somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরিচিত

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রায় দুপুর ১২.৩০ এর মত বাজে। হোসেন যাবে ফার্মগেট এলাকায়। প্রিন্টিং এর কিছু কাজ কর্ম আছে। লাইব্রেরীর মাঝে মাঝে টুকটাক কাজে এদিক ওদিক যেতেই হয়৷ ২টার মধ্য আবার ফিরে আসতে হবে। হাতে আরো সময় থাকলে হেটেই রওনা দিত। এই রোদ বৃষ্টি কোনো বিষয় ই না হোসেনের কাছে। তবে আজকে সময়ের সীমাবদ্ধতা আছে। দ্রুত দ্রুত যেতেও হবে আবার আসতেও হবে দ্রুত৷ রিকশার ভাড়া বেশি, লোকাল বাসের ভরসা নেই৷ বাকি আছে টেম্পু৷ লক্কর ঝক্কর অথবা চকচকে ভাগ্যে যেটা পড়ে আর কি। সাই সাই করে ছুটে যায়৷ দ্রুত পা চালিয়ে এগুতে থাকল হোসেন। যেভাবেই হোক টেম্পু মিস করা যাবে না৷

একটা খালি টেম্পু আসতে না আসতেই ভরপুর হয়ে যায় যাত্রিতে। প্রথমে বুঝতে পারে একটা চকচকে টেম্পু হাতছাড়া হয়ে গেল। মিনিট পাচেক পড়েই আরেকটা টেম্পু। এটা প্রায় লক্কড় ঝক্কর এর মত। কোন দিক না তাকিয়েই হাতল ধরে উঠে পড়ল৷ ভেতরে ভ্যাপসা গরম৷ গাদগাদি করে বসতে হয়। দুইপাশে বেঞ্চের মত পাচ জন করে বসার জায়গা। কিন্তু হেল্পার ছয়জন করে বসাবে৷ গায়ের সাথে গা লাগিয়ে কোনোরকমে বসতে হবে আর কি। হোসেন বসেছে ৩নম্বরে। একজন বৃদ্ধ লোক উঠবে, টেম্পুতে আর একটা মাত্র সিট ই খালি আছে৷ এমন সময় একজন প্রায় দৌড়ে এসে ঝাপ দিয়ে, বৃদ্ধটিকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে টেম্পুর ভেতরে ঢুকে, খালি ওই একমাত্র সিটে বসে পড়ল। বৃদ্ধ কিছু বুঝে উঠবার আগেই দেখল আর সিট নেই৷ গরমে, টেম্পুতে না উঠতে পারার হতাশায় বৃদ্ধর চোখ কেবল এক দৃস্টিতে তাকিয়েই আছে। হয়ত তাড়া ছিল উনার। হোসেনের একবার মনে হোলো নিজে নেমে গিয়ে ঐ বৃদ্ধটিকে নিজের জায়গাটা ছেড়ে দেয়৷
ঝাপ দিয়ে ওঠা লোকটা বসেই হেল্পার কে ধমকান শুরু,
-অই, সিট তো সব ভইরা গেসে, দেখোস না নাকি? আর লোক কি মাথায় বসাবি? টেম্পু ছাড়

হেল্পার টেম্পুর ছাদে হাত দিয়ে বাড়ি দেবার সিগনাল দেয় এবং সিগনালে সাড়া দিয়ে ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দেয়। লোকটা বসেছে হোসেনের একদম মুখোমুখি। মুখের দিকে তাকালেই প্রথমেই যে বিষয়টা চোখে পড়বে তা হোলো তীক্ষ্ণ দুটি চোখ। চোখ দেখলেই মনে হয় যেন জলজল করছে। মাথায় চুল প্রায় শেষের দিকে। দুই কানের উপর দিয়ে চোখের যেমন ভুরু তেমনি কানের যদি ভুরু থাকত তেমন করে চুলের একটা লেয়ার চলে গেছে। গোলগাল মুখ।

টেম্পু চলে যাচ্ছে বৃদ্ধ কে ফেলে, আর লোকটা বৃদ্ধর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যর একটা হাসি দিচ্ছে। বৃদ্ধ কে ধাক্কা দিয়ে সিট দখল করতে পারাতে তার ভীষণ খুশি লাগছে। হেসেই যাচ্ছে।
হোসেন আর পারল না, বলেই ফেলল
- আপনার কাজ টি ঠিক হয়নি
- কোন কাজ?
- ওই বৃদ্ধ লোকটি কে এভাবে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে উঠে পড়লেন যে
- তাতে আপনার কি? আপনার সাথে ধাক্কা লাগসে?
- না
- তাইলে, আপনার এত লাগে কেন? বুইড়ায় কি আপনারে আইসা বিচার দিসে? আপনে কি আদালত বইসেন? মামলা দিবেন?
বলেই হে হে হে করে হেসে উঠল।
হাসিটা গায়ে লাগে, অপমানের হাসি, তাচ্ছিল্যর হাসি। এক ধরনের অসস্তি হয়।
অথচ হাসি নাকি সুন্দর একটা বিষয়। মানুষ মুখের হাসির জন্য কত কিছুই নাকি করে। কেউ ঘাম ঝড়িয়ে হাসি কেনে, কেউ সার্থ ত্যাগ করে, কেউ সবকিছু বিলিয়ে, কেউ অর্জনে কেউ বা বিসর্জনে। হাসি যে খারাপ ও হতে পারে, হাসি দেখতে যে বাজে হতে পারে, হাসির পেছনে যে জটিলতা থাকতে পারে তা কি সবাই বুঝতে পারে?

- কি? আদালত মিয়া, চুইপসা গেলেন যে? বিচার বসাইবেন?
- আপনার বিচার করা সম্ভব নয়
- সম্ভব না, তাইলে আমারে কইলেন ক্যা যে কামডা ঠিক হয় নাই?
- এটা মানুষের সাধারন বিবেক বুদ্ধির ব্যাপার
- মানে, আপনি কইবার চান যে আমার মাথায় ঘিলু নাই? আমি কি আপনার কাছ থেইক্কা আদব কায়দা শিখমু? আদালত থেইক্কা এহন আদবের কারবার লইয়া আইসেন? হ্যা! আমারে আদব কায়দা শিখান!
এই পর্যায়ে টেম্পুর অন্যান্য যাত্রিরা বলে উঠল ভাই একটু চুপ করেন তো আপনারা, গরম আর জ্যামে বাচি না আর আপনার ঝগড়া শুরু করসেন।
- আরে আমি শুরু করসি নাকি, এই আদালত আর আদবের কারবার ই শুরু করসে
হেল্পার বলে উঠল, ফার্মগেট নামবেন যারা তারা রেডি হন৷ হোসেন ব্যস্ত হয়ে উঠল একটু৷ফার্মগেট আসতেই হোসেন নেমে পড়ল। নামার পর দেখল লোকটি এক দৃষ্টিতে হোসেনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে আছে হোসেন ও। ঠোটে সেই হাসি। হাসিটা মনে কেমন যেন এক ধরনের অসস্তি সৃস্টি করে।

কেন যেন মনে হোলো এই অপরিচিত লোকের সাথে হোসেনের আবার ও দেখা হবে, বার বার দেখা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×