হুমায়ুন আহমেদ এবং হিমুর শেষ যাত্রা ! (কাল্পনিক)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রারম্ভিকা :
১৯ শে জুলাই ২০১২
স্থানীয় সময় রাত ১১ টা ২০
নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হাসপাতালের শ্বেত শুভ্র বিছানায় নিথর নিস্তব্দ হয়ে শুয়ে আছেন স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের “হ্যামিলিয়নের বাশিওয়ালা” হুমায়ুন আহমেদ ।শরীর জুড়ে অসংখ্য ডাক্তারি যন্ত্রপাতি ।তিন চার জন ডাক্তার নি:পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মনিটরের নিউমরিক সংখ্যা গুলোর দিকে দিকে।হার্টের পালস আর প্রেসারের দ্রুত নেমে যাওয়াতে দুশ্চিন্তা আর কপালের ভাজ বাড়ছে ।গতকাল থেকে আছেন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে ।গতকাল থেকে কৃত্তিম ভাবে বাচিয়ে রাখা হয়েছে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে ।বেচে উঠবার কোন আশা নেই, ডাক্তারের এমন অনাকাঙ্খিত ঘোষনায় বাধ্য হয়ে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়ার অনুমতি দিলেন শেষ জীবনের একমাত্র ছায়াসঙ্গী শাওন।অনুমতি পেয়ে খুলে ফেলা হলো হুমায়ুন আহমেদের সাথে পৃথিবীর সবশেষ সংযোগ গুলো ।কক্ষ জুড়ে নেমে এল রাজ্যের বিসন্নতা ।মহাকালের অনন্ত অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন একজন গল্পের যাদুকর ।সেদিন আকাশে পুর্নিমা চাদ ছিল।চন্দ্রগ্রস্থ মানুষটির শেষ ইচ্ছা হয়ত পরম করুনাময় বেখেয়ালের পুরন করেছেন ।তবু সেটা তার সুখের মৃত্যু নয় ।কারন তিনিই বলেছেন :
সব মৃত্যুই কষ্টের,সুখের মৃত্যু তো কিছু নেই।(কোথাও কেউ নেই।পৃ:৪০)
২৩ জুলাই ২০১২ সোমবার ।
স্থানীয় সময় সকাল ১১ টা ২০ ।
একটা আমড়া হাতে নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে হিমু ।আমড়াটা সুন্দর করে ফুলের মতো কেটে একটা কাঠির মাথায় গেথে দেয়া ।দেখতে সবুজ রংয়ের পদ্মফুলের মতো লাগছে ।এত সুন্দর দেখতে একটা জিনিস খেতে মন চাইছে না তাই দীর্ঘক্ষন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।কিছুক্ষন বাদেই তিন নম্বর বাসের দেখা মিলল ।অপেক্ষমান জনতা একটু যেন দুলে উঠল ।বাসে ওঠার জন্য হিমুকে তেমন চিন্তিত মনে হলো না ।তার সমগ্র চিন্তা জুড়ে এখন কাঠিতে ভাড়া আমড়া ।এটাকে অক্ষত রেখে সহি সালামতে বাসে ওঠা যাবে কি না !
গাজীপুরের বাস আর ইশপের গল্পের কচ্ছপ একসাথে রওনা দিলে কচ্ছপ আগে শাহবাগ গিয়ে পৌছুতো ।শুধু পৌছুতো না।এক পশলা ঘাস পাতাও (চা বিড়ির খরগোসীয় ভার্সন) খাওয়া হয়ে যেত ।হলুদ পান্জাবী পড়া এক যুবক খালি পায়ে হাতে একটা আমড়া নিয়ে দিব্বি ঝুলে ঝুলে যাচ্ছে, উপস্থিত যাত্রীদের নিকট বিষয়টা কিছুটা কৌতুকপুর্ন বটে ।
; ভাইজান,অনেকক্ষন তো লাড়াইলেন অহন একটা কামড় দেন ?
: নাহ,ভাবতেছি আজ কামড় দিব না।কাল দিব ।
; মানে ?
: মানে,আমি সোমবার মানুষ ছাড়া কিছুতে কামড় দেই না ।আইজ সোমবার ।আসেন আপনেরে একটা কামড় দেই ।আমার দাতের অবস্থা ভাল ।ছোটবেলায় আমার নানাজান বলতো আমার দাত নাকি ইন্দুরের মতো ধার।বেশী ব্যাথা দিমু না।খালি কুট্টুস কইরা একটা কামড় !!
উপস্থিত যাত্রীদের মনে ভীতির সন্চার হওয়াতে আলোচনা বেশী দুর এগোল না ।এদেশের মানুষ অহেতুক ভয় পায় ।রিকসার টায়ার বাস্ট হইলে ভয়ে দিকবিদিক দৌড়াদৌড়ি করে,দোকানের শাটার নাময় কিন্তু রোড এক্সিডেন্টে প্রতিদিন ৩৫ জন মরে শুইনা ভয় পায় না ।দাত কেলাইতে কেলাইতে বাস ট্রেনের ছাদে উঠে বলে হায়ত মউয়াত আল্লাহর হাতে !!
চলন্ত বাসে হটাত বিড়ালের ডাক শোনা গেল!মিয়াও,মিয়াউ ।ঢাকা শহরের বাসে মানুষ দাড়ানোর জায়গা থাকে না সেখানে বিড়াল আসবে কিভাবে ।এদিন ওদিক একটু ইতিউতি করে শব্দের কেন্দ্রস্থল খুজতে খুজতে আবিস্কার করল বিড়ালের ডাক তার পকেট থেকে আসছে।হিমুর পান্জাবীতে পকেট থাকে না ।তারও নেই।কিন্তু মাজেদা খালা কোমড়ের সাথে একটা ঝোলা ধরিয়ে দিয়েছে ।তাবলিগ জামাতের হুজুররা যেই ঝোলায় মেছওয়াক, কুলুপ, টিস্যু,টেকাটুকা রাখে সেই গুলা ।মাজেদা খালা আমার ঝোলায় একটা মোবাইল পুরে দিয়েছে।তার মতে গরুকে বাধতে যেমন দড়ি দরকার,তেমনি আমাকে বাধতে মোবাইল দরকার ।মোবাইল হলো আমার গলার দড়ি ।আমি যে অনেক্ষন গলার দড়ি কোমড়ে গুজে হাটছি তা খেয়াল করিনি ।বিড়ালের আওয়াজে সম্বিত ফিরে পেলাম :
; হ্যালো হিমু ভাই
: হমম
; কোথায় যাও ?
: সৃষ্টিকর্তার কাছে যাচ্ছি,দোয়া রাখিস ।
; ধুর,কি সব আজোংলা কথা বলো।সত্যি করে বলো কই যাও ।
: আজোংলা কথা কিরে ?
; বুঝবা না ।এটা আমার নিজের বানানো শব্দ !
: না বুঝলে নাই ।
; হ্যালো,হ্যালো … .. . . হ্যালো হিমু ভাই ।
হিমু ফোন কেটে দিল ।বাবার উপদেশ, মানুষের প্রতি আগ্রহ এবং ভালবাসা প্রকাশ করতে নেই ।রুপার নম্বর মনে করার চেষ্টা করল ।রুপার নম্বর মনে রাখার একটা সহজ টেকনিক টা মনে করার চেষ্টা করল ।সেটা হলো “শিয়াল দুই পায়ে দাড়িয়ে” ।শিয়াল ইংরেজী Fox । ইংরেজী এলফাবেটের ক্রমঅনুসারে লিখলে হয় 61524 আর দুই পায়ে দাড়িয়ে মানে 11। রুপার নম্বর মনে পড়েছে 6152411 !
