ভোট দিবেন না কলাগাছে:
শৈশবে ভোটের পোস্টার সংগ্রহ করা ছিল আমাদের নেশা। ভোটের মাইকিংয়ের গাড়ির পেছনে ছুটে ছুটে আমরা পোস্টার নিতাম। মাইকিংগুলো শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে যেত। একটা স্লোগান তো এখনো মনে পড়ে— একটা ভোটের মূল্য আছে, ভোট দেবেন না কলাগাছে। পরে বুঝেছি কথাটা কত সত্যি।
একটা ভোট ব্রিটিশ সিংহাসনে বসিয়েছিল রাজা প্রথম জর্জকে। একটা ভোটের ব্যবধানে অ্যারন বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। এক ভোটের কারণে অভিশংসন থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু জনসন, টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের গদি। এক ভোটের কারণে ওয়াশিংটন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এক ভোটের ব্যবধানে মার্কিন সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী পাস হয়েছে, যার ফলে নারীরা পেয়েছেন ভোটাধিকারের স্বীকৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ অধিকার।
১৮৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানার সুইজারল্যান্ড কাউন্টির ফ্রিম্যান ক্লার্ক নামের এক ভোটার নির্বাচনের দিন খুবই অসুস্থ ছিলেন। শেষে ছেলের কোলে চড়ে ভোট দিতে এসেছিলেন। বাড়ি ফেরার পথেই ক্লার্ক মারা যান। সেই ক্লার্ক রাজ্য সিনেটরের পদে ভোট দিয়েছিলেন ডেভিড কেলসোকে।
ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, কেলসো এক ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত! সেই কেলসো সিনেটর হিসেবে ভোট দেন এডওয়ার্ড হানিংগানকে। এবার মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছিলেন হানিংগান! ঘটনা এখানেই শেষ নয়। মার্কিন সিনেটে মহাগুরুত্বপূর্ণ একটি বিল পাস হয় মাত্র ২৭-২৫ ভোটের ব্যবধানে। যে দুটো ভোট মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল, তার একটি দেন হানিংগান। এক ভোটের কারণে কত কিছুই না হয়ে গেছে। আর এর সবকিছুই শুরু হয়েছিল সেই অসুস্থ ভোটার ক্লার্কের দেওয়া একটি ভোটের কারণেই!
একটি ভোটের কত মূল্য! তাই আপনার মূল্যবান ভোটটি সৎ, যোগ্য, উন্নয়ন মুখী, এবং যার দ্বারা এলাকার উন্নয়ন সম্ভব তাকে দিবেন।
মনে রাখবেন, একটা ভোটের মূল্য আছে, ভোট দিবেন না কলাগাছে।
মিথ্যা ধরার ঘড়ি:
শিয়াল পন্ডিত শুধু নামেই পন্ডিত না, কাজেও পন্ডিত। জঙ্গলের মূল রাজনীতিবিদ শিয়ালেরা। জঙ্গলের পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত, উত্তর প্রান্ত থেকে দক্ষিন প্রান্ত সব জায়গায়ই শিয়ালের আধিপত্য। শিয়ালের কথা ছাড়া অন্যান্য প্রাণি তো দূরের কথা জঙ্গলের একটা পাতাও যেন নড়ে না। অর্থাৎ জঙ্গলের মূল নেতাই হচ্ছে শিয়ালেরা।
একদিন এক খরগোশ মারা গেল। মৃত্যুদূত খরগোশকে আমলনামা হিসাব নিকাশের অফিসে নিয়ে যাচ্ছে। মূল অফিসে প্রবেশ করার আগে বিশাল একটা কক্ষ। যে কক্ষে শুধু বিভিন্ন রকমের ঘড়ি আর ঘড়ি। সে ঘড়ির সাথে দুনিয়ার ঘড়ির কোন মিল নাই। কারন দুনিয়ার সকল ঘড়ি সেকেন্ড, মিনিট ঘন্টার কাটা নির্ধারিত সময় মেনে চলে। কিন্তু সেখানকার ঘড়ি কোনটা মাঝে মাঝে ঘুরে, কোনটা একটু পর পর, কোনটা অনেকক্ষন পর আবার কোনটা ঘুরে বলে মনে হয় না।
খরগোশ কৌতুহল থামাতে না পেরে মৃত্যুদূতকে বলল। এখানকার ঘড়ি এমন কেন?
মৃত্যুদূত বলল, এগুলো হচ্ছে মিথ্যা ধরার ঘড়ি। দুনিয়াতে যখন কেউ একটা মিথ্যা কথা বলে তখন তার নামের ঘড়ি একটা ঘুরানি দেয়। আর তখন আমরা বুজতে পারি কে মিথ্যা কথা বলল।
হঠাৎ একটা ঘড়ি ঘুরানি দিল। মৃত্যুদূত বলল, এটা গাধা ঘড়ি। অনেকক্ষন পরে মিথ্যা কথা বলল। একটু পর পর একটা ঘড়ি ঘুরতাছে ওটা দেখিয়ে বলল, এটা ছাগল ঘড়ি। আরেকটা ঘড়ি দেখে মনে হয় এটাও অনেকক্ষন পরে হলেও ঘুরে সেটা দেখিয়ে বলল এটা বাঘ ঘড়ি। প্রায় একই রকম আরেকটা দেখিয়ে বলল এটা সিংহ ঘড়ি। মাঝে মধ্যেই ঘুড়ে এমন একটা দেখিয়ে বলল এটা বানর ঘড়ি। এভাবে জঙ্গলের সবার নামের ঘড়ি দেখাইলো কিন্তু মূল নেতা শিয়াল পন্ডিতের ঘড়ি দেখাইলো না।
খরগোশ কৌতুহল দমাতে না পেরে মৃত্যুদূতকে বলল, যে আমাদের জঙ্গলের প্রধান নেতা, যাদের কথায় জঙ্গল পরিচালিত হয়, সেই মহান নেতা শেয়াল পন্ডিতদের ঘড়ি দেখলামনা তো?
মৃত্যুদূত বলল, দূর পাগলা আগে বলবে না! তোমাদের নেতাদের ঘড়ি সেই যে ঘুরা শুরু হয়েছে আর থামাথামি নাই। তাই আমাদের অফিসে সব অফিসারের টেবিলে তোমাদের নেতাদের একেকটা ঘড়ি রাইখা দিছি যেগুলা টেবিল ফ্যান হিসাবে কাজ করতাছে।
কৃতজ্ঞতা: রুহুল আমিন ভাই।
ছবি: গুগলের.....
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৫