নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতি হোসাইন রাদিয়াল্লাহু 'আনহুর হত্যাকাণ্ড মুসলিম ইতিহাসে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা; সন্দেহ নেই। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ এ ঘটনা স্মরণ করে ব্যাথা অনুভব করে, কিন্তু এ জাতীয় ঘটনা এই একটিই নয়; এর পূর্বেও ঘটেছে অর্ধপৃথিবীর অধিপতি খ্যাত উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুর শাহাদাতে; যাকে বলা হয় 'শহীদে মেহরাব', কারণ তাকে সালাতরত অবস্থায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তেমনি ঘটেছে উসমান যুন্নূরাইন (দুই নূরের অধিকারী) রাদিয়াল্লাহু 'আনহুর শাহাদাতে; ঘটেছে আলী রাদিয়াল্লাহু 'আনহুর শাহাদাতেও। তাই বলে কি এটাকে কেন্দ্র করে নতুন কোন ইবাদাতের উদ্ভাবন করতে হবে, কিংবা কোন নিষিদ্ধ কর্ম সম্পাদন শুরু করতে হবে? মুসলমানদের সর্বাবস্থায়ই মনে রাখা উচিত যে, ইসলামে 'ইবাদাত' সংক্রান্ত বিধান সম্পূর্ণ; এতে আর এক বিন্দু-বিসর্গও যোগ করার নেই। কেউ করলে তা হবে ইসলাম বহির্ভূত বিদ'আত অথবা অন্য কিছু। তবে ইসলামী শরীয়তের বিধিবিধানের বিশ্লেষণ ও যুগের চাহিদা মোতাবেক মূলনীতি ঠিক রেখে ব্যাখ্যা প্রদান বা ইজতিহাদ করা কিংবা কিয়াসের পর্যায় রয়েছে এবং থাকবে; কিন্তু তা কখনোই স্পষ্ট বিধিবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। সুতরাং এ দিনে মুসলমানদের যা করণীয় সে সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ((রমাদানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো আল্লাহ্র মাস মুহার্রামের সিয়াম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত (তাহাজ্জুদ)।)) [মুসলিমঃ ১১৬৩]
এ সিয়াম হবে মুহার্রামের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ; যে কোন দুই দিন। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করে মদীনায় গমন করেন, তখন দেখতে পান যে, ইয়াহূদীরা মুহার্রাম মাসের দশ তারিখে সওম সাধনা করে। জিজ্ঞেস করা হলে তারা বললোঃ এ দিনে আল্লাহ্ ফির'আওনের কবল থেকে মূসা 'আলাইহিস্ সালামকে মুক্তি দেন এবং তাকে দরিয়ায় ডুবিয়ে মারেন; তাই তারা শুকরিয়া স্বরূপ সওম পালন করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা মুসা 'আলাইহিস্ সালামের সাথে অধিক নিকট সম্পর্কিত, সুতরাং তিনি মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিলেন ইয়াহূদীদের বিপরীত করে একদিনের পরিবর্তে দু'দিন সিয়াম পালন করতে। [তিরমিযীঃ ৭৫৫]
এ সিয়ামের কল্যাণ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, ((এ দিনের সওম পালন করলে গত এক বছরের গোনাহ্ মাফ হয়ে যায়।)) [মুসলিমঃ ১১৬২] অন্য হাদীসে এসেছে, ((এ দিনের সওম এক বছরের সওমের ন্যায়।)) [সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ৩৬৩১]
পরিশেষে এটাই কাম্য আমার নিজের মধ্য থেকে এবং সকল মুসলমানদের মধ্য থেকেও যে, আমরা সকলে ইসলামের মূল উৎস থেকে জীবনের জন্য নিয়ম-পদ্ধতির সন্ধান করবো; এবং তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবো; সত্যপন্থী আলেমদের নিকট থেকে সহযোগিতামূলক নসীহত, প্রশ্নোত্তর ইত্যাদি গ্রহণ করবো। কেননা, আমাদের জীবনের জন্য যে, এটাই আমাদের স্রষ্টার পক্ষ থেকে একমাত্র মনোনীত বিধান। আর এর প্রতি আমাদের পরিপূর্ণভাবে মনোযোগ দেয়াই প্রমাণ করবে আমরা কি সত্যিই বোধশক্তিসম্পন্ন, না কি ভূমিকায় উল্লেখিত অন্ধ-আবেগী কিংবা গাফেল সমপ্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত? প্রিয় মুসলিম ভাই/বোন, তাই স্মরণ করুন আল্লাহর বাণীঃ
الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ أُوْلَئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ وَأُوْلَئِكَ هُمْ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ.
((যারা মনোযোগের সাথে কথা শোনে এবং তার মধ্যে যা উত্তম তা গ্রহণ করে। তাদেরকে আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তারাই বোধশক্তি সম্পন্ন।)) [সূরা আয্-যুমারঃ ১৮] আল্লাহ্ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন।
-ফজলে এলাহি মুজাহিদ।
২৯.০১.২০০৭, মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




