![]()
এক সময় বাংলাদেশ নদী মাতৃক ছিল ।তখন পাবলিক পরীক্ষা গুলোতে নৌকা ভ্রমন রচনা লিখতে আসত। ধীরে ধীরে নদী কমে গিয়ে রাস্তা বাড়ল।সিলেবাস পালটে তখন লিখতাম জার্নি বাই বাস অথবা ট্রেন ।অতপর একসময় "কম্পিউটার" আর "দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান" এর ছোয়ায় অবিসংবাদিত সাজেশন "নৌকা ভ্রমন" হারিয়ে গেল ।জীবনের অদ্ভুত পথ পরিক্রমায় আজ আবারও "জার্নি বাই বাস" নিয়ে আসলাম তবে এবার শুধু বাসে আগে "লোকাল" হবে । গন্তব্য ফ্রম মৌচাক টু ফার্মগেইট !
এক কাপ কষ্টিপাথরের চা (নিরস) আর গোটা দুয়েক ধুম্র শলাকায় অগ্নিসংযোগ করে অবশেষে বহু আকাঙ্খিত ছয় নম্বর বাসের দর্শন পেলাম ।প্রচলিত আছে ঢাকা শহরে হারিয়ে গেলে ছয় নম্বর বাসে উঠতে হয় ।এই বাস সম্ভবত দুনিয়ার সব রুটেই চলে !একসময় না একসময় আপনি বাড়ী পৌছে যাবেন ।যাই হোক বাসে উঠলাম ।উঠলাম বলতে উঠেই হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম না ।সেই রাজ কপাল নিয়েত আর আমি জন্মাই নি ।উঠলাম বলতে হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে রইলাম ।শুনেছি মার্গারেট থ্যাচারকে নাকি লৌহমানবী বলা হয় ।তার স্বামী বেচারার জন্য খারাপ লাগছে।আগুন না হয়েও কিভাবে তিনি একটা লোহাকে সামলে রাখতেন আল্লাহ জানেন ।
তবে আজ চোখের সামনে একজন লৌহমানব দেখলাম ।তিনি আমাদের বাসের ড্রাইভার সাহেব ।বিপ্লবী,বিদ্রোহী কত শত যাত্রীর মুখ নি:সৃত অমর বানী পড়বেন গালি তিনি নির্বিকার ভঙ্গিতে হজম করছেন।যাত্রীদের একজন তার বাবার নাম ভুলিয়ে দিচ্ছেন অথচ তিনি পরমানন্দে কটন বাট দিয়ে কাল চুলকে যাচ্ছেন যেন বাবার নাম ভুলে যাবার মতো আনন্দ দুনিয়াতে আর কিছুতে নেই ।আমি তখনও বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে আছি হটাত আবিস্কার করলাম আমাদের হেলপার সাহেব একজন চরম দার্শনিক মানুষ !তিনি কোন কিছুই পুর্ন দেখেন না,শুন্য দেখেন ।৫০ সিটের গাড়ীতে শ দেড়েক লোক উঠিয়েও তিনি গাড়ী ফাকা দেখছেন ।বাসের গায়ে থাপ্পড় মেরে মেরে বলছেন "ফাকা আছে,আসেন,ফাকা আছে আসেন ।ভদ্রলোক সম্ভবত রাতে বৌ এর পাশে ঘুমিয়েও একই তজবি পড়েন !
যাই হোক গাড়ী চলতে লাগল ।তাড়া আছে বলে একদল যাত্রী গাড়ী থেকে নেমে হাটা শুরু করল ।চার আঙ্গুল কপালের আয়তন বেড়ে হটাত আট আঙ্গুল হলো,বসার মতো একটা সিট পেলাম ।সিট পাওয়ার আনন্দে মনে হল গোল্ডেন পেয়েছি ।উপভোগের জন্য চোখ বুজে আছি ।হটাত মনে হলো আমি "পুলসিরাত" পাড় হচ্ছি !চোখ খুলে দেখি না,এটা মগবাজারের রাস্তা ।বাদশাহ হারুন অর রশীদের আমলে এখানে একটা ওভার ব্রিজের কাজ শুরু হয়েছিল ।রাস্তার অর্ধেক তারা মিলেমিশে খোড়াখুড়ি করছে।বাকী অর্ধেক সম্ভবত মৎস প্রজনন কেন্দ্র ।এরপর বুড়িগঙ্গার পানি নীল নদে গিয়ে কাল হয়ে গিয়েছে অথচ ওভার ব্রিজ আর রাস্তা কোনটার কাজই শেষ হয়নি ।জিনিসটার একটি এনটিক ভ্যালু দাড়িয়েছে ।পর্যটন কর্পোরেশন এটাকে একটা দর্শনীয় স্থান হিসাবে ঘোষনা দিয়ে গালি না শুনে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে ।
এরপর আসল মগবাজার ওভারব্রিজ !চুড়ান্ত ধৈর্যের পরীক্ষার স্থান ।কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের আবেদন কারীর ধৈর্যর পরীক্ষা নিতে মগবাজার টু বাংলা মটর বাস যাত্রার ব্যাবস্থা করতে পারে ।বিষয়টা বেশ সৃজনশীল ।তাড়া আছে বলে মৌচাক থেকে নেমে যাওয়া যাত্রীরা চোখের সামনে দিয়ে বাংলা মটরের দিকে হেটে যাচ্ছে ।হটাত মমতাজের গানটি মনে পড়ল "আমার বন্ধু যখন বউ লইয়া.... .. !পাক্কা দেড় ঘন্টা পর অবশেষে গাড়ী ছাড়ল ।হটাত সুপারভাইজার সাহেব খেয়াল করলেন গাড়ীতে তো বসার মতো বহু জায়গা খালি আছে ।তিনি বাস থামালেন বিনিময়ে তার মা বোনের এক পসলা ইজ্জত উঠে গেল ।তারপরও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ।যাত্রী উঠল,গাড়ী ছাড়ল তারপর একসময় ফার্মগেইট এসে পৌছুলো ।তখন রাত দশটা ।মৌচাক থেকে ফার্মগেট আসতে সময় লাগল সাড়ে তিন ঘন্টা ।ততক্ষনে আমার বন্ধু ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে মালয়েশিয়া পৌছে গেছে ।দেশ এগিয়ে যাচ্ছে,ভাবতে ভালই লাগে

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




