
এইচ.এস.সি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ পাওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা কেমন হয়? অবশ্যই আনন্দের মাঝে তখন সবার মনে চিন্তা কাজ করে কীভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে। কিন্তু তাসলিমার এই চিন্তা করার অধিকার টাও ছিলো না, হ্যা শুধুমাত্র তার পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে।
তাসলিমার বড় চিন্তা ছিলো, সে কীভাবে ঢাকা ভার্সিটিতে এসে পরীক্ষা দিবে। যখন পরীক্ষা দেওয়ার পর জানতে পারলো সে চান্স পেয়েছে, তখন তার চিন্তা আবারও শুরু হলো। ভাইভাই পরীক্ষা দিতে পারবে কি? লালমনিরহাট থেকে ঢাকায় এসে পরীক্ষা দিতে হবে, কিন্তু ভাড়া যোগার করবে কীভাবে? স্বপ্ন ছিলো তার, ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার। প্রতিদিন রাতে ঘুমাবার আগে তাকে অনেকবার চিন্তা করতে হয়েছে, আদৌ কি পড়তে পারবে?
দু’জন স্টুডেন্ট গোল্ডেন এ+ পেয়েছে, একজন বড়লোক ঘরের সন্তান এবং আরেকজন গরীব ঘরের সন্তান। একজনের পড়ার টেবিলে মা এসে দুধের গ্লাস এনে দিতো। আরেকজন কে তার পড়ার টেবিলে বসে চিন্তা করতে হতো পরদিন সকালে সে কি খাবে, কি খেয়ে সে কলেজে যাবে, স্কুলে যাবে।
তাসলিমা তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে দেখেছে ঢাকায়, বাচ্চার মা তার পিছে সারাদিন খাবারের বাটি নিয়ে দৌড়াতে থাকছে। বাচ্চা খেতে চাচ্ছে না, তবুও তার উপর জোড় করা হচ্ছে। দামি দামি খাবার এনে দিচ্ছে বাবা-মা তাদের সন্তানের জন্য।
লালমনিরহাটে তাপমাত্রা সব সময় কম থাকে, শীতের সময় সেখানে ৫/৬ ডিগ্রীর নিচে তাপমাত্রা থাকে। দরিদ্র মা তাঁর বাচ্চাকে ঠিকমত খাওয়াতে পারেনা। ৮/৯ মাসের বাচ্চাকে তার মা, ঠান্ডা পান্তা ভাত শুধু লবণ দিয়ে খাইয়ে দেয়। ছোট ছোট বাচ্চাদের শীতের সময় ঠান্ডা পান্তা ভাত লবণ ও মরিচ দিয়ে খেয়ে থাকতে হয়।
একটি বাচ্চা সে খাবে না, তাকে জোড় করে খাওয়ানো হচ্ছে। অপরদিকে আরেকটি বাচ্চা যে ক্ষুধার্ত, সে খাবার পাচ্ছে না প্রয়োজনমত। এই যে বৈষম্য এটা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন জনগণ? একজন খাবার খাবে না, আরেকজন খাবারের অভাবে ভুগছে। কেও কি এই জিনিসটি চিন্তা করেছিলো যে এই প্রতিকূল পরিবেশ থেকে তাসলিমা এত দূর কীভাবে আসতে পেরেছে?
“দুখ মিয়া নজরুল হয়ে ছিলেন সত্যি স্যার, রফিজ উদ্দিন দারোগার সাহায্যে।
কিন্তু স্যার, দুখ মিয়া কখন পুষ্পমাল্য পেয়েছেন জানেন?
যখন সে নির্বাক হয়ে গেছেন।
তাঁর যখন পুষ্পমাল্য পেলে ভালো লাগতো, তাঁর অনুভূতি তিনি জানাতে পারতো
তখন আমরা তাঁকে কারাগারে রেখেছি, তাঁকে কারাবাস দিয়েছি।
যখন আমরা তাঁকে পুষ্পমাল্য দিয়েছি তখন তিনি আর কিছু বলতে পারেন নি।
আমরা কাজী নজরুল ইসলামের মতো হতে চাই,
কিন্তু দুখ মিয়ার মত কষ্ট আমরা পেতে চাইনা স্যার।
পুষ্পমাল্য আমরা নির্বাক হয়ে পেতে চাইনা।
আপনারা, আমাদের পুষ্পমাল্যটা আমাদের যে সময়ে পাওয়া উচিৎ যদি সে সময়ে দিয়ে দেন,
তাহলে আমরা আমাদের অনুভূতি জানাতে পারবো।
এক ফোঁটা অশ্রু ঝরাতে পারবো।“
জি কথাগুলো তাসলিমার….
বাংলাদেশের একটি সনামধন্য ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ তাসলিমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছে, তাকে তার যোগ্য প্লাটফর্মে দাঁড় করিয়েছে। একটা ডানা কাটা পাখিকে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে।
তাসলিমা সমাজের ধনী ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের উল্লেখ করে বলেছে, “আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন। আমাদের মত মানুষদের সমাজে বাঁচতে চলতে সাহায্য করুন। আপনাদের বাচ্চাদের দামি দামি খেলনা না কিনে দিয়ে যদি একটু আমাদের দিকে তাকাতেন। দামি দামি খেলনা কেনার টাকা দিয়ে আমাদের এক দিনের পেট পুরো খাবার খাওয়া হয়। দয়া করে একটিবার চিন্তা করুন। দিনের পর দিন আমরা খাবারের চিন্তা করে ফ্রেশ মাইন্ডে পড়াশুনা করতে পারি না। আর আমার প্রতিবেশী এক বান্ধবী চিন্তা করে কোনো রকম একটা রেজাল্ট করে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার। কিন্তু তখন আমি চিন্তা করতাম কীভাবে পড়াশুনা করব, কীভাবে ভালো রেজাল্ট করব।“
আচ্ছা আমরা কি পারি না সমাজের গরীব দুঃখী অসহায় মানুষদের কথা একটু ভাবতে?
তাদের জন্য ভালো কিছু কি করতে পারি না?
সমাজে অনেক ধনী ও বিত্তশালী ব্যক্তিগণ আছেন, যাদের ধন-সম্পদের কোনো কমতি নেই। তাদের অর্থ আছে বলেই তারা চায় আরো অর্থ বানাতে। আর যাদের নেই, তারা চিন্তা করে কোনোরকম জীবন-যাপন করে শুধু তিনবেলা খাবার যোগার করা।
দরিদ্র জনগণেরা শুধু একটু শান্তিতে বাঁচতে চায়। যখন তাদের মৌলিক অধিকারগুলো তারা আদায় করে নিতে চায়, তখনতো আপনারাই তাদের বাধাগ্রস্থ করেন। তাহলে আপনারাই বলুন কি করে কীভাবে তারা তাদের অধিকারগুলো আদায় করে নিবে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


