শুধুমাত্র একটি ঘটনা দিয়ে বিষয়টি আরো বর্ননায় যেতে চাই।
গত ৩০ডিসেম্বর আমার এক বন্ধুর বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই। আমার ঐ বন্ধু পেশায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবি। দেশের সবচেয়ে সচেতন একজন ব্যক্তি তিনি এবং তিনি কোন দলের সাথে জড়িত নন । তিনি ভোট দেওয়ার জন্য ৫,০০০ হাজার টাকা পথ ভাড়া নিজ উদ্যেগে খরচ করে তার গ্রামের বাড়িতে গেলেন। প্রথমে সকাল ৮ টায় ঐ আইনজীবির মা ভোট দিতে গেলেন। পথে ছাত্রলীগের ছেলেরা বাধা দিলেন ভোট না দেওয়ার জন্য। বাধা উপেক্ষা করে তিনি ভোট দিতে গেলেন। গিয়ে দেখেন ভোটার স্লিপ নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। কোন ভোটারের উপস্থিতি নাই। অজানা অতংক নিয়ে ভয়ে ভয়ে তারপরও কিছুটা সময় অবস্থান করলেন। যারা তার মাকে পথে পথে বাধা দিয়েছিল তারাই দলীয় প্রতীক নিয়ে বসে আছে স্লিপ দেওয়ার জন্য। তাদের কাছে অনুনয় বিনয় করে বললেন ভোটার তালিকায় তার সিরিয়ালটা দেওয়ার জন্য। কিন্তু অনেক অনুরোধ করার পরও তারা তা দিলেন না। অন্য কোন প্রার্থীর স্লিপ বিতরনকারীও নাই যে,তিনি ভোটার সিরিয়াল সংগ্রহ করবেন। পরে স্লিপ ছাড়াই ভোটার শূন্য কেন্দ্রের দিকে যেতে চাইলন,তাকে বাধা দেওয়া হল। পাশ থেকে বলা হল আপনি ভোট দেওয়ার দরকারটা কি ? আরো অনেক অপমানজনক কথা বললেন তার মাকে। অত:পর তিনি ভোট না দিয়ে অপমানে কান্না করতে করতে বাসায় চলে আসলেন।
উক্ত ঘটনার পর ঐ আইনজীবির আতœীয় স্বজনরা ভোট দিতে গেলে পথে পথে বাধা দেওয়া হয়, ভোট না দেওয়ার জন্য। তার উক্ত আতœীয় স্বজনসহ এলাকার কাউকেই ভোট দিতে দেওয়া হল না। অত:পর আমার ঐ বন্ধু নিজে ভয় ভীতিকে উপেক্ষা করে ভোট দিতে গেলেন। সাথে এলাকার অন্য একজন ব্যক্তি । সাথে থাকা ব্যক্তিকেও ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা পদে পদে বাধা দিয়েছেন ভোট না দেওয়ার জন্য। আমার সাহস দেখে তিনি বললেন আমি ভোট দিবই। একসাথে যখন দুইজন রওনা দিলেন ভোট দেওয়ার উদ্দেশ্যে। তখন অনেক শুভাকাংক্ষী-ই বলেছিল ভোট দিতে গেলে তাদের মেরেও ফেলতে পারে। জীবনের ঝুকি নিয়ে আমার ঐ বন্ধু যখন ভোট কেন্দ্রে হাজির হলেন তখন দেখলেন শতাধিক ছাত্রলীগের ছেলেরা অস্ত্র তাক করে বসে আছে। তখন সকাল ১০.৩০ মি। ভোট কেন্দ্রের প্রধান ফটকে তারা তালা লাগিয়ে বসে আছে। ভোট কেন্দ্রে ছাত্রলীগের ছেলেরা অবাধে আসা যাওয়া করছে। পাশে পুলিশ দাড়িয়ে ছাত্রলীগের ছেলেদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। এর আগে ব্যাপক বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতংক সুষ্টি করা হয়। তারও কিছু সময় আগে ছাত্রলীগ সমর্থিত দলের কিছু লোককে কেন্দ্রে ভোটার হিসেবে ডেকে ডেকে আনা হয়। তারপর হাতে রং লাগিয়ে দেওয়া হয়, তাদেরকে বাহিরে গিয়ে বলতে বলা হয় তারা ভোট দিয়েছেন। অনেক অনুরোধ করার পরও আমার ঐ বন্ধুকে এবং সাথে থাকা ঐ লোককে ভোট দিতে দিল না। বলা হল ভোট হয়ে গেছে।
আমার ঐ বন্ধুর সাথে থাকা লোকটি প্রতিবাদ করে বলতে থাকেন আমার ভোট কে দিল? আমি সেটা দেখতে চাই। এই কথা বলার পর তারা উত্তেজিত হয়ে আমার বন্ধুর সাথে লোকটির গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করে। অপমানে আমার ঐ বন্ধুর সাথে থাকা লোকটিসহ ভোটার কেন্দ্রস্থল ত্যাগ করেন। আমার ঐ বন্ধু জানান তিনি তার এলাকার শতাধিক লোকেেক জিঞাসা করেছেন,তারা একজনও বলেননি তারা ভোট দিয়েছেন। ভোটের আগের দিন রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যানগন রিটানিং অফিসারদের ডেকে ডেকে নির্দেশ দেন রাতের মধ্যে ৭০ শতাংশ ভোট কাষ্ট করে বাক্য্র বন্দি করার জন্য। আমার ঐ বন্ধু আক্ষেপ করে বলতে থাকেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে সচেতন ব্যক্তি হয়ে তিনি এবং তার পরিবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন নাই। তাহলে ভোট দিতে পারবে বা পেরেছেন কে? সন্ধায় দেখানো হল ঐ কেনেদ্রর ৮০ ভাগ ভোট কাষ্ট হওয়ার খবর। তামাশা শব্দটাও লজ্জা পায়। কারন তামাশারও একটা সীমা আছে।
এই হল পুরো বাংলাদেশের চিত্র । বাংলাদেশে ৩০ তারিখ কোন ভোট হয়নি। বিরোধী পক্ষের যেখানে একটি পোষ্টার সহ্য করতে পারেন নাই,সেখানে তারা কিভাবে ভোট দিতে দিবে,এটা রাজনীতিবিদরা জানতেন। তবে এতটা নিলজ্জ হবেন ক্ষমতার জন্য। এটা কারো কল্পনায়ও ছিল না। যারা ভোট ছাড়া পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারেন। তাদের পক্ষে সবই সম্ভব এটাই প্রমানিত হল। কেন তারা সংবিধানের দোহাই দিয়ে কেয়ার টেকার বাদ দিয়েছেন সেটা কি আর ব্যাখ্যা করার দরকার আছে?