somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ নয়; বাঙলাদেশের মুক্তির একমাত্র পথ মুজিববাদ।

০৬ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি মার্ক্সবাদ, লেনিনবাদ, মাওবাদ পড়ে বুঝে সম্পূর্ণ গুলে খেয়ে মুজিববাদের উপর ঈমান কেনো এনেছি সেটাই আইজ লিখতে বসছি। আমার দেশ বাঙলাদেশ। আর এই দেশের মাটি, মানুষ, রাজনীতি, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি, চেতনা এগুলার সাথে সবচেয়ে গভীরভাবে যে চিন্তাধারা মিশে আছে, তা হইলো; মুজিববাদ। দেশ স্বাধীনের পরপর যে শ্লোগানটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো সেটি হইলো, বিশ্বে এলো নতুনবাদ; মুজিববাদ মুজিববাদ।
- তাই আমি এই লেখায় যুক্তির মাধ্যমে বুঝাইতে চাচ্ছি বাঙলাদেশের রাজনীতিতে কোন ইজম বা বাদ আসলেই কার্যকর। আর কেন মুজিববাদই হইতে পারে একমাত্র মুক্তির পথ?

১. মার্ক্সবাদ:
-বইয়ের ভাষায় বিপ্লব- যেটাতে এইদেশের লক্ষ মানুষের রক্তেভেজা পলিমাটির গন্ধ নাই।

মার্ক্সবাদের উৎপত্তি ইউরোপে ; একেবারে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। ওখানে শ্রমিক-ধনী কনফ্লিক্ট, ফ্যাক্টরি বনাম ফিউডালিস্ট, শ্রেণিসংগ্রাম- এইসবের উপর গড়া। কিন্তু বাঙলাদেশের বাস্তবতা হইলো, গরিব ধনী নয়; শহর-গ্রাম-বঞ্চনা আর জাতিগত বৈষম্যই মূল দ্বন্দ্ব।

মার্ক্স যেই সমাজতন্ত্র বলেন, সেটা বইয়ের ভিতরে বন্দি। কিন্তু মুজিব বলছে "বাঙলার অর্থনীতি হবে সমাজতান্ত্রিক ভিত্তিতে গড়া।" মানে একদল কোটিপতি, আরেক দল পান্তাভাতে জীবন- এইটা হবে না। সমাজতন্ত্র মানে বণ্টনের ন্যায্যতা, ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা।
আমরা চাই বাঙলার সমাজতন্ত্র; যেইখানে কেউ কাউরেই শোষণ করবে না, সবাই সম্পদ এবং ক্ষমতার ভাগ পাবে সমানে সমান।

২. লেনিনবাদ:
রাশিয়ার ঠাণ্ডা মাথার বিপ্লব।
লেনিন বলছে, "প্রলেতারিয়েত নেতৃত্বে রাষ্ট্র বদলাবে।"-ঠিক আছে, রাশিয়ার জন্য খাপে খাপে লাগছে। কিন্তু আমরা? আমাদের রাষ্ট্র গড়ার চিন্তা কি এইভাবেই চলবে? যেখানে প্রলেতারিয়েতের শব্দের আভিধানিক অর্থই বাঙলার মানুষ জানে না বুঝে না!

মুজিব বলছে, "গণতন্ত্রই মানুষের মুক্তি দিবে।"
তবে এই গণতন্ত্র হবে না ধনিক শ্রেণির গণতন্ত্র। যেইখানে ভোটে টাকা চলে, গদিতে যায় মিথ্যুকরা। এই গণতন্ত্র হবে শোষিতের গণতন্ত্র।
ভোটে দাঁড়াবে গরিবের সন্তান, ভাত পাবে মেহনতি মানুষ, বাকস্বাধীনতা থাকবে মানুষের।

লেনিনের ডিক্টেটরশিপ অফ প্রলেতারিয়েত চাই না আমরা। আমরা চাই গণতন্ত্র, যেইটা মুজিববাদে গড়ার কথা বলা আছে।

৩. মাওবাদ:
-বন্দুকের মুখে দুনিয়া বদলানো।

মাও বলছে, রাজনীতি এবং ক্ষমতা আসে বন্দুকের নল থিকা। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বন্দুক ধরছি ঠিকই, কিন্তু সেইটা ছিলো আত্মরক্ষার এবং মুক্তির জন্য; ক্ষমতা লুটপাটের জন্য না।

