somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদৃশ্য

০৮ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু আগুন হবে?
- একটু আগুন কেন?
- সিগারেট ধরাতাম
হোসেন পকেট থেকে লাইটারটা বের করে দিল।
লোকটা লাইটার হাতে নিয়ে বসে আছে। হোসেন তাকিয়ে দেখে, লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে বড় বড় চোখ করে।
- কি? ধরান সিগারেট?
- সিগারেট ত নাই
- তাহলে লাইটার চাইলেন যে?
লোকটা এবার অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
- ভাই, আপনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন?
- দেখতে পাবো না কেন?
- সত্যিই দেখতে পাচ্ছেন?
- ভালো ঝামেলা দেখি। হ্যা, দেখতেই তো পাচ্ছি। কি ব্যাপার বলুন দেখি?
- না মানে, আমি জানতাম, আমি অদৃশ্য , আমাকে আর দেখা যায় না।
- দেখা যাবে না কেন? মানুষ তো আপনি নাকি?
লোকটা এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
- হ্যা ভাই, মানুষ বটে। তবে জানেন, কিছু কিছু মানুষ কখনো কখনো একটা সময়ের পর আর দৃশ্যমান হতে চায় না।
- কেন? এমন কেন?
- এই ধরুন আমার কথা। কোলাহল ভালো লাগে না। এমন ছিলাম না আগে। কিন্তু মিশতে বেশ কস্ট হোতো। তাই নিজের মত করেই থাকতাম। জড়তাবোধ ভেংগে আড্ডার আসরে তাল মেলাতে পারতাম না।
মানুষ বুঝতাম বেশ কিন্তু নিজেকে বোঝাতে পারতাম না। সবকিছুর পর মানুষ তো নাকি! কিছু আশা, প্রত্যাশা তো থাকেই। এমন একের পর এক, হতেই থাকে। দিন যায়, কথা জমতে থাকে, অভিমান জমতে জমতে কালো মেঘ হয়ে ভাসে কিন্ত প্রবল বৃষ্টি হয়ে কখনো ঝড়ে পরে না। আস্তে আস্তে দুরত্ব বাড়তে থাকে , নিজেই দূরত্ব বাড়াতে থাকি। হাতে গোনা মানুষ যারা ছিলো তাও কমে আসতে থাকে। তাতেও পোষায় না।
- তারপর?
- তারপর, চেনাজানা পরিবেশ থেকে দূরে চলে এলাম। সবকিছু থেকে দূরে।
- দূরত্ব বাড়িয়ে কি সুখ পেয়েছেন?
- সুখ বড্ড আপেক্ষিক বিষয়, সুখ আসলে কেবল একটা সংগা নয়। যে সুখ কেউ পেলো কিনা বা তা হারালো কিনা।
- তবে সুখ কি?
- ও এক বাতুলতা
-বাতুলতা?
- বাদ দিন। আমি বলতে পারব না, এ কি জিনিস। আপনি যেদিন অনুভব করবেন ,বুঝে যাবেন।
- হুম।
- তো অদৃশ্য হয়ে গেছেন এ ভাবনা কবে থেকে এলো?
- দূরত্ব বাড়তে বাড়তে একটা সময় দেখলাম, চারপাশে অনেক মানুষ, কিন্তু আমি কাউকেই চিনি না, না আমায় কেউ চেনে। কি ভালো লাগার দিনে, কি খারাপ লাগার দিনে আশে পাশে কেউ নেই।
- কাছের মানুষ করে নিতে পারতেন?
- পারতাম, কিন্তু জানেন, মানুষের কাছে নিজেকে নতুন করে উপস্থাপন করার শক্তিটুকু আমার আসে না। বড্ড আলসেমি লাগে। একটা মানুষ আপনার সীমানায় এলে তাকে তো আপনার আংগিনা ঘুরে ফিরে দেখাতে হবে, আপনার মনে বাগান, না ঘন বন জংগল, না ঝোপঝাড় তা বোঝাতে হবে, আপনার মনের পাড় বাধানো পুকুর কতখানি গভীর, সচ্ছ না ঘোলাটে তা বোঝার সময়টুকু তো দিতে হবে। আমার ইচ্ছে হয় না। তাছাড়া, মানুষ সুন্দর খোজে। মনের গহীনে দরবার জানায় ঘুড়ে বেড়াবার, কিন্তু শুধু খোজে বাগান। হা হা। সবার কি আর বাগান থাকে বলেন?
