আরাফ ! সামাজিক জীবনে ভীষণ ব্যাস্ত এক মানুষ । যখন অফিসে থাকে তখন পূর্ণা অথবা পরীর খোঁজ নেয়ার সময়টুকুও পায় না । পূর্ণা হল আরাফের সহধর্মিণী আর পরী ! সে হল আরাফের আত্মা, একমাত্র মেয়ে । দিনের বেশিরভাগ সময়ে আরাফ যদিও দুইজনকেই ভীষণ মিস করে । কিন্তু প্রফেশনাল কাজে এত ব্যাস্ত থাকতে হয় যে সেটা প্রকাশ করার অবকাশ থাকে না ।
অন্যান্য দিনের মতো আজকেও প্রচণ্ড ক্লান্তি নিয়ে মধ্যরাতের দিকে ঘরে ফেরা । আরাফ জানে, কলিং বেল বাজানোর আগেই দরজা খুলে যাবে । কারণ, সবসময়ের মতো পূর্ণা নিশ্চয়ই বারান্দায় বসে কফি পান করতে করতে অপেক্ষা করছে । মুল ফটকে গাড়ি ঢুকতে দেখেই সদর দরজার সামনে এসে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করেই দরজা খুলে একটু সরে দাড়ায় । সেই মধ্যরাতেও পূর্ণার ঠোঁটে স্মিত হাসিচ্ছটা লেগে থাকে । এই একটি মুহূর্তের জন্যই কেন যেন রাত বাড়ার সাথে সাথেই ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করে আরাফ ।
আজ এখনও পূর্ণা দরজা খুলছে না কেন ?? প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো হয়ে গেলো । গত আট বছরে এমনতো কখনোই হয় নি । তবে কি হল আজ !! আরাফ একটু উদ্বিগ্ন হয়েই পকেট থেকে মাস্টার কী দিয়ে দরজা খুলে অন্ধকার প্যাসেজ দেখে ভয় পেতে শুরু করলো । পূর্ণা ও পরী অন্ধকার খুব ভয় পায় বলে বাসায় সব সময় আলোয় আলোকিত থাকে । মাঝে মাঝে আরাফ খুব বিরক্ত হলেও আজ আলো না থাকাতে ভয় পেয়ে গেলো । প্রায় দৌড়ে শোবার ঘরে গিয়ে আলো জ্বালিয়ে বিছানায় মা অথবা মেয়ে কাউকেই দেখতে পেলো না । এবার উদ্বিগ্ন আর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে নাম ধরে ডাকা শুরু করলো । পূর্ণা । পরী ………… পূর্ণা ! ডাকছে আর পরীর শোবার ঘরে, লাইব্রেরীতে, হলরুমে, ডাইনিংএ, রান্নাঘরে খুঁজে বেড়াচ্ছে । কেউ কোন সাড়া দিচ্ছে না আর কাউকে পাওয়াও যাচ্ছে না । এক মুহূর্তে হৃদয় স্তবির হওয়ার মতো অবস্থা ।
ওহ ! শোবার ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দা মা ও মেয়ের এই বাড়ির সবচেয়ে প্রিয় । কি মনে করে আবারও দৌড়ে সেখানে যেতেই দেখতে পেলো ফুলে ফুলে সাজানো পুরো বারান্দায় পরী একমনে বসে বসে মোমবাতি জ্বালিয়ে চলেছে । প্রচণ্ড স্বস্তিতেই হয়তো প্রায় চিৎকার করে “পরী” বলে ডাক দিয়ে মেয়ে কে কোলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখল । প্রাণ ফিরে পেলো যেন আরাফ ।
স্বস্তির অনুভূতিতে নিজেকে স্তির করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শুনতে পেলো,
পরী প্রায় ফিসফিস করে বলছে “ শুভ জন্মদিন বাবা” ।
ঐ মুহূর্তে আরাফ গতকালের তারিখটা মনে করার চেষ্টা করলো এবং মনে পড়তেই হেসে ফেললো । আরও শক্ত করে মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে আলতো করে কপালে আদর করে বলল “ভালবাসি মা” ।
বাবার পরীমনিটা কাঁধে মাথা রেখে বলল “তোমার চেয়ে বেশি, আমি ভালবাসি’” ।
শুনেই হেসে ফেললো আরাফ। তবে এই ছিল মা আর মেয়ের পরিকল্পনা । মা আর মেয়ের পুরোটা পৃথিবী জুড়ে শুধুই আমি । অবাক ভালোবাসা ।
এরপর মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে চারপাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো পুরো বারান্দা জুড়ে প্রিয় ফুলে ছেয়ে আছে । চারিদিকে শুধু মোমের নিয়ন আলোয় আলোকিত । সুগন্ধি ফুলের সুরভি আর নিয়ন আলোয় আলোকিত স্থানটাকে কেন যেন আরাফের মনেহল স্বর্গ নিশ্চয়ই এমনই হয় । এই প্রার্থীব স্বর্গের অপ্সরী কে খুঁজতে লাগলো । দেখল, একটু দূরেই দাড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে ।
আর পূর্ণা !!
অনেক সুখে হয়তো ঝাপসা চোখে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ নিজের পৃথিবীকে দেখেছিল । ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
একটা সময়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো । এটা স্বপ্ন ছিল, ভাবতেই বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেলো মন । চোখের কোণে জলখানি সত্যি ছিল । তবে এটা কি ছিল !!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫০