somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"প্রতীক্ষা তাই প্রহরবিহীন, আজীবন ও সর্বজনীন"

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরাফ ! সামাজিক জীবনে ভীষণ ব্যাস্ত এক মানুষ । যখন অফিসে থাকে তখন পূর্ণা অথবা পরীর খোঁজ নেয়ার সময়টুকুও পায় না । পূর্ণা হল আরাফের সহধর্মিণী আর পরী ! সে হল আরাফের আত্মা, একমাত্র মেয়ে । দিনের বেশিরভাগ সময়ে আরাফ যদিও দুইজনকেই ভীষণ মিস করে । কিন্তু প্রফেশনাল কাজে এত ব্যাস্ত থাকতে হয় যে সেটা প্রকাশ করার অবকাশ থাকে না ।

অন্যান্য দিনের মতো আজকেও প্রচণ্ড ক্লান্তি নিয়ে মধ্যরাতের দিকে ঘরে ফেরা । আরাফ জানে, কলিং বেল বাজানোর আগেই দরজা খুলে যাবে । কারণ, সবসময়ের মতো পূর্ণা নিশ্চয়ই বারান্দায় বসে কফি পান করতে করতে অপেক্ষা করছে । মুল ফটকে গাড়ি ঢুকতে দেখেই সদর দরজার সামনে এসে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করেই দরজা খুলে একটু সরে দাড়ায় । সেই মধ্যরাতেও পূর্ণার ঠোঁটে স্মিত হাসিচ্ছটা লেগে থাকে । এই একটি মুহূর্তের জন্যই কেন যেন রাত বাড়ার সাথে সাথেই ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করে আরাফ ।

আজ এখনও পূর্ণা দরজা খুলছে না কেন ?? প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো হয়ে গেলো । গত আট বছরে এমনতো কখনোই হয় নি । তবে কি হল আজ !! আরাফ একটু উদ্বিগ্ন হয়েই পকেট থেকে মাস্টার কী দিয়ে দরজা খুলে অন্ধকার প্যাসেজ দেখে ভয় পেতে শুরু করলো । পূর্ণা ও পরী অন্ধকার খুব ভয় পায় বলে বাসায় সব সময় আলোয় আলোকিত থাকে । মাঝে মাঝে আরাফ খুব বিরক্ত হলেও আজ আলো না থাকাতে ভয় পেয়ে গেলো । প্রায় দৌড়ে শোবার ঘরে গিয়ে আলো জ্বালিয়ে বিছানায় মা অথবা মেয়ে কাউকেই দেখতে পেলো না । এবার উদ্বিগ্ন আর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে নাম ধরে ডাকা শুরু করলো । পূর্ণা । পরী ………… পূর্ণা ! ডাকছে আর পরীর শোবার ঘরে, লাইব্রেরীতে, হলরুমে, ডাইনিংএ, রান্নাঘরে খুঁজে বেড়াচ্ছে । কেউ কোন সাড়া দিচ্ছে না আর কাউকে পাওয়াও যাচ্ছে না । এক মুহূর্তে হৃদয় স্তবির হওয়ার মতো অবস্থা ।

ওহ ! শোবার ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দা মা ও মেয়ের এই বাড়ির সবচেয়ে প্রিয় । কি মনে করে আবারও দৌড়ে সেখানে যেতেই দেখতে পেলো ফুলে ফুলে সাজানো পুরো বারান্দায় পরী একমনে বসে বসে মোমবাতি জ্বালিয়ে চলেছে । প্রচণ্ড স্বস্তিতেই হয়তো প্রায় চিৎকার করে “পরী” বলে ডাক দিয়ে মেয়ে কে কোলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখল । প্রাণ ফিরে পেলো যেন আরাফ ।
স্বস্তির অনুভূতিতে নিজেকে স্তির করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শুনতে পেলো,
পরী প্রায় ফিসফিস করে বলছে “ শুভ জন্মদিন বাবা” ।

ঐ মুহূর্তে আরাফ গতকালের তারিখটা মনে করার চেষ্টা করলো এবং মনে পড়তেই হেসে ফেললো । আরও শক্ত করে মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে আলতো করে কপালে আদর করে বলল “ভালবাসি মা” ।
বাবার পরীমনিটা কাঁধে মাথা রেখে বলল “তোমার চেয়ে বেশি, আমি ভালবাসি’” ।

শুনেই হেসে ফেললো আরাফ। তবে এই ছিল মা আর মেয়ের পরিকল্পনা । মা আর মেয়ের পুরোটা পৃথিবী জুড়ে শুধুই আমি । অবাক ভালোবাসা ।

এরপর মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে চারপাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো পুরো বারান্দা জুড়ে প্রিয় ফুলে ছেয়ে আছে । চারিদিকে শুধু মোমের নিয়ন আলোয় আলোকিত । সুগন্ধি ফুলের সুরভি আর নিয়ন আলোয় আলোকিত স্থানটাকে কেন যেন আরাফের মনেহল স্বর্গ নিশ্চয়ই এমনই হয় । এই প্রার্থীব স্বর্গের অপ্সরী কে খুঁজতে লাগলো । দেখল, একটু দূরেই দাড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে ।

আর পূর্ণা !!

অনেক সুখে হয়তো ঝাপসা চোখে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ নিজের পৃথিবীকে দেখেছিল । ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

একটা সময়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো । এটা স্বপ্ন ছিল, ভাবতেই বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেলো মন । চোখের কোণে জলখানি সত্যি ছিল । তবে এটা কি ছিল !!!!


সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫০
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ড: ইউনুস দেশের বড় অংশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৫:২০



ড: ইউনুসের ১ম বদনাম হলো, তিনি 'সুদখোর'; ধর্মীয় কোন লোকজন ইহা পছন্দ করে না; যারা উনার সংস্হা থেকে ঋণ নিয়েছে, তারাও উনাকে সুদের কারণে পছন্দ করে না; ধর্মীয়দের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগে তো পানি দিতনা মারার আগে। এখন ভাত পানি খাওয়াইয়া মারে।

লিখেছেন আহসানের ব্লগ, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪


আগে তো পানি দিতনা শেষ নিস্বাশের আগে। এখন ভাত পানি খাওয়াইয়া মারে। আর শামীম মোল্লা ভাইয়ের কপালে অবশ্য অত্যাচার ছাড়া কিছু জোটে নাই। “ভাই আমারে আর মাইরেন না বলে অনুনয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে থাকতে দেয়ায়, আপনি ভারতের উপর কতটুকু রেগেছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৩



"শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নো-ম্যানসল্যান্ডে ঘোরাফিরা করেছে; আশা করছে, যদি কোন বিএসএফ ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত প্রবেশ করার ব্যবস্হা করে;" ইহা ছিলো ১ জন "নতুন মুক্তিযোদ্ধা"... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ এবং ২০২৪ এর হানাদার ও রাজাকারকে সমর্থন করা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০০



১৯৭১ সালের হানাদার আমাদের দেশের সম্পদ তাদের দেশে নিয়েগেছে। ২০২৪ এর হানাদার আমাদের দেশের সম্পদ বিভিন্ন দেশে নিয়েগেছে। কারণ আমাদের দেশই এদের দেশ। ১৯৭১ সালের হানাদার ছিলো ভিনদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যা আর আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া বিবেক

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬


একটা গল্প প্রচলিত আছে এমন: রমজান মাসে বাংলাদেশে বেড়াতে এলেন উত্তর কোরিয়ার এক নাগরিক। কোনো এক রোজাদারকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা সারাদিন না খেয়ে থাকেন কেন?
উত্তরে রোজাদার বললেন, আমরা স্র্রষ্টার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×