মাওবাদে ধর্ম নাই, জাতীয়তা নাই। আছে শুধু বিপ্লব আর গেরিলা যুদ্ধ। কিন্তু আমরা বাঙালি, আমাদের জাতীয়তা আছে, আমাদের ভাষা আছে, আমাদের সংস্কৃতি আছে আমাদের আছে ধর্ম।

মুজিববাদের চার স্তম্ভের এক স্তম্ভ হইল "বাঙালি জাতীয়তাবাদ"- মানে আমরা বাঙালি জাতি হিসাবে রাষ্ট্র গড়ব। পাকিস্তান হইছিল ধর্মের ভিত্তিতে কিন্তু বাঙলাদেশ গড়ছিলাম আমরা জাতির ভিত্তিতে- আর এইটাই মুজিববাদ।

৪. ধর্মনিরপেক্ষতা:
রাজনীতি রাষ্ট্রের, ধর্ম মানুষের।
- মার্ক্স'তো ধর্মরে কইছে ‘আফিম’। লেনিন ধর্মরে নিষিদ্ধ করছে। মাও'তো মন্দির, মসজিদ সব ডিনামাইট দিয়া উড়াইয়া দিছে। কিন্তু মুজিব বলছে, ধর্ম তোমার, রাষ্ট্র সবার।

মুজিববাদে-
রাষ্ট্র থাকবে ধর্মনিরপেক্ষ;- এর মানে এই না রাষ্ট্র ধর্মবিরোধী হবে এর মানে এই রাষ্ট্র হবে সব ধর্মের। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলের। কেউ কারও ওপর সওয়ার হবে না, জুলুম হবে না, ভয়ের জীবন যাপন করতে হবে না। এই ধর্মনিরপেক্ষতা ইহুদি রাষ্ট্র কিংবা ইসলামি রাষ্ট্রের মতন একক ধর্মের রাষ্ট্র না, এইটা একটা মানবিক রাষ্ট্র; এইটাই মুজিববাদ।

৫. মুজিববাদ:
এই মাটির ভাষা, এই মাটির মানুষের স্বপ্ন।

মুজিববাদ মানে চারটা স্তম্ভে দাঁড়ানো রাষ্ট্রীয় চিন্তা।
১. শোষিতের গণতন্ত্র
২. ন্যায্য সমাজতন্ত্র
৩. মানবিক ধর্মনিরপেক্ষতা
৪. বাঙালি জাতীয়তাবাদ

এই চারটা মিলে একটা দেশ গড়ার ব্লুপ্রিন্ট। এই চিন্তা কপি-পেস্ট না; এইটা জন্ম লইছে এই মাটির ভিতর থিকা। এইটা কোন বিদেশি তত্ত্ব না- এইটা আমার বাপের মতো আপন।

৬. বাঙলাদেশের প্রেক্ষাপটে কেন মুজিববাদই শেষ সত্য?

কারণ আমরা একটা বিভ্রান্ত সময়ের ভিতর আছি। কেউ কয় ইসলামি রাষ্ট্র, কেউ কয় মার্ক্সবাদ, কেউ মাওবাদ! কিন্তু আমার প্রশ্ন, এইগুলা দিয়া কী এই দেশের কোন সমস্যার সমাধান হইছে কখনো? হইতে পারে ভবিষ্যতেও?

শুধু শেখ মুজিব বলছে, "তোমাদের যা কিছু আছে, দাও- আর তৈরি হও, একটা দেশ বানানোর জন্য।"তিনি বলেন নাই, তার নামে রাষ্ট্র বানাও। তিনি বলছে, "মানুষরে ভালোবাসো, তবেই রাষ্ট্র গড়তে পারবা।"

মার্ক্সবাদে শোষণবাদ ধইরা রাখা হয় বইয়ের ভিতর। লেনিনবাদে বিপ্লব হয় বন্দুকের ছায়ায়।
মাওবাদে মানুষ নাই, আছে বন্দুক আর গেরিলা পলিটিক্স। কিন্তু মুজিববাদে মানুষ আগে, মতবাদ পরে। আর এইটাই বাঙালির পথ। এইটাই বাঙালির ঈমান। এইটাতেই বাঙালির মুক্তি।

জয় বাঙলা।
জয় বঙ্গবন্ধু ।
জয় মুজিববাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:০৪
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×