somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাবমেরিন- ভয়ংকর আর আশ্চর্য্য এক পানির নীচের জলযান সম্পর্কে কিছু তথ্য

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সাবমেরিন, পানির নীচে চলমান এক আশ্চর্য সামুদ্রিক জলযান, যুদ্ধে এক ভয়ংকর মারণাস্ত্র।



জ্বালানীর উপর নির্ভর করে সাবমেরিন দুরকম, ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন আর নিউক্লিয়ার সাবমেরিন। অবশ্য আরো অনেক রকম ভাগ আছে সাবমেরিনের।

ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন হল ডিজেলে চলে তবে ভাসমান অবস্হায় ডিজেলে চলে আর ডুবন্ত অবস্হায় ইলেকট্রিক মোটরে চলে, নীরবে।

নিউক্লিয়ার সাবমেরিন হল আনবিক শক্তি দ্বারা চালিত সাবমেরিন।

আমেরিকার সবচাইতে বড় সাবমেরিন ইউএসএস মিশিগান

সাবমেরিনের কিছু অংশ আর তাদের কাজ কাম জেনে নিই।



ছবিতে মোটামুটি পরিষ্কার কোন অংশ কি নাম তো দেয়াই আছে। দুএকটা কাজের কথা বলি:

কনিং টাওয়ার হল কন্ট্রোল করার জায়গা যেখান থেকে পুরো সাবমেরিনকে নিয়ন্ত্রন করা হয়।

সাবমেরিনের ভিতরের দৃশ্য

টর্পেডো রুম হল যেখানে টর্পেডোগুলো থাকে আর সেখান থেকেই শত্রুর দিকে ফায়ার করা হয়।

প্রেশার হাল
বাইরের পুরো খােলটা হল প্রেশার হাল যা বাইরেপানির চাপকে আটকায়। ৬০০ মিটার পানির গভীরে সাধারণ উপরের চাইতে চাপ প্রায় ৬০ গুন বেশী, প্রায় ৯০০ পিএসআই! ভয়ংকর ব্যাপার! খোল দুভাগে ভাগ করা, বাইরেরটা ওয়াটার প্রুফ আর ভেতরেরটা ইস্পাত বা টাইটেনায়াম দ্বার তৈরী। কোন কোন সাবমেরিনে সবার বাইরে রাবারের আচ্ছাদন থাকে শব্দ কমাবার জন্য।

চলে কিভাবে?
ইন্জিন দ্বারা। ইন্জিন ডিজেল হলে সাধারণ গাড়ির মতই চলে আর নিউক্লিয়ার হলে নিউক্লিয়ার ফুয়েল পুড়ে শক্তি উৎপন্ন হয়ে তার দ্বারা ইন্জিন চলে আর সেই ইন্জিন প্রপেলার ঘোরায় আর প্রপেলার সাবমেরিনকে আগে বাড়ায়, জাহাজের মতই।

সাবমেরিন কিভাবে ভাসে আর ডোবে? বালাস্ট ট্যাংকের সাহায্যে।

সাবমেরিনে কতগুলে ফাকা চেম্বার আছে ছবিতে দেখুন সেগুলোকে বলে বালাস্ট ট্যাংক, সেগুলো পানি দিয়ে ভরা যায় ইচ্ছামত। যখন ভাসতে হবে তখন বালাস্ট ট্যাংক খালি করে বাতাস পরিমান মত ভরে ভাসতে পারে আর যখন ডুবতে হবে তখন চেম্বার গুলো পানি দিয়ে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ভাবে ভরে ইচ্ছামত গভীরতায় ডুবে যায়। এছাড়াও আছে এয়ার চেম্বার যেগলো শুধুই বাতাস দিয়ে সাবমেরিনের চলাচল নিয়ন্ত্রন করা হয়।


দুপাশে ছোট ডানা আর প্রপেলারের সাহায্যে ডোবার বা সামনে পেছনে চলার এঙ্গেল ঠিক করা বা এডজাস্ট করা হয়।


ডিজেল ইলেকট্রিকে্ সাবমেরিনের সঙ্গে আনবিক সাবমেরিনের সুবিধাটা কোথায়? আছে অনেক সুবিধা। ডিজেলে ইন্জিন চলতে ডিজেলের সাথে বাতাস লাগে যা পানির নীচে পাওয়া কঠিন, তাই তাকে প্রায়ই উপরে উঠে আসতে হয় বা বাতাস উৎপন্ন করতে হয় যা ঝামেলা পুর্ণ।

কিন্তু আনবিক সাবমেরিনে বাতাস লাগেনা, নিউক্লিয়ার ফুয়েল বাতাস ছাড়াই তাপ উৎপন্ন করে ইন্জিন চালায়। তাছাড়া আনবিক সাবমেরিন শব্দ করেনা ডিজেল ইন্জিন শব্দ করে যা যুদ্ধের সময় দরকারী।

আবার ডিজেল সাব এ তেল ভরতে হয় সেটাও ঝামেলার আর নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু আনবিক সাবমেরিন রিফুয়েলিং ছাড়াই বহু বহু দিন চলতে পারে, অবশ্য খাবার নেয়ার জন্যে তাকে অনেক সময়ই উপরে আসতে হবে! আধুনিক সাবমেরিন কোন ফুয়েল না নিয়ে এই ধরুন ২৫ বছর একটানা চলতে পারে, যদি খাবার না খেতে হয়!

আধুনিক সাবমেরিনের চলাচল বা টর্পেডোনিক্ষপ সবই কম্পিউটার দ্বারা নিখুঁত ভাবে স্‌পন্ন করা হয়।

সাবমেরিনের ভিতরে টর্পেডো। এগুলো দিয়ে দুরে সমুদ্রের জাহাজ ধ্বংশ করা হয়


ডুবন্ত অবস্হায় ক্রুদের বাঁচার জন্য অক্সিজেন দরকার হয় আর সেই অক্সিজেন সাবমেরিন নিজেই উৎপাদন করে বা সিলিন্ডার ব্যাবহার করে।


নিউক্লিয়ার সাব এর দাম ম্যালা তাই সব দেশ এটা কিনতে বা ব্যাবহার করতে পারেনা।

১৯৫১ সালে আমেরিকা প্রথম নিউক্লিয়ার সাব ব্যাবহার শুরু করে সেটার নাম ছিল নটিলাস যেটা জুলে ভার্নের 'টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আনডার দি সি' কাহিনী থেকে নেয়া!


পৃথিবীর প্রথম নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ইউএসএস নটিলাস

নটিলাস ছিল ৩২০ ফুট লম্বা আর দাম পড়েছিল সাড়ে পাঁচ কোটি ডলার।

রাশিয়া তাদের প্রথম নিউক্লিয়ার সাবমেরিন লন্চ করে ১৯৫৮ সালে।


পৃথিবীর সবচাইতে বড় সাবমেরিন রাশিয়ার টাইফুন ক্লাশ সাবমেরিন।


১৯৬০ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত সময়ে রাশিয়া মোট ২৪৫ খানা আনবিক সাব বানিয়ে ফেলে যা বাকি দুনিয়ার সব দেশের সাবমেরিনের চাইতে বেশী।

সাধে কি আর পুতীনকে সবাই ডরায়!

বর্তমানে আমেরিকা রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চিন ও ভারত এই ছ'টা দেশের নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আছে।

অন্যান্য দেশ যেমন আর্জেন্টিনা ব্রাজিল শিগগিরই তাদের নৌবহরে সাবমেরিন যোগ করবে।





আমেরিকার সবচাইতে বড় সাবমেরিন ইউএসএস মিশিগান



মিশিগান সাবমেরিনের কিছু ডাটা:

টাইপ: এসএসবিএন/এসএসজিএন
ডিসপ্লেসমেন্ট অর্থাৎ পানি সরায় (ওজন) : ১৬,৭৬৪ টন
লম্বা: ৫৬০ ফুট

ইন্জিন: দুখানা টারবাইন মোট ৬০,০০০ হর্স পাওয়ার, একটা ৩২৫ হর্স পাওয়ারের মোটর।
প্রপেলার: ৭ ব্লেডের স্ক্রু টাইপ প্রপেলার

স্পীড: ভাসমান অবস্হায়- প্রতি ঘন্টায় ২২ কিলোমিটার আর ডুবন্ত অবস্হায় ২৯ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়।
রেন্জ মানে একবারে কতদুর যেতে পারে: কোন সীমা নেই, খাবারের কমতি না হলে চিরকাল।
৮০০ ফুট নীচ দিয়ে চলতে পারে।
ক্রু: ১৪০ জন

অস্ত্র: ৪ খানা ২১ ইন্চি ডায়ার টর্পেডো টিউব যা দিয়ে জাহাজ ধ্বংশ করার টর্পেডো ছোড়া হয়।
বানিয়েছে জেনারেল ডাইনামিকস ইলেকট্রিক বোট।

পৃথিবীর প্রথম নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ইউএসএস নটিলাস


রাশিয়ান সাবমেরিন।

রাশিয়ান সাবমেরিন।

সাবমেরিনের ভিতরের দৃশ্য

সাবমেরিনের ভিাতরের দৃশ্য





সাবমেরিন থেকে মিসাইল লন্চ করা হচ্ছে






সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১২
৩৫টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×