এখন রাত প্রায় ১১টা বাজে। হোসেন বের হচ্ছে বাসা থেকে। প্রথমে ভাত খাবে, তারপর চা খাবে, এরপর নিত্য হাটাহাটি শুরু হবে। ৬ তলা বিল্ডিং একটু পুরোনো ধাচে বানানো, সিড়িগুলি বেশ খাড়া। নিচে নামা বা ওঠা বেশ কস্টকর তাছাড়া, অন্ধকারে সিড়ির ধাপগুলি একেবারে দেখা যায় না বললেই চলে। বাড়িওয়ালা, পয়সা বাচিয়ে চলার জন্য এক ফ্লোর বাদ দিয়ে টিমেটিমে বালবের ব্যবস্থা রেখেছেন। তাড়াহুরো করে নামতে গেলে স্লিপ খেয়ে পড়ার চান্স প্রায় শতভাগ। রাতে সিড়ি ঘরের লাইট বন্ধ হয়ে যায়, একেবার জমাট বাধা অন্ধকার। তাই পা টিপে টিপে অনেক সময় ধরে নামতে হচ্ছে। জীবনে এমন ও অনেক সময় আসে যেখানে উপরে উঠে যেতে যত না কস্ট হয়,নিচে নেমে যেতে তার থেকেও বেশি কস্ট হয়।বিল্ডিং এর নিচে কেচি গেট। কেচি গেট খোলাই থাকে।ছোট্ট একটা মেয়ে এক তালা থেকে নিচে নামছে। পিচ্চির সাথে প্রায় ই দেখা হয়। হোসেন দেখল, এক পা ফেলে আরেক পা ফেলতে মেয়েটি রীতিমতো ভয় পাচ্ছে। দেয়াল ধরে ধরে আরেক পা নামাবে কি নামাবে না তার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।হোসেন গিয়ে মেয়েটিকে বলল
- চলো তোমাকে নামিয়ে দেই
মেয়েটি হোসেন হাত ধরে এবার নামতে শুরু করল।নিচে নেমে হোসেনের দিকে তাকিয়ে, মিস্টি একটা হাসি দিয়ে বলল
- তোমাকে থ্যানকু।
কৃতজ্ঞতার এই প্রকাশে হোসেন অভিভূত হয়ে পড়ল। সামান্য একটা শব্দ, ছোট্ট একটা অর্থ, অথচ নিবেদেনের উপযুক্ততায় তা কত ই না ভারী হয়ে উঠেছে।
হোসেন হাসল, অন্তর থেকে আসা হাসি। কিছু অনুভূতি আছে, যা অন্তর থেকে বয়ে এসে সমস্ত ইন্দ্রিয়তে এক কোমল প্রশান্তির বাতাস বইয়ে দেয়।জোর করে কি আর অনুভূতির প্রকাশ হয়, হোসেন এই জোর করে অনুভুতি প্রকাশ হোসেনের সভাববিরুদ্ধ। সারা দেহে, মনে এখন একটা শান্তি শান্তি ভাব আছে। আজ কে রাতের ভ্রমন হবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের রাত। আজ যত জনের সাথে কথা হবে, সবাই কেই ধন্যবাদ জানানো হবে।রাতের খাবার খাওয়া শেষ, হাত ধুয়ে টেবিলে বসে আছে, দোকানের যে ছেলেটা খাবার আনা নেয়া করে সে এসে বলল,
- আর কিছু খাইবেন?
- না, রে
- বিল দিমু অহন তাইলে
- দে, আর শোন
ছেলেটা দাঁড়ায়,হোসেন বলে
- রাতে খেয়েছিস?
- এই খামু, একটু পর
- তোকে ধন্যবাদ রে, এই যে কস্ট করে খাবার এনে দিলি। থ্যানকু
ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে, হোসেনের চোখের দিকে চোখ, চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কৃতজ্ঞতা তাকে আবেগি করে তুলছে। কৈশোরের আবেগ বড্ড তীব্র। হোসেন চোখ সরিয়ে নিল তাই। উঠে পড়ল।হয়ত, টেবিল মোছা, খাবার আনা, প্লেট ধোয়া, মাস গেলে বেতন পাওয়া ছাড়া তার প্রাপ্তি আর কিছুই ছিল না। এই কৃতজ্ঞতা প্রাপ্তি তার নতুন বোধ, তার আবেগ কে গভীর করে তুলছে।বিল মিটিয়ে,হোসেন উঠে চলে আসল।
হোসেনের মনে হতে লাগল, পৃথিবীতে কিছু কিছু বিষয়ে কোন যুক্তি, তত্ত্ব কোনকিছুই কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। যেমন পবিত্র বা শুদ্ধ কোন কিছু তার সংস্পর্শে থাকা জিনিশগুলোকেও শুদ্ধ করে দেয় ঠিক তেমনি হৃদয় নিংড়ানো অনুভব ও আরেকজনের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। এই মন প্রকৃতির দেয়া এক সাদা কাগজ, ভালো মন্দের সব দাগ ই সে সযতনে রেকর্ডে রাখে।
ঘুমিয়ে পড়া শহরের রাস্তায় হোসেন হেটে চলে৷ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের লিস্টে আছে অনেকেই।
তাই আজকের রাত্রির নিবেদন হোলো কিছু কৃতজ্ঞতা দেবার আশায় অথবা একটু খানি কৃতজ্ঞতা পাবার আশায়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৪