[ প্রোলগ – নিলীমাকে নিয়ে আমার লেখা হয়ে ওঠেনি অনেকদিন। অথচ হররোজ সে যেন আমাকেই অতলজলের আহ্বানে টেনে নিয়ে যায়। প্রজ্জ্বল ক্লেদের গন্ধ মাখা বাতাসে নিলীমার আদল তাই এলোমেলো হয়ে ভাসে!
নিলীমার বুদ্ধির ভাড়ার ঘরে অস্তরাগে লীয়মান আলোর অঞ্চল এতোদিনে সীমিত হয়ে গেল কিনা জানিনে! জানিনে পৌরানিক নির্বুদ্ধিতার বিষ মাখানো অজ্ঞানতার কুলীন চাদরখানা টেনে নিলীমা আজো ঘুমায় কিনা। ]
পৃথিবী যে সুন্দরের জন্যে অপেক্ষা করে তেমন সুন্দর কাউকে নয় , বরং নিলীমার পৃথিবীকে যে সুন্দরতায় ভরে দিতে পারে তাকেই চা্ওয়া উচিৎ নিলীমার ।
দোষটা আমার নয়। আজ জোনাকির রাত, সপ্তর্ষির রাত......দোষটা এই রাতের!
সেই রাতে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে, ভাঙাচোরা মনের খিড়কি খুলে, নিলীমার মনের রুমালের মতো একটুখানি উঠোনে এমন কথাদের যখন বিছিয়ে দিলুম; নিলীমা তখন ঐসব আয়ুষ্মতী শব্দরাজি এ কান দিয়ে ঢুকিয়ে ও কান দিয়ে বের করে দিলে। তখনই বুঝলুম, চোখ না থাকলেই কেউ অন্ধ হয়না, অন্ধ হয় যখন দৃষ্টিতে কিছু ধরা পড়েনা! ঘিরিঙি বাতাসের মতো নিজ বুকের বাতাসেরা পাঁক খেয়ে খেয়ে নেশাখোরের মতো এলোমেলো হয়ে আসে তাতে। ডাঙর রোদ মাখা মনের আকাশ জুড়ে চ্যাংড়া মেঘদলের মতো দাঁপিয়ে বেড়ায় ।
নিলীমার জরাতুরা উচাটন মনখানার যে শরীর, তাতে বিছানো চাদরখানা সরিয়ে ফেললে মলিন অর্ন্তবাসের মতো জীবনের কিছু কিছু সত্য বেরিয়ে আসে । দেখা যায়, রাত্রির মতো অপর্যাপ্ত নিবিড় কৃষ্ণ কেশভার নিয়ে নিলীমা তার অনিন্দ্য আঁচলে গুটিয়ে রেখেছে ঘৃনা। নিলীমা জানেনা, যখন একটি দ্বার রূদ্ধ হয়ে যায় তখন অবারিত হয় আরেকটি। কিন্তু সেই রূদ্ধ দ্বারের দিকে চেয়ে চেয়েই সময় পার করে দেয় নিলীমা, অবারিত আরেকটি দ্বারের দিকে তার চোখ পরেনা কখনও ! হয়তো সিঁথির মতো পথ ভেঙ্গে আসা গাছের গায়ের গন্ধ পায়নি নিলীমা কখনও কিম্বা বৃষ্টির। শুনতে পায়নি পাহাড়ী ঝর্ণার কম্পমান সঙ্গীত কিম্বা বাউরী বাতাসে ভেসে আসা বেভূল পাখির ডানা ঝাঁপটানো গান। শোনেনি পাথরের কান্না নয়তো জলের অতলে ঘূর্ণির কথা কওয়া।
নিলীমা বোঝেনা, সন্তানের বীজ বপনের জন্য উচ্চারিত ডাক – নিলীমার শরীর নিঙরিয়ে শুধু ছিবড়ে রেখে যাবে! তবুও ঘোর কাটেনা তার। নিলীমার দিনগুলো শুধু মূর্ছা যায় মৃগী রোগীর মতো। নিলীমা বোঝেনা, নবীন কবির মতো বিনীত হয়ে আমি যক্ষের মতো হা-হুতাশ নিয়ে বসে থাকি তারই জন্যে ভাঙা দেউলের দেবতা হয়ে । সে দেবতার মন্ত্রে এমন ক্ষমতা নেই যে, নিলীমার জন্যে মেঘদল পাঠাতে পারে ! তাই এভাবে নিঃষ্ফল শব্দের মেঘই শুধু সাজাই। তাতেও নিলীমার ভাঙা জমিনে পরাগায়ণ হয়ে ওঠেনা। সে জমিন পড়ে থাকে একা এবং একাকী অনাবাদি। জলের ভেতর যেমন জলের ঘূর্ণি একা একা কথা কয়, তেমনই আমার নিষন্ন মনের গহনে জেগে ওঠা জলের ঘূর্ণি আফিমখোরের মতো একাকী তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আসে।
যখন রাত্রি হয় তখন তৃতীয় আকাশ থেকে স্বচ্ছ, শান্ত মায়াবী অন্ধকার নেমে আসে মিহিন বাতাসের মতো । তখন শুধু জেগে থাকে আমার ভালোবাসার সঙ্গীতগুলো ।
রাত্রির মতো, নগরের ছাল ওঠা প্রাচীর ঘেসে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু তালগাছটির মাথা ছুঁয়ে , গুটি গুটি পায়ে পাড়ার রহস্যময় গলিপথ বেয়ে , সিঁড়ির ধাপ ভেঙে ভেঙে নিলীমার মনের নরক কুঠরীতে ঢুকে দেখি - যে নারী চুম্বনযোগ্য তার চোখ অশ্রুতে মলিন। সে চোখের নোনা গাঙে ডুব দিলে, নিলীমা মন্দ্র-মন্থর ঢংয়ে এক যোজনব্যাপী দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গে। তার গতরের ভারে পুঞ্জিভূত আড়ালী মেঘের ফাঁকে কাঠ আগুনের আরণ্যক আলো ঝলকায়। আর তাতেই আমার মনের ভেতরে ব্রীড়ানত হতে থাকে যাবতীয় ক্ষরন। এ এক নিঠুর দরদির প্রেম অপ্রেমের বৌ-ছি খেলা জীবন ভর! না পারলুম আমি তাকে চিনতে , না সে আমাকে।
সংরাগে ষ্ফুরিত অধরের ঝাঁপি খুলে আমার কন্ঠলগ্ন অল্পকথার রাত্তিরের শব্দেরা মিছিল করে বেরিয়ে আসে নদীর দীর্ঘায়িত ক্রন্দন হয়ে ------
নিলীমা! একদিন তুমি আমাকে ভালোবাসবে যেমন বেসেছি আমি । একদিন তুমি ভাববে আমার কথা যেমন করে ভেবেছি আমি । একদিন তুমি কাঁদবে আমার জন্যে যেমন করে কেঁদেছি আমি তোমার জন্যে । জানি, একদিন তুমি চাইবে আমায় কিন্তু সেদিন.................
উৎসর্গ
ব্লগে আমার পোস্ট “কপাল পোড়া পুরুষ ........ নপুংসক ? view this link” এ - ব্লগার অপ্সরার করা বেশ কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতে লেখাটি অপ্সরাকেই উৎসর্গ করা হলো।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:১৭