গরমের দেখা মনে হয় এই বছর আর হবে না। রোযা শুরু হবার পর থেকেই মোটামুটি ঠান্ডা। পুরো রোযাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো হয় ২৭ ডিগ্রী। অন্যান্যদিন ১৫-১৭ ডিগ্রীতেই আছে। আজ সকালে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে মনে হলো সামার জ্যাকেটেও ঠান্ডা লাগতেছে। কাছাকাছি ড্রাগস্টোরে থাকিয়ে দেখি তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী। সময় সকাল ৮ ঘটিকা। চিন্তা করলাম ভোরে তাহলে আরো ২/১ ডিগ্রী কম ছিলো।
রোযা আজ ২৭ নম্বর চলতেছে। ২৯ হলে বৃহস্পতিবার ঈদ হবে এখানে। কোন কোন কমিউনিটি (তার্কিশ, এ্যারাবিশ) এরা ইতিমধ্যে বৃহস্পতিবার ঘোষনা করে ফেলেছে। আমরা চাঁদ দেখার উপর ভরসা করে আছি। দিন নির্দিষ্ট না হওয়ায় অফিসে ছুটির নোটিশ ঝুলাতে পারতেছি না। অনেক ছুটি যদিও পাওনা। কিন্তু নভেম্বরে হজ্জ্ব করার ইচ্ছে। ওখানেই চলে যাবে সব ছুটি। কিছু করার নাই। ম্যানেজ্যারের সাথে কাল কথা বলবো। সন্ধ্যার পর একটা মেইল করে বলে দিবো পরের দিন আসবো কি না। ম্যানেজার অটো ভ্যাকেশনে জানিয়ে দিবে। আমার জমাকৃত অতিরিক্ত ঘন্টা থেকে ৮ ঘন্টা মাইনাস হয়ে যাবে।
নতুন একটা গাড়ি কিনবো বলে পুরনোটাকে বিদায় দিয়েছি বেশ কিছুদিন হলো। সামারে ঝড়-বৃষ্টি কম হয়। একটা সাইকেল চালানো, একটু হাটাহাটির ইচ্ছে। কিছুটা ইচ্ছে করেই নতুন গাড়ি কিনা হচ্ছে না। এমনিতেই আমি স্পিড লিমিট ভঙ্গ করি খুব বেশী। তার উপর এতো বেশী সিগনাল যে গিয়ার, এক্সেলটর চাপতে মাথা গরম হয়ে যায়। সর্বোপরি শহরের যোগযোগ ব্যবস্হা এতো ভালো যে গাড়ির দরকারই হয় না। আগের গাড়ি কিনে শরীরের ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি এই বসয়েই কোমর ব্যথার লক্ষন শুরু হয়ে গিয়েছিলো। বাসা থেকে নেমেই গাড়ি। অফিসের নীচে পার্কিং করে ১০ ঘন্টা বসে কাজ। বাসায় ফিরে আবার শুয়ে বসে সময় কাটানো। আমার মতো আইলশ্যা (জিমে যেতে কষ্ট হয়) তো ওজন বাড়বেই। অবশ্য রোযা উপলক্ষ্যে প্রায় ৪ কি.লো ওজন কমানো গেছে। রোযা পরবর্তি মাস খানেকের মধ্যেই আগের ফর্মে ফিরে যাবো
শুক্রবার মসজিদের তারাবির নামায শেষ হতে প্রায় রাত ১২টা বেজে গেলো (ইফতারের সময় সন্ধ্যা ৮:৩০। এশা ১০:৩০)। ছোটভাইয়ের গাড়ি নিয়ে আসলাম যে পরের দিন তো নামাযে যাবোই। যদিও বাসায় আসতে ৩০/৩৫ মিনিট লাগে । তারপরও মনে হলো গাড়ি সামনে আছে যেহেতু নিয়েই যাই।
শুক্র/শনিবার ট্রেন স্টেশনের আশেপাশে ঈদ উতসব। অনেকগুলো নাইট ক্লাব থেকে শুরু করে রেড জোন বেশ কয়েকটি। পাশেই মসজিদ। সন্ধ্যার পর গাড়ি পার্ক করা মহা ঝামেলার কাজ। কোনভাবেই পার্কের জায়গা পাওয়া যায় না। পুলিশের আনাগোনাও থাকে প্রচুর ঐসময়। নির্দিষ্ট জায়গায় পার্ক না করলে টিকেট খাওয়ার পাশাপাশি গাড়ি তুলে নিয়েও যেতে পারে। তখন প্রায় ৪০০ ইউরো দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে হয়।
ইফতার করেই তাড়াতাড়ি বের হলাম যে পার্কিং একটা পেয়ে গেলেই বাঁচি। সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে মনে মনে ভাবতেছিলাম গাড়ি থাকার মজাই আলাদা। বাসার নীচে পার্ক করা গাড়ি। উঠে পড়ো। জায়গামতো গিয়ে নেমে যাও। হাটা অথবা বাস ট্রামের জন্য অপেক্ষার কোন ঝামেলাই নাই। মোটামুটি শিস দিতে দিতেই গাড়ি স্টার্ট দিলাম
মসজিদের পাশাপাশি আসতেই মাথা মোটামুটি গরম। ১০ মিটার আগানো যায় না একটা করে সিগনালে লাল বাতি জ্বলে। পুলিশ কাকারাও মাঝে মাঝে গাড়ি থামিয়ে এ্যলকোহলের মাত্রা টেষ্ট করতেছে। কিছুক্ষনপর শুরু হলো আসল হ্যাপা। প্রায় ২৫ মিনিট ঘুরতে ঘুরতে পার্কের কোন জায়গাই খুজে পাচ্ছিলাম না। কয়েকবার ভেবেছি বাসায় গিয়ে নামায পড়ে নেই। পরে একটি স্কুলের সামনে অর্ধেক ঝিগঝাগ লাইনে পার্ক করে দৌড় দিয়ে মসজিদে। তখন অলরেডি প্রথম রাকাত শেষ। নামাযে দাড়িয়ে আছি ঠিকই। মাথায় তখন একটাই চিন্তা- টিকেট লাগায় নাকি, গাড়ি তুলে নিয়ে যায় নাকি? আর গালি দিতেছি - কোন হালায় গাড়ি চালায়।
ফরয নামায শেষে ছোটভাইকে চাবি দিয়ে বল্লাম একটু খারাপ জায়গায় পার্ক করেছি। তুই তাড়াতাড়ি গিয়ে গাড়ি সরা। আর আমি কান ধরতেছি। গাড়ি নিয়ে আর কখনো এই জায়গা পার্ক খুজতে আসবো না।
দেশে এসে একটা লম্বা ছুটি কাটাতে খুব মঞ্চায়। কিন্তু ছুটি তো নাই। আর কাজ করতে ভাল্লাগে না।
সবাইকে আগাম ঈদ মোবারক।