রুপাকে ফোন দিয়ে পাওয়া গেল না ।তিন নম্বর বাস ছুটে চলেছে ।এয়ারপোর্ট, বনানী, মহাখালি ফার্মগেট হয়ে শাহবাগ ।
শহীদ মিনার তখন যেন জনসমুদ্র ।হুমায়ুন আহমেদের লাশ নিয়ে আসা হয়েছে।হাজার হাজার মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে একজন ঘুমন্ত মানুষকে দেখে ফিরছে ।কফিনের উপর আছড়ে পড়ছে নুহাশ ।মা আয়েশা ফয়েজ নির্বাক হয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ছোট্ট বাচ্চুর দিকে । টানা চারদিনের নির্ঘুম রাত আর ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়েছে শাওন ।
হিমু জানে মানুষের উপস্তিতি কখনই তার জনপ্রিয়তার মানদন্ড নয় ।শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার সমাবেশে যদি পাচ লাখ মানুষ উপস্থিত হয় তবে তাদের ফাসির মন্চে এর কয়েক গুন মানুষ উপস্থিত হবে ।এ ভিষন জাতি কৌতুহলী জাতি ।এরা দলবেধে রাস্তার ড্রেন খোড়াখুড়ি দেখতেও ভালবাসে ।কাদতে হলে চোখে পানি আনতে হবে এমন কোন কথা নেই হৃদয় কান পেতে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায় ।হিমু চারিদিকে এই কান্নার আওয়াজ পাচ্ছে ।
একটু দুরে মিসির আলী দাড়িয়ে আছেন।তার পাশে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া শুভ্র ।মাজেদা খালা খালুকে নিয়ে এসেছেন ।রাশভারী লোকটা কেমন যেন শিশু হয়ে গেছে ।কেদে টেদে সর্দি বাধিয়ে ফেলেছে ।বাকের ভাই,বদি,মজনু অহেতুক ছোটছুটি করছে ।বাকের ভাইয়ের চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে গেছে ।নীল শাড়ি পড়ে মুনার পাশে দাড়িয়ে আছে রুপা ।এখানে আসবে বলেই হয়ত রুপা ফোন ধরেনি ।
মিসির আলী : কেমন আছো হিমু ?
হিমু : ভালো স্যার ।আপনি দু পায়ে দুটো স্যান্ডেল পড়ে এসেছেন কেন ?
মিসির আলী : দুটো দুই রকম জগত ।তাই দু পায়ে দু রকম স্যান্ডেল ।
হিমু : দর্শনটা কি আগেই জানা ছিল নাকি স্যান্ডেল পড়ার পর বানিয়েছেন ।
মিসির আলী : এখানে আসার পর সাজিয়েছি ।
হিমু : ধানমন্ডী ৩/এ ।আর কখনও যাবেন ?
মিসির আলী: কেন যাব না ।এতদিন আমি হুমায়ুনের মধ্যে বেচে ছিলাম আজ থেকে হুমায়ুন আমার মধ্যে বেচে থাকবেন ।আত্মার মৃত্যু নেই ।আত্মা অবিনশ্বর ।
হিমু : আপনার যুক্তি,বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষা !!!
মিসির আলী: বাদ দেও ।জানো হিমু হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন রসায়নের ছাত্র অথচ বেশী ভালবাসতেন আদি ভৌতিক যুক্তিহীন পৃথিবীকে ।
হিমু : কিভাবে ?
মিসির আলী : উনি তোমাকে নিয়ে ২৪ টি বই লিখেছে ।অথচ আমাকে নিয়ে লিখেছে মাত্র ১৯ টি !
হিমু: তাহলে তো উনি নিজেকে সবথেকে কম ভালবাসতেন ।ওনার আত্মজীবনী মোটে ১০টি!
মিসির আলী : যে মানুষকে এত মানুষ ভালবাসে তার আর নিজেকে ভালবাসার দরকার কি।
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন
মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?
আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস
রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------
ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।
জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন