ভোরে হাটছি।রাস্তার পাশের ধান ক্ষেতের আলে দুটি শিশুর সম্মিলিত উল্লাসধ্বনি শুনে এগিয়ে গেলাম।
জানলাম, গতসন্ধায় ভাই-বোন মিলে জমিতে একটা ছেড়া জাল বসিয়ে গেছে। এই ভোরে এসে দেখে একটা জলজ্যান্ত মাছ আটকে আছে।
নিজে জাল পেতে মাছ ধরা,উল্লাসের উপলক্ষ একেবারে ফেলনা নয়। ভাইটার চোখে মুখে পচাব্দি গাজীর আনন্দ, যেন রয়েল বেংগল শিকার করেছে! মাছের সাইজটাও নেহায়েত মন্দ নয়,সোয়া এক ইঞ্চির মত।
জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি মাছ?
ভাইবোন সমস্বরে জবাব দিল- 'খইয়ামালা'(খলসে)
ফের হাটতে হাটতে আমি আমার শৈশবে ফিরে গেলাম।
একবার আনারস মার্কা সুতা দিয়ে কাজের ছেলে হামজা মিয়া আর আমি মিলে একটা 'কই' জাল বানিয়েছিলাম।
আমাদের উত্তরের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে বিশাল এক 'পাটিপাতা খলা'। সেই পাড়ের ৫/৬ হাত অংশ ভাংগা। এখান দিয়ে পুকুরের কই,শিং,মাগুর,শইল পাতা খলায় গিয়ে হাডুডু, গোল্লাছুট খেলে। সেখানেই জাল বসালাম।
রাতে ভালো ঘুম হলনা,যতক্ষণ জেগেছিলাম শুধু জাল আর মাছের চিন্তা। স্বপ্নে একটা ভাল ইংগিত পেলাম, আমাদের ঘরে সব পাতিল মাছ দিয়ে ভর্তি করে ফেলা হয়েছে,আর কোন খালি পাতিল নাই বিধায় এখন চলছে বিলানোর কাম।
ভোরের আলো ফুটার আগেই আমি আর ভাইপো সাগর জালের কাছে গিয়ে হাজির। জালের পাটখড়ির ফাতনা দেখি "আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে" অবস্থায় তুমুল আন্দোলিত হচ্ছে।
মাছের লাফালাফি আর ভারে জাল টেনে তুলাই কস্টকর ঠেকছিল। প্রথমেই দেখি একটা বড় সাইজের বাইম মাছ আটকে মোচড়া মোচড়ি করছে। জালের বাকি অংশে দেখি এলাহী কারবার! বিশাল সাইজের তিনটা ধোড়া সাপ পুরো জাল গায়ে পেছিয়ে বসে আছে!আর কোন মাছের নাম গন্ধ নাই।
অনেক কস্টে বাইম মাছটা খুলে ডুলায় ভরলাম। আম্মা বিশাল বাইম দেখে হতবাক!(আড়াই হাত লম্বা বাইম,হতবাক না হয়ে উপায় আছে!)
বল্লেন- হায়! হায়! এটায় কামড়াইলেতো সর্বনাশ হয়ে যেত?
বল্লাম,কত ধরলাম।বাইম মাছে আবার কামড়ায় নাকি!
কে শোনে কার কথা। আম্মা মাছটাকে ডুলা শুদ্ধ উড়াল মেরে ফেলে দিলেন।
আম্মার বর্ননায় জেনেছি,ঘটনা ভিন্ন! ভোরের আবছা আলোয় বাইম মাছ বলে যাকে ভ্রম করেছি আসলে সেটা ছিল একটা কুইচ্ছা। (কুচো)।