somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিলীমা বোঝেনা, বুকের মাঝপুকুরে ঘাঁই মারে পোনামাছ .....

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নিলীমা বোঝেনা । বোঝেনা ।
বোঝেনা বলেই নিলীমা হুটহাট হারিয়ে যায় এদিক সেদিক । ভ্রমর পাখনা মেলে ঘরের আগল খুলে আলটপকা কই কই যে যায় ! সন্ধ্যেবেলার অপেক্ষা রাতে গড়ায় । নিলীমা ফেরেনা । কোন তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে সে কখন কোথায়, কোনখানে ! এদিকে পূর্ণিমায় যে নোনা গাঙে জোয়ার উথলায় , মাঝ পুকুরে ঘাঁই মারে পোনামাছ তার টুকটাক গল্প অজানা থেকে যায় নিলীমার কাছে । নিলীমার এই না থাকা যে বুকের গাঙে , মনের পুকুরেও কষ্টের ঘাঁই মেরে যায় তার ব্রাত্যসঙ্গীত এক তুড়িতে উড়িয়ে হররোজ তার কিন্নরী পায়ের ঝঙ্কার সরে সরে যায় দূর থেকে আরও দূরে ...... !
নিলীমা বোঝেনা , যে ভাঙা জমিনে তার পরাগায়ণ সে জমিন পড়ে থাকে একা এবং একাকী অনাবাদি । একটুখানি জলে তার গতর যে লাউডগার মতো লকলকিয়ে উঠতে পারে বোঝেনা সে, বোঝেনা ! সে জমিনের ভাঙা শরীরের ভেতরেও কোথায় কাউকে মুগ্ধ করার মতো আস্ত একখানা মন যে বসে থাকতে পারে, খুলে রাখতে পারে উদোম বুক,বইয়ে দিতে পারে উথাল পাথাল ভালোবাসা নিলীমা বোঝেনা তা-ও ! নিলীমা বোঝেনা, সেখানেই আছে তার দু’দন্ড জিরোবার ঠাঁই, বসে থাকা চুপচাপ,সবই । সেখানেই বাঁধা আছে তার ভালোবাসার ময়ুরপঙ্খি নাও, আছে ঘাট ,পারাপারের মাঝি ।

তবুও ফাজিল একটা পাখির মতো টুক করে ডেকে নিলীমা পূবে উড়ে যায় । এ তার নিত্যদিনের চর্চিত কানামাছি -ভো -ভো খেলা । তার নি-আঁচল শরীরের পালে বাউল হাওয়া লাগিয়ে সে তখন দিগ্বিদিক। ভাঙা জমিনের সিক্ত ভালোবাসা সে বাউরি হাওয়ার ঝাপটায় শুকিয়ে যেতে চায় । ভরা চৈত মাসের খরা ভর করে যেন ভাঙা জমিনের আলে, এক অকালে। থোকায় থোকায় ধরে কষ্টের গোটা গোটা বেতফল !

নিলীমা পরিযায়ী হয়ে ওঠে । থিতু হয়না কোথাও । এ যেন তার অনেককালের অর্জিত অভ্যেস ।

নিলীমা বোঝেনা , কোথায় তার সেই জোনাক জ্বলা রাত । অন্ধকারে পিদিম জ্বালা গাঁয়ের মেঠোপথে কি করে হাটতে হয়, হাতে রেখে হাত ! বোঝেনা কোথায় বা সেই ছায়া সুনিবিড় হিজল গাছের তল ! শিশির ভেজা ভোরের দূর্বাঘাসের দল হাতে তুলে দিলেও নিলীমা বোঝেনা, এ যে তার মেখলা কুন্তল । দীর্ঘদিন প্রতীক্ষায় থাকার পরে এ যে তার প্রাপ্তি , সে প্রাপ্তির ধানিস্বাদও বোঝেনা সে ।
অবুঝ নিলীমা ছুটে চলে পথ থেকে পথে, নিশিন্দির ডাক ডেকে যায় । ধরা দেয়না । লুটানো শাড়ীর আঁচলের মতো ভোরের ভ্যাবলা রোদ্দুর তখন লুটিয়ে থাকে জানালায় । ঝুলবারান্দায় বসে থাকে ন্যাতানো বিকেল । বিপুল স্তনের মতো তুলতুলে, কামজর্জর উদ্ধত রাত ফনা তোলে । সে রাত উজিয়ে টেরি কেটে দাঁড়ায় এসে আর এক ভদ্রবেশী ভোর । মালয় সাগর থেকে নীমোর প্রান্তর ঢুঁড়েও দেখা মেলেনা নিলীমার।
নিলীমা বোঝেনা প্রতীক্ষা শুধু কতো কষ্টের ।

লাঙল চষে চষে ভাঙা জমিনের অতল থেকে খুঁড়ে তোলা এসব কথারা নিলীমার চেতনবৃক্ষের ডালে ডালে কখনও দোলা দিয়ে গেছে কিনা তা নিলীমার খেড়োখাতায় লেখা হয়নি কস্মিনকালেও । নিলীমা বোঝেনা, হৃদয়ের নিলয় থেকে ঝর্ণার মতো অঝোর বেয়ে বেয়ে সে রঙিন কথারা যে তার ধমনীর হেই সুদূর-সর্পিল পথ পাড়ি দিয়ে দিয়ে ক্লান্ত ।
জীবনবোধের অনভিজ্ঞতা থেকেই নিলীমা বুঝি অপরিতোষণীয়া হয়ে ওঠে । গাছের আপেলটাকে জীবনভর সে যে গাছেই ধরে রাখতে পারবেনা, নিলীমা বোঝেনা তা । মধ্যাকর্ষন যে অমোঘ এক নিয়ম বোঝেনা নিলীমা ।

চোখে চোখ রেখে বোঝাতে হয় । বড় অবুঝ চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে নিলীমা । যেন রূপকথার এক গল্প শুনে ফেলেছে সে । তার জন্যে তুলে রাখা সব শব্দরা তখন গোসসা করে । সব কিছু যে সব কিছুর মতো হয়না, নিলীমা বোঝেনা । এই মায়াটুকুই যে আমাদের নুন-লঙ্কা ! আর তখনই নিঃসংসার সাধু হয়ে উঠতে ইচ্ছে করে । কাঁধে বোঁচকা-পুটুলী, দু’প্রস্থ জামা, জীর্ণ তোয়ালে আর কিছু টুকিটাকি নিয়ে হাটতে হাটতে সমুদ্রকে দূরাগত করে তুলি । সমুদ্দুরের বিপরীতে জলাভূমি, ঢিবি, এবরো থেবরো কন্টকময় পথ, অনুচ্চ পাহাড় ডিঙোই গৌরিক সাধু বেশে । তবুও সাধু কি হওয়া যায় ? সাধু সাজা যায় , সাধু হওয়া যায় না !

নিলীমাকে বোঝাই , সাধু হতে গিয়েও সাধু হয়ে ওঠা হয়না আমার ! গৃহীমানুষের পিঞ্জরের রোজকার কবাট খুলে ভারী গতরের দেমাগ নিয়ে হুটহাট সেই যে নিলীমা অনায়াস বেড়িয়ে যায় , নিলীমা বোঝেনা লোডশেডিং হয়ে যায় তাবৎ গৃহে গৃহে । হুলুস্থুলু লেগে যায় তামাম পৃথিবীতে ।

নিলীমা কেন যে বোঝেনা !!!!!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০১
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×