জাপানের অর্থায়নে উড়াল রেল নির্মাণের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার (১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার) এ প্রকল্পের ১১ হাজার ২শ’ কোটি টাকাই জাইকার দেয়ার কথা। কিন্তু ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত হওয়ায় জাপানের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত উড়াল রেল নির্মাণে জাপান সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। জাইকা এ প্রকল্পের ওপর সমীক্ষা করে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮০ শতাংশ অর্থায়নে সম্মতি প্রকাশ করে। বিষয়টি চুক্তি সম্পাদনের অপেক্ষায় রয়েছে। উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত উড়াল রেল এবং শাহবাগ থেকে মতিঝিল হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত কিছু অংশ পাতাল রেল ও কিছু অংশ উড়াল রেল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের দিক থেকে এ জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়াও চলছে। কিন্তু ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামি জাপানের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করেছে। অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় গ্রাস করছে জাপানকে। এ অবস্থায় আগামী এক বছর ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জাপান সরকারকে অনুরোধ করাই সম্ভব নয়।
যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে জাপানই আগ্রহ প্রকাশ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ নিয়ে জাপানের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই না। আমরা তাদের প্রতি গভীরভাবে সহমর্মী, সহানুভূতিশীল। এ প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারটি জাপানের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি। জাপান সরকার তা রক্ষা করবে কি করবে না সে সিদ্ধান্ত তাদের।
উল্লেখ্য, মগবাজার রেল ক্রসিংয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর জাপান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এখানে ফ্লাইওভার নির্মাণে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের কথা বলে জাইকা সে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে। বর্তমান মারাত্মক বিপর্যয়ের পর জাপান সরকার উড়াল রেল প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী হতে পারছেন না।
এদিকে ২০০২ সালে রাজধানী ঘিরে পাতাল রেল নির্মাণের প্রস্তাব প্রথমে দিয়েছিল কনটেক নামক স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। ২০০২ সালের নভেম্বর তদানীন্তন সরকার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলে কনটেক সর্বনিম্ন দরদাতা বিবেচিত হয়। বেসরকারি খাত অবকাঠামো কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে গেজেটও প্রকাশিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদনের পর ২০০৮-এর ফেব্রুয়ারিতে বিনিয়োগ বোর্ড এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। ৫০টি স্টেশনসহ ছয় রুট বিশিষ্ট ৫২ কিলোমিটার পাতাল রেলের প্রস্তাব করে তারা। জাপান শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেলে এটিই হবে সরকারের জন্য একমাত্র বিকল্প। যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, জাপানের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত আমরা বিকল্প ভাবতে পারছি না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




