somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পারাপার

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





ঘাটে বেশ কয়েকটি নৌকা, একটা নৌকা বেশ বড়। নদীর এপার থেকে ওপারে মানুষ পার করে, এক সাথে অনেক মানুষ ওঠে, সাইকেল, এমনকি মোটর সাইকেল পর্যন্ত ওঠানামা করে। ইঞ্জিন বসানো থাকায় খুব বেশি সময় লাগেনা এপার থেকে ওপারে পৌঁছাতে। ২/৩ টি নৌকা আছে এক্টু ছোট আকারের, ব্যক্তিগত ভাবে পারাপারের কাজ করে। আর আছে ছই দেয়া নৌকা।

হোসেনের এই ছই ওয়ালা নৌকা বেশ পছন্দের। বড় নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ আর ভীড় থাকায় আর ঘাটে পছন্দের ছইওয়ালা নৌকা থাকায় একটা ছই ওয়ালা নৌকাই ভাড়া নিল নদী পার হবার জন্য। ভাড়া খানিকটা বেশি। গ্রামের মানুষজন যে কয় জন এসেছে তারাই ভাড়া করে দিল। হোসেনের কাছে ভাড়া দেবার মত পয়সা ছিল তার পরও গ্রামের এই লোকজন দের আন্তরিকতার কাছে হেরে গেল।

প্রায় ৯ দিন এর মত ছিল এই গ্রামে, নিজের ভিটে বাড়ি এখানে। বেচে নেই কেউ, উত্তরাধিকারদের যারা ছিল তারা সবাই জায়গা জমি বেচে এখনশহুরে,কালেভদ্রেও কেউ আসে না। হোসেনের পরিচয় কি কেউ জানে না, হোসেন ও দেয় নি। পরিচয় এ কি ই বা আসে যায়। প্রথম যেদিন এই গ্রামে এসে পৌছায়, এক বাড়ির বর্ধিতাংশে গাছ বাগানে বসার জন্য বাশের একটা বেঞ্চ বানানো ছিল, সেখানে বসে ছিল, বাড়ির কাজের লোক তার মনিব কে ডেকে নিয়ে আসায় পরিচয় পর্বে হোসেন শুধু তার নামটাই বলেছিল, আর কারন হিসেবে পথভুলে এসে পৌছেচে বলেছিল। বাড়ির মনিবের নাম ওসমান। পানি খেতে চাওয়ায় পানির সাথে কিছু নাস্তাও জুটেছিল হোসেনের। এরপর একে একে ইদ্রিস চাচা, বদরুল মাস্টার, শীতল দাদা, রাবু ফুফু, ছোট্ট টুনি, ফারুক, গৌতম সবার সাথে পরিচয় হয়েছে গ্রাম ঘুরতে। থাকা হয়েছে কখনো মসজিদ এ, কখনো কারো বাসায়।
বেলার খাবার নিয়ে কখনো ভাবতে হয়নি প্রায় দিন ই নিমন্ত্রন রক্ষা করতে হয়েছে। কেন যে অপরিচিত এক্টা মানুষ কে এভাবে আপন করে নিল তা হোসেন বুঝে উঠতে পারে না। এই গ্রাম বাংলা, এই গ্রামের সহজ সরল মানুষ, মাটির গন্ধ, ডাল পালা মেলে দাড়িয়ে থাকা গাছ, ঝোপ ঝাড়ে লজ্জাবতি ফুল, নাম না জানা হরেক রকম ফুল, খেজুর গাছে রসের হাড়ি, মেঠো পথ সব কিছু সব কিছু কেন যেন নির্মল, নিস্পাপ লাগে হোসেনের।
রাত্রে অন্ধকার, এই অন্ধকার আর শহরের অন্ধকারের মাঝে কত পার্থ্যক। শহরের অই ল্যম্পপোস্ট নেই এখানে, আছে থোক থোক করে জলতে নিভতে থাকা জোনাকি। একটা পর একটা গাড়ি চলে যাবার বদলে আছে একটার পর এক্টা লঞ্চ চলে যাবার পর স্রোতের শব্দ। পাড়ে এসে ঢেউ আছড়ে পরার শব্দ।
আর আছে নির্ভেজাল মানুষদের আনাগোনা, তাদের গ্রাম্য ভাষায় কথা বার্তা।
নৌকা ছেড়ে দিয়েছে, ছোট ছোট ঢেঊ নৌকার তলায় এসে ভাংছে, আবার গড়ছে। হাল্কা দুলে দুলে চলছে মন পছন্দের ছই ওয়ালা নৌকা। হোসেন নৌকায় বসে একবার এপাড় দেখে, আরেকবার ওপাড় দেখে। এক পাড়ে ফেলে আসা কিছু মায়া, কিছু আন্তরিকতা আরেকপাড়ে কর্কশ, অমসৃন পিচঢালা রাস্তা, যন্ত্র, জ্যামিতিক মানুষজন, হিসেবি কথা, কৃত্রিম আলো, বিষন্ন রাজপথ।

পারাপার করে দিচ্ছে নৌকা, এক কূল থেকে আরেক কূল। পার্থক্য গড়ে দিয়ে মনে হচ্ছে এক জীবন থেকে আরেক জীবনে নিয়ে যাচ্ছে।
বড্ড অদ্ভুত অথচ কি সুন্দর বাস্তবতা

নৌকা চলছে, টুকটুক করে। ছোট্ট ছই দেয়া নৌকা। মাঝ নদী থেকে এবার একটু পাড় ঘেষে ঘেষে চলছে। চরের মত করে একটা জায়গা পার হচ্ছিল হোসেনের নৌকা। জায়গা বেশ সুন্দর। শরৎ হেমন্তের সময় খুব কাশফুল ফোটে নাকি এখানে মাঝি বলল, নৌকার মাঝিকে অনুরোধের সুরে এই চরে দাড়ানোর কথা বলতেই মাঝি রাজি হয়ে গেল। নৌকা থেকে নেমে, একটু হেটে এগুতেই সবুজের গালিচা। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস। মাথার ওপরে পেজা পেজা সাদা তুলোর মত মেঘ, দূরে নদীর ওপার দেখা যাচ্ছে। ঠিক ওপারেই ছিল গত ৯ দিন। আজ এপারে। একটু বসল। পড়ন্ত বিকেল। অদ্ভুত মোহলাগা এক বিকেল৷ মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে, এরকম বিকেল গুলিকে আটকে রাখতে, সময় কে থমকে দিতে। নদীর পারে বসে নদীর বয়ে চলা দেখতে দেখতে হঠাৎই বলে উঠল
-কি সুন্দর এই বয়ে চলা
যেন নদীর স্রোত বলে উঠল
-আমার কেবল বয়ে চলাটাই চোখে পড়ল, আমার কারনে যে পাড় ভাংগে তা চোখে পড়ে না?
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি একদল পাখি উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে, আনমনেই বল্লাম,
- বাহ কি দারুন
যেন পাখির দল বলে উঠল
-কেবল ডানা মেলে উড়ে যেতেই দেখলে? ঠিকানা খুজে বেড়ানোর যে আকুলতা তা বুজলে না?
শেষ বিকেলের হীম বাতাস এসে মুখে লাগল, সারা শরীর শিহরনে কেপে উঠল, হোসেনের অভিব্যক্তি
- আহা কি দারুন
বাতাস যেন উত্তরে বলল
- আমার আঘাতে শান্তিতে শিহরিত হউ, আমার অস্তিরতা খেয়াল করনা।
দীর্ঘদিন ধরে জমিয়ে রাখা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হোসেন চুপ করে সময়টাকে অনুভব করতে থাকে, যেন নিস্তব্ধতাই সব কিছুর উত্তর।
খুব গহীন থেকে, হতে পারে সেটা অন্তরের, অথবা হতে পারে প্রকৃতির

- নিস্তব্ধতার পেছনে যে কোলাহল, যে অস্থিরতা, যে আকুলতা তা বোধহয় প্রকাশের এখনও যুতসই শব্দ গড়ে ওঠেনি, হয়ত সেই বাক্য এখনো পূর্ণতা পায় নি, হয়ত কখনো তা ব্যক্ত করার উপযুক্ত নয়, হয়ত কখনই তা বলা হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৫৩
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×