somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলিঙ্গন

২৭ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সরু পাহাড়ি পথ। পাশাপাশি দুজন তো নয়ই, সামনা সামনি দুজনকেও বেশ খানিক জায়গা ছেড়ে দিয়ে পাশ কাটাতে হয় এমন পাহাড়ি পথ। দু দিকে বড় বড় বুনো ঘাস আর নাম না জানা হরেক রকম গাছ গাছালির লতা পাতা। খানিক বাদে বাদে জুম ক্ষেত চোখে পড়ে। দূর থেকে মাচাং এর ঘর গুলো দেখলে একধরনের নেশা কাজ করে ঘরে থাকবার। এদিকটায় খুব বেশি কেউ আসে না। শহরের দম্ভ এখানে ছোয় না তাই যেদিকেই তাকানো যায় মাটির মত সহজ সরল স্নিগ্ধতা। খোলা বাতাসে প্রান জুড়িয়ে আসে। পাহাড়ি রাস্তায় অনভিজ্ঞতা আর শরীরের প্রতি অনিয়মের দরুন খুব বেশি দূর ও আগানো যায় না। যেন শাস আটকে আসে।
সামনেই ছোট একটা ঝর্না না বলে ঝিরির মতন বলা যায় দেখা যায়। হোসেন খানিক টা পানি খেয়ে জিড়োনোর জায়গা খুজে দেখে। কালো পাথরের এক চাই এর মত, বিশালাকার। এক তৃতীয়াংশ পাহাড়ের যে দিক শেষ মানে খাদের দিকে চলে গেছে সেদিকে। দেখে মনে হয়, ভেংগে নিচে পড়ে গেছে। বাকি অংশ সরু নদীর দিকে। পাথরের উপর উঠে বসলে বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায়৷ দূরে আরও বড় পাহাড় যেন মেঘের সাথে মিশে গেছে এমন দেখা যায়। খানিক বিরতিতে বাতাসের ঝাপটা এসে মুখে লাগে। বড্ড শান্তি।
মানিব্যাগের ভাজে রাখা সিগারেট বের করে ধরায় হোসেন। দীর্ঘ টানে ধোঁয়া ছাড়ে। পাথরের উপর উঠে প্রায় শুয়েই পড়ে।

- মানুষের শান্তি ওই পাথর হয়ে যাওয়াতেই, বুঝলে!!

হোসেন খানিক চমকে ওঠে, এদিক ওদিক দেখে, কথা কি এই পাথর বলছে?

- কি? অবাক হোচ্ছ?
- তা তো অবশ্যই।
- নিশ্চই এ ভ্রম
- নিজ বৃত্তের বাইরে সবকিছুই ভুল, অদ্ভূত মনে হয়। নিজের রুপান্তর ঘটবার আগে আমারও তাই মনে হোতো। কালের সাক্ষি হবার পর থেকে বুঝেছি তা। তুমিও বুঝবে শীঘ্রই।
- রুপান্তর? কিসের রুপান্তরের কথা বলছ?
- তুমিই নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর কর দেখি। আজ তুমি যা গতকাল ও কি তাই ছিলে?
- হা ছিলাম। আমি হোসেন। কাল থেকে কালে আমি এমনই।
- হুম। তুমি সময়ের কাছে আটকে গেছো হোসেন। মনের মুক্তি তোমার প্রায় হয়ে গেছে। শরীরের মুক্তি এখন বাকি কেবল।
- তাই?
- হ্যা। এই যেমন আমি।
- কি তোমার গল্প?
- গল্প নয়, জীবন থেকে নেয়া।

আমিও একসময় তোমার মতই মানুষ ছিলাম। তুমি বলতে পারো পাথরের সৃষ্টি কিভাবে? জীবনের কিছু কিছু সময় এমন আসে যে, প্রচন্ড উত্তাপে আর চাপে এই মনে এই হৃদয়ে ছোট ছোট ঘটনা তৈরী করে। মন ক্ষয় হতে হতে, এই আবেগ, অনুভূতি প্রচন্ড চাপে এই অন্তরে একের পর এক আস্তরন পড়তে থাকে। দেখা যায় না। বোঝা যায় না। চোখের নিচের কালি দেখে লোকে বলত অনিয়ম, চোয়াল ভেংগে পড়লে বলত নেশাখোর। অথচ অন্তরে একের পর এক কস্টের আবরন যে এই শরীর কে ভেংগে দিচ্ছে তা কখনো পারিনি বোঝাতে না পারেনি কেউ। সবাইতো আর বর্হিমূখী হয়ে জন্মায় না তাই না। কিছু কিছু মানুষ আসলে অপেক্ষায় থাকে কেউ একজন তাকে অন্তত একটা বার জিজ্ঞেস করুক, তোমার কি হয়েছে, বলো আমাকে বলো।
কিন্তু মজার বিষয় কি জানো?
যেই তুমি এমন ভাববে সাথে সাথে এই প্রকৃতি তোমার আর্তি বুঝে নেবে। সে তোমাকে কাছে টেনে নেবে ধীরে ধীরে। মানূষকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দেবে বহুগুনে যতটা তীব্রভাবে তুমি হয়ত চেয়েছিলে কাউকে কাছে। তোমার এই অভিমান এর সামনে এক পর্দা পড়ে যাবে যার আড়ালে তোমাকে আর কেউ ই বুঝতে পারবে না, কেউই আর কাছে আসবে না।

এই পাথর হয়ে যাবার আগে আমি খুব তীব্রভাবে চেয়েছিলাম কেউ আমাকে একবার শুধু একবার আমায় খুব করে জড়িয়ে ধরুক। খুব জোরে চেপে ধরুক আমাকে, যেন আমার অন্তরের যত আস্তরন আছে তার তীব্রতায় সব ভেংগে চূড়ে যায়, যেন তার দেহের উষ্ণতায় আমার শীতল হয়ে যাওয়া সব স্নায়ু গলে যায়। আমি আবার ফিরে আসি কোমল মানুষে, যা শুধু দেহে নয়, মনে, আত্নায়।

খুব চেয়েছিলাম।
একটাবারের জন্য সেই আলিঙ্গন।
কেউ দেখেনি,
কেউ ডাকেনি,
কেউ একবারও বলেনি
এসো, আমার কাছে এসো।

সবছেড়ে যখন এই পাহাড়ে এই প্রান্তে এসে দাড়িয়ে ভাবছিলাম, আজ ই হোক সমাপ্তি। ঠিক তখনই, কে যেনো বলে উঠল,

এসো...
তুমি আমার কাছে এসো....

সেই থেকে আমি এখানেই। মানুষ আমায় পাথর বলে। কত এলো গেলো। আমার গায়ে ঠেশ দিয়ে বিস্রাম নিলো। আমি বলি, আলিঙ্গন লাগবে?
আমার ভাষা কেও বোঝে না।

হোসেন তোমার কি একটা আলিঙ্গন চাই??

হোসেন নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবতে থাকে তার কি কেউ আছে? যে বলবে, এসো... তুমি আমার কাছে এসো।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:৩৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×