কাল সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে।মুষল ধারে না টিপ টিপ বৃষ্টি।আামি অনেক রাত জেগে বৃষ্টি দেখেছি।এমনিতে আমি বেশী রাত জাগতে পারি না।তার পরও কাল অনেকক্ষন জেগে ছিলাম।আমি বাসায় একা থাকি এ কারনে সারা রাত বাতি জালিয়ে রাখি।না হলে ভয় লাগে।আমার আবার ছোট বেলা থেকে ভুতের ভয়।কাল রাতে সাহস করে সব বাতি বন্ধ করে বারান্দায় বসে বসে বৃষ্টি দেখলাম।সে এক অন্যরকম অনুভূতি।আমার বন্ধুরা বলে আমি রোবট এর মত অনুভুতিহীন কিন্তু কাল রাতে আমি ভলিউম কমিয়ে গান ও শুনেছিল।ইন্দ্রানী সেনের গান কাল অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি ভাল লেগেছিল।অনেক দিন পর কাল ভাল মুডে ছিলাম।
কাল রাতের বৃষ্টি আমাকে আমার ছোটবেলার সেই সব সোনালী বৃষ্টি দিনের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়েছিল।সেই অজপাডাগাঁ, ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত,টিনের ছালে বৃষ্টির অপূর্ব পব্দ,উঠান ভরা কাদা পানি,বাডির সামনে হাঁটু পানি,ব্যঙের ডাক আরো কত কিছু।আমি বসে বসে শুধু ভাবছিলাম।আমরা মধ্যবিও সমাজের মানুষ শহরে আসার পর চেষ্টা করি যত তারাতারি পারি শরীর থেকে গ্রামের গন্ধ যেন দুর করা যাই।আমি নিজেও সেই কাজ করেছি তারপরও পুরপুরি পারি নি।আজ সকাল থেকে শুধু
গ্রামের কথা মনে পরছিল।হঠাৎ করে গ্রামের সব কিছুকে অনেক আপন মনে হচ্ছে।পুকুর পারের নারিকেল গাছ,সুপারি গাছ, আমার জানালার পাশের নিম গাছ যেটা আমি কোন দিন পছন্দ করি নি মা কে সব সময় বলতাম নিম গাছটা কেটে ফেলতে আজ তার কথাও মনে পরছে।
ছোটবেলাই আমরা দল বেঁধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতাম।আমাদের বাডি থেকে বের হওয়ার ২টা পথ ছিল। ১ টা বাডির সামনে আর ১ টা পিছনে।পিছনে পথের ২ পাশে ২টা পুকুর ছিল।এখনো আছে।বর্ষকালে আনেক বৃষ্টি হলে পানি পথের উপর দিয়ে গরিয়ে যেত। মনে হত ২ পুকুর এক হয়ে গেছে।পথের উপর তথন থকত হাটু পানি। আমরা স্কুল থেকে এসে ছোট জাল নিয়ে নেমে যেতাম মাছ ধরতে।আমাদর চিৎকারে বাডির সবাই ছিল মহা বিরক্ত।অনকক্ষন পানিতে থেকে চোখজোডা লাল করে ঘরে ফিরলে ভাবির হাতের গরম গরম ভাতের সাথে মিলত মায়ের বকুনি।কত দিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কাদা পানিতে ইচ্ছা করে পডে জামা নষ্ট করেছি।
আমাদের বাডির সামনে একটা খাল ছিল।এখন খালে পানি থাকে না।সেই সময় খালে প্রচন্ড় জোয়ার আসত। আমার নানার বাডি ছিল খালের অপর পারে।ভাটার সময় আমরা নানার বাডি যেতাম।আবার রাতে জোয়ার অসার আগে ফিরে অসতাম।আমার নানা-নানু আমার জন্মের আগেই মারা গেছেন।আমরা যখন ফিরে আসতাম আমার মামি কুপি হাতে খাল পারে দাডিয়ে থকতেন।আমরা খাল পার হলে মামি ফিরে যেতেন।এই খালে আমি অনেক দিন মাছ ধরতে এসেছিলাম আমার বড় চাচাতো ভায়ের সাথে।বড় ভাই জাল মারতেন আর আমি ড়ুলা ( মাছ রাখার বিষেশ পাএ, বাঁশ দিয়ে বানানো।) নিয়ে দারিয়ে থকতাম।চিংড়ি, কোরাল, কই, বাটা,চিরিং ওনেক রকমের মাছ।এখন খালে ভরা বর্ষায় পানি থকেনা।শুকনো খাল দেখে অনেক কষ্ট লাগে।আমার ছোটবেলার গ্রামের সাথে এখনকার গ্রামের কোন মিল নাই।আমি এই ইট কাঠের শহরের মানুষ হয়ে যেতে চাই।পারি না।কোন না কোন ভাবে গ্রামের কথা মনে আসবেই।মাজে মাজে আমার মনে হয় আমি পুরো শহুরে কোন দিন হতে পারব না।আমি প্রানপন চেষ্টা করি তবুও পারিনা।আমি আসলে পারবোনা।হে আমার প্রিয় গ্রাম আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি যদিও আমি তোমার জন্য কিছু করছিনা, তোমার হারিয়ে যওয়ে সৌন্দর্য্য ফিরেয়ে আনার জন্য আমার কোন চেষ্টা নাই, তুমি আমাকে ক্ষমা কর।