(১) এক দরিদ্র প্রজা বাদশার দরবারের প্রবেশ পথে খেয়াল করে দেখলো একপাশে কাক আর একপাশে ময়না পাখি খাঁচায় বন্দি। অদ্ভুত বিষয় হলো কাকের সামনে খাবারের অভাব নাই কিন্তু ময়না পাখির সামনে কোন খাবার নাই।
দরিদ্র প্রজা বাদশার কাছে জানতে চাইলো, হিসাবে তো ময়না পাখির সামনে খাবার বেশি থাকার কথা কিন্তু ময়না পাখির সামনে কোন খাবার নাই আর কাকের সামনে প্রচুর খাবার এরকম ব্যতিক্রম হওয়ার রহস্য কি?
বাদশা বলল, কাকের কা কা ডাক শুনলে মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। কাকের সামনে খাবার না থাকলে ডাকাডাকি করে। তাই সবসময়ই কাকের সামনে প্রচুর খাবার রাখা হয় যেন কা কা না করে। পক্ষান্তরে ময়না পাখির ডাক আমার খুব ভাল লাগে। যদি পর্যাপ্ত পরিমান খবার দেওয়া হয় তবে ময়না পাখি ডাকে না। তাই ময়না পাখিকে খাবার কম দেওয়া হয়, মাঝে মাঝে অভুক্ত রাখা হয় এতে ময়না পাখি প্রচুর ডাকাডাকি করে, যে ডাক শুনে মনে শান্তি পাই।
ঠিক তেমনি সব বাদশার বাদশা মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের সব সময়ই কোন না কোন পেরেশানিতে রাখেন যেন সব সময়ই তাঁকে ডাকেন, যে ডাক মহান আল্লাহ তায়ালা শুনতে চান। পক্ষান্তরে যারা মহান আল্লাহ্তালার নাফরমানিতে ব্যস্ত, যাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। তাদের এই দুনিয়াতে, দুনিয়ার নাজ-নিয়ামত দ্বারা এতটাই ব্যস্ত করে রাখছে যে আল্লাহ তায়ালাকে ডাকার মত সময় তাদের হয় না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তাঁরা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে," নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।" (সূরা বাকারা:১৫৫-১৫৬)
তাই আসুন দুনিয়াদারীতে না মজে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মশগুল থেকে, আল্লাহর প্রিয় বান্ধাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাই। আমাদের সকল কাজে যেন ঈমানদারিত্বের ছাপ থাকে।
(২) বিয়ের সাজে কনেকে খুব সুন্দর করে সাজানো হল। বান্ধবীরা এসে বলল, আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। কাজল কালো চোখ, আলতা রাঙ্গা ঠোঁট, বেনারসি শাড়িতে তোমাকে অপরুপ লাড়ছে। এসব প্রশংসার কথা শুনে কনে বান্ধবীদেরকে বলল, তোমরা যতই প্রশংসা কর না কেন; সে (বিয়ের পাত্র) যদি পছন্দ না করে, সে যদি সুন্দর না বলে তবে তোমাদের এই প্রশংসা করাতে, তোমাদের এই সুন্দর বলাতে আমার কোন লাভ হবে না।
দুনিয়ার মানুষ সুন্দর বলবে তার জন্য আমাদের দেহটাকে সাজানোর জন্য কতই না আয়োজন করতেছি, জামা কাপড় ময়লা হলে সাবান পানি দিয়ে পরিস্কার করছি। তারপর আরও সুন্দরের জন্য ইস্ত্রী করছি। নিয়মিত চুল, দাঁতের যত্ন নিচ্ছি। ধর্মের বাণীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সপ্তাহে সপ্তাহে ক্লিন সেভ করছি আর মহিলারা নিজেকে কিভাবে আরও আকর্ষনীয় করা যায় তার জন্য পার্লারে গিয়ে সাজগুজ করছি। এমনকি নিজেদের সৌন্দর্য একটু যেন বৃদ্ধি পায় তার জন্য পায়ের জুতাটাও মাঝে মাঝে পালিশ করছি। নারী পুরুষ নির্বিশেষে দুনিয়ার মানুষ সুন্দর বলবে তার জন্য কত কিছুই না করছি।
একবারও কি ভেবে দেখেছি আমাদের এই সাজগুজ, চলাচল যদি আমাদের নবীর তরীকা মত না হয়, মহান আল্লাহ্ তায়ালা যদি পছন্দ না করে তবে দুনিয়ার সমস্ত মানুষ সুন্দর বলাতে তো কোন লাভ হবে না।পরকালে কোন কাজেই আসবে না বরং আরও ভয়াবহ আজাবের মুখোমুখি হতে হবে।
"তোমরা আল্লাহর রঙে রঙিন হও। আর কে আছে এমন যে, আল্লাহর চেয়ে অধিক রঙিন" (সুরা বাকারা ১৩৮)।
আল্লাহর রঙে রঙিন হওয়া অর্থাৎ আল্লাহর গুণের অধিকারী হওয়া।
নবী করিম (সা.) এভাবে বলেছেন, ''তোমরা আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হও''।
তাই আসুন দেহকে নয় অন্তরকে পরিস্কার রাখার জন্য অন্তত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ভোরে কোরআন তেলায়াত, শেষ রাতে একটু জিকির করি। সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে চলি। সেখানেই তো জীবনের সাফল্য!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৯