somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ: Eyes Without a Face (1960)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ফার্স্ট ইম্প্রেশানেই যেই জিনিসটা আপনার নজর কাড়বে তা হলো, মুভিটির অসাধারণ পোস্টারটি। একটি তরুণী মেয়ে, পুরো মুখমন্ডলটা সাদা রংয়ে ঢেকে দেওয়া, কিন্তু সেই সাদা রংয়ের ভিতর দিয়ে চোখদুটো দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট, সেই চোখের চাহনীতে একরাশ দুঃখ লেগে আছে। এক অর্থে খুবই আগ্রহোদ্দীপক পোস্টার। মুভিটির নামটিও কিন্তু বেশ দারুন শোনায়, Les yeux sans visage যার ইংরেজী করলে দাঁড়ায়, Eyes Without a Face, পোস্টারের সাথে চমৎকার নামকরণ।

Eyes Without a Face একটি ফ্রেঞ্চ মুভি, যা রিলিজ হয়েছিলো ১৯৬০ সালে, জেনারটা ড্রামা- হরর, তবে সেইখানে বেশ একটা ডার্ক স্যুরিয়ালিস্টিক ব্যাপার রয়েছে।একটা কথা এইখানে বলে রাখা ভালো, মুভিটির দুইটি ভার্সন রয়েছে, একটাতো অবশ্যই অরিজিনাল ভার্সন, আরেকটি হলো কিছুটা এডিটেড এবং ডাবিংকৃত ভার্সন। এডিট ভার্সনটির আগমনের পিছনেও অবশ্য বেশ শক্তিশালী কারণ রয়েছে।আর তাহলো, মুভিটির অরিজিনাল ভার্সনটিতে বেশ কিছু দৃশ্য ছিলো যা দেখতে বেশ ভয়ংকর, এজন্য মুভিটি যখন প্রোডাকশানে ছিলো তখন থেকেই সেই দৃশ্যগুলোর ভয়াবহতা কমানোর ব্যাপারে ইউরোপীয়ান সেন্সর বোর্ডের পক্ষ হতে বেশ চাপ আসতে থাকে। এ নিয়ে বেশ কিছু ঝামেলাও পোহাতে হয়। অবশেষে সেন্সর বোর্ডের অনুমতি পেয়ে মুভিটি যখন মুক্তি পায়, মুক্তির পরপরই বিতর্কের ঝড় উঠে, এবং মুভি ক্রিটিকগণ মুভিটিকে ব্যাপক সমালোচনায় প্রশ্নবিদ্ধ করেন। এরপর মুভিটি কিছুটা এডিট এবং ডাবিং করে ১৯৬২ সালের ২৪ অক্টোবর আমেরিকায় মুক্তি দেয়া হয়, এবং এই ভার্সনটি মুক্তি পাবার পর মুভিটি তার রেপুটেশান ফিরে পায়।


মুভিটি বানানো হয়েছে জন রেডনের একটি নভেলকে কেন্দ্র করে। কাহিনীটি খুবই সাদামাটা, কিন্তু সেইটা দেখানো হয়েছে খুবই চমৎকারভাবে। প্লটটি ছোটো করে একটু বলে ফেলি, ডক্টর জেনেসিয়ের একজন বিখ্যাত এবং দক্ষ সার্জন, একদিন তার মেয়ে ক্রিস্টিয়ান সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন, কোনোমতে প্রাণে বেঁচে গেলেও তার চেহারা পুরোটাই ডিসফিগারড হয়ে যায়। সেই দূর্ঘটনার সময় ড্রাইভিং করছিলেন স্বয়ং ডক্টর জেনেসিয়ের। দূর্ঘটনার জন্য নিজের গিল্টি ফিলিংস থেকে তিনি ঠিক করেন, সার্জারির মাধ্যমে তার মেয়ের চেহারা আবারো স্বাভাবিক করে দেবেন, ক্রিস্টিয়ান যে বেঁচে আছে সেটা সবার কাছ থেকে গোপন করা হয়। শহর থেকে অনেক দূরের একটি বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে মুভ করেন জেনেসিয়ের।আর সেই সার্জারির কাজে তাকে সাহায্য করতে থাকে তার পার্সোনাল সেক্রেটারি লুসি। ক্রিস্টিয়ানের মতোন দেখতে একই বয়সী মেয়েদের খুঁজে খুঁজে বের করে ফুসলিয়ে সেই বাড়িতে আনা হতো, কিডন্যাপিংয়ের পুরো দায়িত্ব ছিলো লুসির উপর। তারপর সেই মেয়েটির মুখমন্ডলের উপরের সারফেসটি কেটে তা ক্রিস্টিয়ানের মুখে জোড়া লাগানোর জটিল অপারেশান চালাতেন ডক্টর, কিন্তু জেনেসিয়ের ফিজিক্যাল রিজুভেনেশানের এই প্রসেসটিতে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হন তিনি, এই কাজগুলোতে লুসি ছিলো পরম বিশ্বস্ত ও অনুগত। কারণ একটি দূর্ঘটনায় লুসির চেহারাও ডিসফিগারড হয়ে গিয়েছিলো, তারপর লুসির উপর ফিজিক্যাল রিজুভেনেশান প্রসেসের পরীক্ষা চালান ডক্টর এবং তাতে শতভাগ সফল হন। কিন্তু ঐদিকে একের পর এক এক্সপেরিমেন্ট ব্যর্থ হতে থাকে, একের পর এক ভিকটিম মারা যেতে থাকে কিন্তু তারপরও জেনেসিয়ের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। বারবার ব্যর্থ হতে দেখে ক্রিস্টিয়ান পুরোপুরি ভেঙে পড়ে এবং জেনেসিয়েরের প্রতি আস্থা হারাতে থাকে।কিন্তু এতো কাছাকাছি যাবার পরেও ব্যর্থতা কিছুতেই মানতে চান না ডক্টর, সাফল্যের জন্য আরো মরিয়া হয়ে উঠেন তিনি আর এভাবেই কাহিনী এগুতে থাকে সামনের দিকে।


মুভিটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে, প্লটটি খুবই সংক্ষিপ্ত ও সাদামাটা হলেও তার এক্সিকিউশান ছিলো অত্যন্ত চমৎকার। গোটা মুভিটিকে দেড় ঘন্টারো কম সময়ে এভাবে আটকে রাখাটা বেশ কঠিন, স্টোরিলাইনটা এতোটা সুন্দর করে ফোটানোর কারণে পরিচালক Georges Franju বেশ ভালোভাবেই উৎরে গিয়েছেন, যদিও এটি ছিলো তার ছ্বিতীয় পরিচালিত মুভি কিন্তু ব্যাপক মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন গোটা সময়টি ধরে। আগেই বলেছি, মুভিটিতে ডার্ক সুরিয়ালিস্টিক একটা ব্যাপার রয়েছে, কেমন জানি একটা গথিক গথিক ভাব। সেই সাথে ব্রিলিয়ান্ট মিউজিক স্কোরটাও ছিলো অদ্ভূতরকম মানানসই, বিশেষ করে মুভির শুরুর দিকেরটা যেটি মুভিটির ক্রিপি অ্যাটমোস্ফিয়ারটাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলো।


এবার আসি কাস্টিং নিয়ে, ডক্টর জেনেসিয়েরের "ম্যাড সায়েন্টিস্ট" এলাইক ক্যারেক্টারটি নিয়ে ইউরোপীয়ান সেন্সরবোর্ডের একটি অভিযোগ ছিলো শুরু থেকেই। তবে সেই জেনেসিয়েরের ক্যারেক্টারে চমৎকার অভিনয় করেছেন Pierre Brasseur, তবে আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেক্রেটারি লুসি চরিত্রে Alida Valli এর অভিনয়।


লুসি চরিত্রে Alida Valli





মুভিটির জেনার হররড্রামা হলেও গল্পের ভিতরে বেশ ইমোশন ছিলো, ডেপথ ছিলো, তথাকথিত হরর মুভিগুলোর মতোন নয়।ক্রিস্টিয়ান, লুসি কিংবা জেনেসিয়েরের ইনডিভিজ্যুয়াল চারিত্রিক অবস্থান এবং তার এক্সিকিউশানের দিকে তাকালে খুব ভালোভাবেই এটা চোখে ধরা দেয়।আমার ধারণা সাদাকালো হওয়াতে সেই কাল্ট ও সিনিস্টার ভাবটি মুভিটিতে আরো উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছে। এইরকম প্লটকে ঘিরে হয়তো অনেক মুভি বানানো যেতে পারে কিন্তু এইরকম স্কিলফুল ক্র্যানফ্টিং সম্ভব নয়, বাজি ধরে বলতে পারি।

মুভিটির পেস এবং ভিজ্যুয়ালস দুটোরই সিনক্রোনাইজেশান ছিলো অসাধারণ লেভেলের। একটা কথা বলে নেই, মুভিটিতে বেশ কিছু দৃশ্য রয়েছে যেগুলো খুবই শক্তিশালী এবং ভয়াবহ , বিশেষ করে সার্জারির দৃশ্যটা। সুতরাং কাউকে সাজেস্ট করার আগে একটু ভেবে নেবেন।


সার্জারির সেই দৃশ্য:






সবশেষে বলবো, একটি একটি অসাধারণ ক্ল্যাসিক হরর মুভি, সবার জন্য রেকমেন্ড করলাম। আইএমডিবি প্রোডাইল ঘেটে যখন দেখি মুভিটিকে মাত্র আট হাজার ইউজার এটিকে রেটিং করেছেন তখনি বুঝেছিলাম এটি বেশ আন্ডারেটেড মুভি, তাই মুভিটিকে ঘিরে ততোটা আশা ছিলো না, কিন্তু মুভিটি দেখার পর খুবই ভালো লেগেছে। মুভিটির আইএমডিবিতে ৭.৮ এবং রটেন টমাটোসে ৯৮% রেটিং পেয়েছে আমার পার্সোনাল রেটিং ৮/১০।


ডাউনলোড লিংক:

র‌্যাপিডশেয়ার:

Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৩
২৭টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×