নাম পূরভী। নাইনে পড়ে। কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। এক বিকেলে সাইফ ও তার বন্ধুরা এক পার্কের সামনে বসে ছিলো। তখন হঠাত করেই সাইফ দেখলো পূরভীকে।
-দোস্ত ও দোস্ত, যা আজকে যা। একটু কথা বইলা আয়।
-না না না! আমার ভয় করে। যাইতে পারুম না। তোরা গিয়ে ক না একটু আমার কথা।
-শালা বিয়ের দিনও কি আমরা যাইয়া কবুল কইয়া আসুম তোর পক্ষ থেইক্কা? হুম?
-আরে যাইতাসি যাইতাসি। তোরা ধাক্কা দিস না।
সাইফ পূরভীর সামনে গিয়ে ডাক দিলো তাকে,
-এক্সকিউইজ মি!
-জি?
-আপনার নাম টা জানতে পারি?
পূরভী কিছু না বলে চুপ করে একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। আর সাইফ ওখানেই ফিদা!
কয়দিন পর পূরভীর স্কুলের সামনে,
-এই পিচ্ছি দাঁড়াও, তোমাকে না সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমার নাম কি। বললে না কেন?
পূরভী চুপ।
-কথা বলো না কেন? তুমি কি মনে করেছো তুমি তোমার নাম না বললে কি আমি জানতে পারবো না? তোমার নাম পূরভী, তুমি ক্লাস নাইনে পড়।
-জি আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না।
সাইফ অনেক কষ্টে পূরভীর ফেসবুক আইডি খুজে বের করলো সেখানে ভুয়া পরিচয় দিয়ে পূরভীকে ম্যাসেজ দিলো এবং শুধু তাই নয়, পূরভীর সঙ্গে বন্ধুত্বও করে ফেলেছে ধীরে ধীরে। বিকেল বেলা, বাহিরে প্রচণ্ড বৃষ্টি। সাইফ পূরভীকে কল দিলো ম্যাসেঞ্জারে,
-বাহিরে তো অনেক বৃষ্টি, তুমি বের হবা না?
-আমি? এই বৃষ্টির মধ্যে আমি বের হয়ে কি করবো?
-কেন ভিজবে বৃষ্টিতে।
-না, আমার মা বের হতে দিবে না আমাকে।
-আচ্ছা বের না হও তবে তোমার বাসার বারান্দায়তো আসতে পারবা তাই না?
-বারান্দায় গেলে কি হবে?
-তোমায় দেখবো।
-আমায় দেখবা মানে?
-না মানে আমি বারান্দায় আসবো, তুমিও যদি আসো তাহলে মনে করবো আমরা একসঙ্গে আছি। আসবা প্লিজ?
পূরভী কিছুক্ষণ চিন্তা করলো, দেখছে ছেলেটির হাবভাব বেশি ভালো না। দু’দিন হলো পরিচয় ফেসবুকে আর তাতেই ফোণ দিয়ে এসব কথা!
পূরভী তাকে ম্যাসেজ দিয়ে বলল,
-আপনি আর কখনও আমাকে ম্যাসেজ বা কল করবেন না।
সাইফ বুঝলো এভাবে কাজ হবে না। তাকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। সাইফ পূরভীর ফোণ নম্বর যোগার করে পূরভীকে কল করে সব বলল। তার ভালোবাসার কথা এবং তার দুষ্ট মিষ্টি ফেইক আইডি দিয়ে পূরভীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার কথা। পূরভী দ্বিতীয় বারের মত এবারও না করে দিলো তাকে। তবু সাইফ পিছু হটেনি। পূরভীকে আপন করেই ছাড়বে। এভাবে দিনের পর দিন পার হতে লাগলো। পূরভী ক্লাস টেনে এখন।
-দেখো পূরভী, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি কেন তা বুঝনা? আমাকে কেন বুঝনা? তুমি খালি কি চোখে তোমার লাইফটাই দেখো? আমার কি কোনো লাইফ নাই? এভাবে দিনের পর দিন আমাকে নিস্তেজ করে দিচ্ছো তুমি, তা কি চোখে দেখো না? দেড় বছর আগে আমার এক্স গার্ল ফ্রেন্ড মারা গিয়েছিলো একটা কার এক্সিডেন্টে। এরপর চিন্তা করেছিলাম আর কখনো রিলেশন করবো না কিন্তু তোমায় দেখার পর বুঝলাম, না ভালোবাসা এখনো বেঁচে আছে। আল্লাহ্ আমাকে দ্বিতীয়বারের মত সুযোগ দিয়েছেন। প্লিজ পূরভী আমাকে বুঝ একটু।
-ছিঃ! গার্ল ফ্রেন্ড মরেছে মাত্র দেড় বছর তাতেই নতুন গার্ল ফ্রেন্ড বানাবার জন্যে উঠে পরে লেগেছে। তুমি কি হ্যা? আমার কিছু হয়ে গেলে তো তুমি আমার মৃত্যুর কয়দিন পরেই আবার ছুটবা নতুন গার্ল ফ্রেন্ডের সন্ধানে।
সাইফ অনেক বুঝাবার চেষ্টা করলো কিন্তু পূরভী কিছু তেই বুঝতে রাজি না। অবশ্য পূরভীও তার জায়গায় সঠিক।
কয়দিন পর সাইফ জানতে পারলো পূরভী রিলেশন করেছে। সাইফ জীবনে এত কষ্ট মনে হয় আর কখনোই পায়নি। এবার তো সাইফের রাগ চরম পর্যায়ে উঠেছে। রাগের মাথায় পূরভীকে ফোণ করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি। পূরভীও ভীষণ রেগে গিয়ে সাইফের নম্বর ব্ল্যাকলিস্টে দিয়ে দিলো।
সাইফ এখন কি করবে? সাইফ একটু পাগল টাইপের ছেলে ছিলো। পূরভীকে না পাওয়ার শোকে সে নিজের হাত কাটতে শুরু করলো, নিজের হাত কেটে পূরভীর নাম লিখে, ঘুমের ঔশুধ খেয়ে দিনের পর দিন পরে থাকে বিছানায়। সারাদিন মদ, গাঁজা, নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা শুরু করে দেয়। সারাদিন রাত সাইফের জীবন ধংস করার পথে সিগারেট এখন। সাইফের মা মারা যান সাইফ ছোট থাকতেই। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর সৎ মা তেমন খোজ খবর নেয়না। তার আপন শুধু এখন তার বড় ভাই ও ভাবি। মনে হচ্ছে একটা সাধারণ গল্প তাইনা? হ্যা তবে কিছু গল্প থাকে না সাধারণের মাঝেও অসাধারণ? সেই গল্প এটি।
-বিগত তিনটি বছর ধরে পূরভীকে ভালোবেসে আসছি। কি পেলাম? অবহেলা অপমান ছাড়া আর কি? দোস্ত ও দোস্ত আমি পূরভীকে ভুলতে চাই। আমাকে হেল্প কর যেমনি পারোস।
-হো দোস্ত আমরা তো এডাই কইতাসি। পূরভীর মত মেয়ে তোর যোগ্য নারে। তোর জন্য বেস্ট কাওকে খুজে দিবো তোরে।
একের পর এক কয়েকটি মেয়ে আসলো, গেলো। কিন্তু সাইফ? না মন তো তার আঁটকে আছে পূরভীর দিকেই। বাঁচতে পারবেনা তাকে ছাড়া। সাইফের বেস্ট ফ্রেন্ড পূরভীকে বুঝালো,
-দেখো ভাইয়া আমার দ্বারা সম্ভব না এই মদখোর গাঁজাখোরের সাথে সম্পর্ক করা।
-তুমি সম্পর্ক কেন করবা? সাইফের গ্রেজুয়েশন কমপ্লেট প্রায়। তোমরা বিয়ে করবা। সাইফ তোমাকে কি প্রেমের জন্য ভালোবাসে? নাকি সারাজীবনের জন্য?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


