শনিবার ভোর ৫টা। দরজায় একজনের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল। ভাই নামাজে যাবেন না-নামাজের সময় হয়ে গেছে, ভাই উঠুন। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুললাম। হ্যাঁ আসছি।
নামাজ শেষে মনে হল শরীরে ঘুমের অভাব তাই আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। এক বন্ধুর ফোনে ঘুম ভাঙলো। হ্যালো বলে সালাম দিতেই-শুভ নববর্ষ। আমিও শুভ নববর্ষ বলে বললাম "আমার নববর্ষ এখনো শুরু হয়নি"। কেন............? মানে আমি এখনো ঘুমিয়ে ছিলাম। অনেকটা বিদ্রুপ করে বললেন, "বছরের প্রথম দিনেও এই বেলায় ঘুম"। বললাম শরীর ভালো লাগছিলনা। তাই নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
একটু পর হাত-মুখ ধুয়ে বাইরে বের হতেই মনে হলো আজ সকালটা একটু বেশি উজ্জ্বল। বাইরে একটা উৎসব মুখর পরিবেশ। ভাবলাম আজ কোথাও ঘুরতে যাবো। কয়েকজন একসাথে হলাম। নাশতা সেরে কারো এ-কাজ, কারো ও-কাজ করতে করতে আর বের হওয়া হলোনা। তখন বেলা অনেক হয়ে গেছে। ঠিক করলাম বিকেল বেলা।
বিকেলে বাইরে বের হতেই যা খেয়াল করলাম, আজ মানুষের আনাগোনা অত্যন্ত বেশি। বিশেষত শিশু এবং মেয়েদের আধিক্য। দেখলাম একদল শিশু হাতে বেলুন, খেলনা নিয়ে আসছে। একজনকে কাছে ডাকলাম। বলালাম, তোমার নাম কী? সাইফুল। কোথায় গিয়েছিলে? বৈশাখী ম্যালায় (মেলায়)। তোমার বাড়ীর আর কে কে গেছে? সবাই।
আচ্ছা তুমি আজ সকালে পান্তা-ইলিশ খেয়েছ?
নাহ্।
ঠিক আছে, যাও।
প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বটা আজ ছোট হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় টিভির সামনে সবতেই যা দেখলাম তা সবার জানা। ভাবনার একটা বিষয় হল, "গ্রামে এবং শহরে বৈশাখ আয়োজনের বিস্তর পার্থক্য"। একসময় দেখতাম বৈশাখ মানে নতুন বছরে হালখাতার উৎসব। আর এখন, ভূত-প্রেতের আলপনা। শহুরে ধনীদের নতুন আবিস্কার পান্তা-ইলিশের বিলাস যাপন। ১ লা বৈশাখ বাঙালি সাংস্কৃতির প্রধান ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের পরিবর্তনে আমরা বৈশাখের রীতি পাল্টে ফেলেছি। পুরো বছর যে বা যারা বাঙালি সাংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের কাছেও যায়না বৈশাখ নিয়ে তারা একটু বেশি মাতামাতি করে। পান্তা-ইলিশের কাব্য এদেরই আবিস্কার। বৈশাখ নিয়ে নোংরামি এবং বেশি লম্ফ-ঝম্ফ করে যেসব মুসলমান তাদের বলি, "বাঙালি তাই বৈশাখকে উৎসবে পরিণত করি কিন্তু মুসলমান তাই দিনে পাঁচ বার মসজিদে যায় কি"? পান্তা-ইলিশের মত নতুন ধারনা বৈশাখে যোগ হযেছে। কিন্তু মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বাড়েনি? ১লা বৈশাখের জন্য বাড়তি কোনো আয়োজন ছিলনা আমার। সকালে ছিলনা পান্তা-ইলিশ। ছিলনা বুজে ভূত-প্রেতের আলপনা। প্রতিদিনের মত শুরু এবং সেভাবেই শেষ। তবুও কোনো অপূর্ণতা ছিলনা আমার।
বৈশাখ এসেছে, আসবে। একদিন বাঙালি হয়ে চলি যারা এই অনাগত দিনগুলি নিজের বাঙালিত্ব কোথার রাখবো?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৪