রাত ১ টার পর এলাকার প্রায় সব বাড়িই অন্ধকার হয়ে যায়। টুকটাক করে এক এক বাসা থেকে আলো জ্বলে আর নিভে। এসব ভালো লাগে দেখতে। খাপছাড়া রাত। কোন চিন্তা ভাবনা নেই, কোন ভবিষ্যতের ডাক নেই, কারো কোনো আহবানও নেই। নিজের মত একদম। যেন নিজেকেই সময় দেয়া।
ছাত্রকালে এক অভ্যাস ছিল। পরীক্ষার হলে লিখতে ইচ্ছে হোতো না। প্রিপারেশন ভালো, প্রশ্নও কমন কেবল লিখতেই ইচ্ছে হোতো না। মনের খেয়াল। মনের খেয়াল খুব প্রাধান্য পেত হোসেনের জীবনে।এখনও পায়। এই যেমন আজ।
আজ ভাগ্যে খানিক ভালো, কিছু আলো আছে আকাশে। তবে কালো মেঘের আনাগোনাই বেশি। কিছুক্ষন পর পর অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারে হোসেন নিজের দিকে তাকায়, আবছা হাত, পা দেখা যায়৷
অন্ধকারে হোসেনের গ্রামের কথা মনে পড়ে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। পাড় ভাংগা নদী। বর্ষায় পাড় ভাংতে ভাংতে বিলীন হয়েছে অনেক কিছু। কত বিলাপ, কত আহাজারি মানুষের। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে অসহায় কতজন। বিকেলে হোসেন নদীর পাড় ঘেষে হেটে বেড়াত। পাড়ে দাঁড়িয়ে নদীর বয়ে চলা দেখত। দেখত ওপারে জেগেছে ভূমি। এপার ভেংগে ওপার গড়ে উঠছে। সবুজে ছেয়ে গেছে।
আচ্ছা এপারে যা হারিয়েছে ওপারে কি ঠিক তাই গড়ে উঠেছে? হয়ত ওপারেও কোন একদিন জনপদ গড়ে উঠবে কিন্তু এপারে যেমন ছিল তাই কি হবে? এই নদীর স্রোতে যা ভেসে গেছে তা কি কখনো আর ফিরে পাওয়া যাবে? কোথায় কোথায় না জানি হয়ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে না হয় হারিয়েই যাবে তার গর্ভে। হয়ত শত বছর পর একদিন এ নদী শুকালে উন্মোচন হবে, হারানো জিনিসের স্মৃতি বয়ে বেড়ানো মানুষটা কে কি আর পাওয়া যাবে?
মানুষের মনেও তো এমন ভাংগা গড়া চলে। দুটি মানুষের মধ্যে সম্পর্কের ভাংগন হয় আবার গড়েও। যা ভাংগে ঠিক তাই কি আর গড়ে? এই সময় কি নদীর মত বহমান নয়? সময় কি কেড়ে নিয়ে যায় না অনেক কিছুই? একজনের মনের কস্ট কি ঠিক অপর পাড়ের মানুষের মধ্যে পৌছায়? নাকি সময় নদীতেই ভেসে যায়। কস্টের ওজন বেশি হলে হয়ত বিলীন ই হয়ে যায়। হয়ত ভাসতে ভাসতে আরেক মানুষের পাড়ে গিয়ে পড়ে। হয়ত।
দুটি মানুষ যেন দুটি পাড়। তাদের মাঝের সম্পর্ক যেন বয়ে চলা এক নদীই। কখনো গভীর, কখনো খরস্রোতা। মনের আদান প্রদান যেন নৌকা। কখনো উজানে বয় কখনো ভাটিতে। ওই চাঁদ যেন অনূভুতি আর আবেগ। কখনো জোয়ারে আছড়ে পড়ে তো কখনো ভাটায় টান পড়ে। ওই পাড়েই ভাংগন ধরে আবার ওই পাড় ভেংগেই নতুন পাড় জাগে। মৌসুমে ওই নদীতে চর জাগে আবার কানায় কানায় জল।
কি মিল প্রকৃতির সাথে।
কখনো কখনো কোনো দূর্যোগে নদীর গতিপথ বদলে যায়, নদী থেকে তৈরী হয় শাখা নদী। মূল নদীর পানি বিভত্ত হয়। যে নদীর পানি নদীর একক অধিকারে ছিল তা কখন যে ভাগ হয়ে যায় নদী হয়ত তা টেরই পায় না। এত সব কিছু ঘটে মানুষের চোখের সামনেই। নিজের জীবনেও ঘটে যায় হয়ত তাও মানুষ বোঝে না। সৃস্টিকর্তার দেয়া দুটি চোখ দিয়ে দেখা ছাড়া মানুষ আর কোনো চোখের সন্ধান করেনি কখনোই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ১:১৫