তাছাড়া আমন্ত্রন ছাড়া কেউ তো নিমন্ত্রনে আসে না তাই না।
- মানুষ বুঝতে এত কিছু লাগে?
- এ তো কম ই। আপনার কি মনে হয় আপনার আমার সিগারেটের ব্র‍্যান্ড মিলে গেলো আর সব মিলে গেলো? তা নয়। এ বড্ড ভুল। আমরা সচরাচরই এই করি, আর শেষে গিয়ে পস্তাই।
-হুম।
- এখন বোধহয় মাথায় গন্ডগোলই দেখা দিয়েছে, তাই নিজেকে অদৃশ্য ভাবছি অনেকদিন ই। কাউকে চিনি না, কেউ চেনে না, চিনতে ইচ্ছেও করে না, চেনাতেও শখ জাগে না। এ আর অদৃশ্য হয়ে যাবার থেকে কম কি।
- হুম
- আরো একটা কথা খুব মনে হয়, বলব?
- হ্যা বলুন না।
- এই প্রকৃতির নিয়মে আসলে অদৃশ্য তো হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অতিপ্রাকৃত বিষয়। তাই প্রথম স্তরে মানূষ একলা হতে শুরু করে, এরপর ধীরে ধীরে দূরত্ত বাড়ায়।
- আর ধাপ আছে নাকি?
- হ্যা আছে। সেটাই মনে হয় শেষ স্তর। আমি ঠিক জানিনা। সবশেষে মানুষ সম্ভবত শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভাবে শরীর থেকে তার মুক্তি দরকার। তার কাছে শরীরটা এক ধরনের খাচার মত লাগে।
- আপনি কি বলতে চাচ্ছেন...
- হ্যা, যা ভাবছেন তাই ই।
- আপনার কোন স্তরে তাহলে এখন
- বলতে পারছি না, তবে আমার শরীরকে এখনো বোঝা মনে হয় না।
-হুম।
ভোররাত শেষ হচ্ছে। এসময়টা খুব ভালো লাগে। সকাল শুরু হবার আর রাত্রি শেষ হবার ঠিক আগ মূহুর্তে এক ধরনের শীতল বাতাস বয়। ঠিক কনকনে নয়। মন জুড়ায়। এমন এক বাতাস শরীর জুড়ে ছুয়ে গেলো, হোসেন দীর্ঘ এক শাস নিলো। সাথে সাথেই মনে হোলো এই ই তো সুখ। আহ।

জামাল মিয়া হাইওয়ে রাস্তায় পাকা বাস ড্রাইভার। বেশ সময় সচেতন। রাস্তা শুধু শুধু সময় নস্ট করা তার পছন্দ নয়। ভোর হতে শুরু করেছে, জ্যামের কারনে বেশ কিছু সময় নস্ট হয়েছে রাস্তায়।
তাড়া দিয়ে বাসের সুপারভাইজারকে বলল,
- ভালো করে দেখেন সামনের স্ট্যান্ডে কোনো যাত্রি আছে কিনা। না থাকলে দাঁড়ায় সময় নস্ট করব না। টেনে চলে যাবো।
সুপারভাইজার মাথা নেড়ে সায় দিয়ে জানালা দিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো। কোনো যাত্রি নেই।
- দেখসেন? আসে কেউ?
- না, ওস্তাদ। নাই।
- ভালো করে দেখসেন তো? আমিও ত কাউরে দেখি না। পরে আবার ঝামেলা না হয়।
- নাই কেউ। টান দেন।
- আচ্ছা দিলাম।
হোসেন আর লোকটি চুপ করে ভোর হওয়া দেখছে। জীবনের অনেক অনেক অর্থ আজ বোঝা গেল। একটা বাস নীরব পরিবেশের আমেজকে চূর্ন করে চলে যাচ্ছে। চলে গিয়ে সামনের মোড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল একসময়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৭:৩৯
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×