রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষে করা এক ভিক্ষুক আমাদের গালে যেন একটি থাপ্পড় দিয়ে গেলেন। আমাদের অনেক সুবোধ মানুষের গালভরা কথন, এই ক্রান্তিকালে অসহায় মানুষদের প্রতি ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার নামের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তাদের লোক দেখানো আহাজারিকে এক ৮০ বছরের মানুষ কি নজিরবিহীন ভাবে তার শীর্ণ বুড়ো আঙুলখানা দৃঢ়তার সাথে তুলে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন স্বপ্ন কখন, কোথায় বিক্রি করতে হয়।
এগিয়ে আসা মৃত্যুভয়কে ঠেলে ৮০ বছরের এই ভিক্ষুক ভিক্ষেবৃত্তি করে জমানো টাকা তুলে দিলেন সরকারের ত্রান তহবিলে। ত্রান দিতে আসা স্বেচ্ছাসেবকদের বললেন -আমার ত্রান লাগবেনা। আমি ভিক্ষা করে একটি ঘর বানানোর জন্য গত দু’টি বছর ধরে তিল তিল করে ১০ হাজার টাকা জমিয়েছি। আমি বুড়ো মানুষ , আমার মতো মানুষেরা এখন যেখানে খেতে পাচ্ছেনা সেখানে আমি ঘর দিয়ে কি করবো! এ টাকা আমি ত্রাণ তহবিলে দিতে চাই।
তুলেও দিলেন তার ঘামে ভেজা, ময়লা টাকার বান্ডিলটা মানুষেরই কল্যানে।
আমি বা আমরা যা পারিনি সেই পারাটাই পেরে গেলেন শেরপুর উপজেলার গান্দিগাঁও গ্রামের নাজিম উদ্দিন। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে শেষ সম্বল ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন তিনি। নিজের শেষ স্বপ্নটাকে বিক্রি করে কিনতে চেয়েছেন কিছু অভুক্ত মানুষের মুখের হাসি।
ভোরের কাগজ থেকে
সুশীল সমাজের আমরা কোথায় ? ফেসবুকের কথা আমি জানিনে কিন্তু ব্লগেও দেখিনি এই বৃদ্ধ মানুষটিকে নিয়ে এক আধ লাইনের কোনও লেখা। জনপ্রতিনিধিরা সব জায়গায় ঢুঁ মারার জন্য এ পর্যন্ত যে খ্যাতি অর্জন করেছেন তারাই যখন আজ কোন মাঠেই নেই সেখানে আমাদের মতো দু’চার টাকা ভিক্ষে দেয়ার লোকদের কিইবা করার আছে? স্বল্প কিছু বিত্তবান সেলফিওয়ালাদের সেলফি তোলার হয়তো হিড়িক আছে, ঐ পর্যন্তই!
কিন্তু করার ছিলো অনেক কিছু। করিনি। কয়েক হাযার টাকা দেয়ার মতো সামর্থ্য আছে কয়েক লক্ষ মানুষের। কিন্তু একজন “নাজিম উদ্দিন” মানসিকতার মতো কোনও মানসিকতার সঞ্চয় হয়নি তাদের আজো ।
নাজিম উদ্দিন, আপনাকে এই অক্ষমের সশ্রদ্ধ সালাম, অন্তরের সকল নিষ্কলুষ ভালোবাসা...............
কৃতজ্ঞতাঃ নেট ও ভোরের কাগজ পত্রিকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫২