পাঠ প্রতিক্রিয়া: জীবনের ব্যাকরণ
"একজন সেলিব্রেটি মারা যায়
শোনা যায় কত শত হৃদয়ের ক্রন্দন
সিরিয়া আর ইয়েমেনে ঝরে যায় কত তাজা প্রাণ
তাতে কাঁদে নাকো হায় একজনও সরলপ্রাণ
তেড়ে চলে জীবনোচ্ছ্বাস আগ্রাসী সেনা
বেড়ে চলে অনিকেত জীবনের দেনা।"
বলছিলাম "জীবনের ব্যাকরণ" থেকে। এটি কাজী নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথের লেখা নয়। আমাদেরই একজন, অতি পরিচিত মুখ রহমান লতিফ ভাইয়ের লেখা। জীবনের ব্যাকরণ নামকরণের স্বার্থকতা খুঁজে পেলাম প্রতিটি পাতায়। কি নেই এখানে? নারীকুলের কথা, প্রেম, পরবাসী জীবন, গোপন কান্না, সুখের ঠিকানা, সময়ের প্রলাপ বকে নির্মলতার খোঁজ পাবেন যে কোন পাঠক। মা-বাবা, সহোদর আর প্রিয়জনের ভালবাসার বিনিময়ে জীবনের যে ব্যাকরণ কবি সাজিয়েছেন তা সত্যিই প্রসংসার দাবীদার। কিন্তু পরবাসে কেমন আছেন কবি? তাও সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন কবির কথার যাদুতে।
সময় দ্রুত শেষ হয়
অবিচার শেষ হয় না!
সভ্যতার কালো দিকগুলো
আদিম থেকে আজ অবধি-
আগের থেকে এখন অনেক পরিণত।
কাঠগড়ায় জীবনের ব্যাকরণ:
১. বইটিতে নেই কোন প্রচ্ছদ লেখা, নেই ভূমিকা। কবির কিছু কথা যোগ করলে কি এমন ক্ষতি হতো। এসব ছাড়া যে একটি বইকে শুকনো শুকনো লাগে। তবুও কবিতার ভাবের গভীরতায় এবারের মত শাস্তি দিলাম না।
২. ইংরেজী কবিতাটি আরো ভালো হতে পারতো।
৩. "জীবনের ব্যাকরণ" কবিতায় কিছু কঠিন শব্দ আছে যা পড়তে পাঠকদের কষ্ট হবে বলে মনে হয়। আমার কিছুটা কষ্ট হয়েছে।
"আমি সু-পুরুষ "কবিতাটি দূর্দান্ত হয়েছে। এক্কেবারে সমাজের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে। লেবাসদারী সু-পুরুষের কথা তুলে এনেছেন এখানে। ভালো থাকুন কবি, ভালো থাকুক জীবনের শুদ্ধ ব্যাকরণ।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: কঙ্কাবতীর কথা
"ইচ্ছে করলেই ফিরে যেতে পারতাম আমার দাদু বাড়িতে। নিজের দাবীতে সকলের চোখের মণি হয়ে সেখানে থাকাটা মোটেও অসম্ভব কিছু ছিলো না আমার জন্য। তবুও আমি যেতে চাইতাম না বা চাইনি তার একটা মাত্র কারনই ছিলো আমার মা। মায়ের কাছাকাছি না থাকতে পারলেও একই বাড়িতে আছি। তাকে দেখতে পাচ্ছি সে-ই বা কম কি। আমার নিজের বাবা যতদিন ও বাড়িতে ছিলেন কোনো একটা দিনও আমার মনে পড়ে না বাবার সাথে মাকে হাসিমুখে কথা বলতে দেখেছি। কিন্তু এ বাড়িতে প্রতি সন্ধ্যায় মা বেরিয়ে যেতেন বাবার সাথে ক্লাবে কিংবা পার্টিতে। মা বেরিয়ে যাবার পরেও সারাবাড়িতে ছড়িয়ে থাকতো কড়া বিদেশী পারফিউমের গন্ধ। আমি সেই গন্ধ নিয়ে সারা সন্ধ্যা ঘুরে বেড়াতাম। মা ফিরতেন গভীর রাতে। আমি তখন গভীর ঘুমে আছন্ন, এমনই ভাবতেন হয়তো তারা। কিন্তু মা কোনোদিন জানবেনা, মা না ফেরা পর্যন্ত আমি কোনদিনই চোখের পাতা এক করতাম না। আমার ঘর থেকে জানালা দিয়ে দেখতে পাওয়া বড় গেটটাতে চোখ মেলে বসে থাকতাম ঐ প্রায় মধ্যরাতেও, অপেক্ষায় থাকতাম কখন দেখা যাবে গাড়ির হেড লাইট বা শোনা যাবে নতুন বাবার বড় গাড়িটার হর্ণ........."
গল্পকারেরা নিষ্ঠুর কেন হয় বুঝিনা! ছোট্ট একটা মেয়ে কি এতো কষ্ট সহ্য করতে পারে? যে মাকে নিয়ে আবেগঘন গান কবিতার অন্ত নেই সেই মায়েরই এ এক ভিন্নরুপ দেখে বাকরুদ্ধ হবে যে কেউ। কি পাষাণ হৃদয়! এমন আচরন কি করে করতে পারে একজন মা?? আধুনিক বলেই হয়তো। এই মায়ের পদতলেই কি আমার জান্নাত? মায়ের পাশে থেকে সে জান্নাতের চিহ্ন আমি ঢের বুঝতে পারছি। কঙ্কাবতী পরে এরচেয়ে ভালো কথা আমি বলতে পারবো না। আমি তো আর গল্পকার নই যে সুন্দর করে গুছিয়ে বলবো। মা-বাবার আদর বঞ্চিত মেয়ের জন্য শিউলি, রমেশ চাচা, স্কুলের বুবলি আপা আর নতুন ফুপি যেন দয়াময়ের আশির্বাদ।
"কঙ্কাবতীর কথা" পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো আমি চোখের সামনে সব দেখতে পাচ্ছি। বড় পর্দায় সিনেমা দেখার মতো স্বাধ যাকে বলে। অন্তর ভিজিয়ে দেয়ার মতো কাহিনী...........
কাঠগড়ায় কঙ্কাবতী:
১. শক্তমলাটের প্রচ্ছদ উল্টাতেই একটা বানান আমাকে ধাক্কা দিলো । শব্দটা যে "ইদানিংকালে" না হয়ে "ইদানিং" হবে! শায়মা আপু বানানটা ঠিক করে নাও। প্রচ্ছদ কথা দেখেই একজন পাঠক বই কিনতে আগ্রহী হয়। প্রচ্ছদ লেখাটি আরো আকর্ষণীয় করা যেত।
২. সম্পূর্ণ বইটি একটানে পরে শেষ করার মতো তা যে কেউ স্বীকার করবে। বেশ আকর্ষণীয় লেখা। কঙ্কাবতীর প্রথম দুই পৃষ্ঠায় কিছু লাইনের দিকে আরো নজর দেয়া যেত। যেমন:
"আমার মা ছিলেন অপরূপা সুন্দরী। তার কাঁচা হলুদ মাখা গায়ের রঙ, বাঁশির মত টিকালো নাক, বড় বড় কালো ভ্রমরের মতন চোখ আর এক মাথা কুঁচকুঁচে কালো কোকড়া চুলের অমন অপরূপা সুন্দরী কোনো রমণী আমি আমার জীবনে আর কোনোদিন কোথাও কাউকেই দেখিনি। তবে কথায় আছে না ' অতি বড় সুন্দরী না পায় বর, অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর"। তবে আমার মায়ের ক্ষেত্রে কথাটা একটু ভিন্নভাবে খেটেছিলো। অতিরিক্ত সৌন্দর্য্যের কারণে বেশ তাড়াতাড়িই বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো তার।"
লাইনগুলো এমন হতে পারতো: আমার মা ছিলেন অপরূপা সুন্দরী। কাঁচা হলুদ মাখা গায়ের রঙ, বাঁশির মত টিকালো নাক, কালো ভ্রমরের মতন চোখ আর এক মাথা কুঁচকুঁচে কালো কোকড়া চুলের অমন অপরূপা সুন্দরী কোনো রমণী আমার জীবনে আর কোনোদিন কোথাও দেখিনি। কথায় আছে না 'অতি বড় সুন্দরী না পায় বর, অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর'। তবে আমার মায়ের ক্ষেত্রে কথাটা একটু ভিন্নভাবে খেটেছিলো। অতিরিক্ত সৌন্দর্য্যের কারণে বেশ তাড়াতাড়িই বিয়ে হয়েছিলো তার। পর পর লাইনে বার "তবে" কথাটি একটু কানে বাজে। "বড় বড় কালো" কথাটাও কানে বাজে।
সতর্ক বার্তা: "একি খেলা আপন সনে" নামে কঙ্কাবতীর রাজকন্যাকে খুঁজে পেলাম, যেখানে শায়মা আপুর লেখা হুবহু আছে। জানতে ইচ্ছা হচ্ছে, লেখাটি কি আপু ঐ খানে লিখেছেন নাকি চুরি করেছে কেউ?
পাঠ প্রতিক্রিয়া:বায়স্কোপ
গল্প অনেকেই লিখেন; কিন্তু কাওসার চৌধুরী গল্প বুনেন, গল্পের ছবি আঁকেন। চমৎকার উপস্থাপনা, প্লট আর টুইস্টে গল্পগুলো জীবন্ত হয়ে উঠে তাঁর কলমের জাদুর ছোঁয়ায়; সাধারণ চরিত্রগুলো হয়ে উঠে বাস্তব সম্মত। গল্পের প্রকাশ প্রকরণে, চরিত্র চিত্রায়ণে এবং প্রতিবেশ রচনায় তিনি পাঠকের ভাবনাকে নিয়ে খেলেন নিজের মতো করে। এখানেই তাঁর মৌলিকতা। মলাটের নিচে এই লেখাগুলো পরে যে কেউ গ্রন্থটি পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করবে এটা নিশ্চিত। স্বার্থক ছোট গল্পকার কাওসার চৌধুরীর গল্পের জাদুতে আমি মুগ্ধ। প্রথম গল্পটা এক নি:শ্বাসেই পড়ে শেষ করে বুঝেছিলাম এই গল্পের নাম কেন ধূমকেতু। বইয়ের নামে যে গল্পটি রয়েছে তা যে আরো দূর্দান্ত হবে, বুঝার বাকি নেই।
বইটি কেনার জন্য কত যে ঘুরেছি কি আর বলবো। অবশেষে পেলাম বায়স্কোপ। কিনলাম; পড়লাম, মুগ্ধ হলাম! এর চেয়ে আর কিছুই বলার নেই। বেস্ট সেলার হোক বইটি এই কামনা করি।
সম্পূর্ন আমার নিজস্ব মতামত। আপনার যারা অন্যান্য বই কিনেছেন তারাও শেয়ার করতে পারেন মন্তব্যে। তাতে করে বই কেনার জন্য অনেকেই আগ্রহী হবে।
সহজ স্বীকারোক্তি: সময় স্বল্পতার কারণে সবচেয়ে ভালো লাগার বইটির সবচেয়ে অল্প প্রতিক্রিয়ায় আমি সন্তুষ্ট নই। সময় মতো আপডেট করবো ইনশাআল্লাহ। ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়। বায়স্কোপকে আমি কাঠগড়ায় দাঁড়করাতে পারলাম না, দু:খিত!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৩৪